ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনার প্রাথমিক চিকিৎসায় পল্লী চিকিৎসক

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ যে কোনো মহামারি যুদ্ধের মতোই। একে ‘গণযুদ্ধ’ও বলা যায়। কারণ দেশের সব মানুষের এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গণযুদ্ধে কামান-বন্দুকের চেয়ে লাঠিসোটা কাজে লাগে বেশি। একইভাবে বর্তমানে করোনার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পল্লী চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।

কোনো রোগী জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হলেই তিনি ভাবতে শুরু করেন তার করোনা হয়েছে। ফলে কেউ কেউ আতঙ্কে অর্ধমৃত হয়ে যাচ্ছেন; অযথা ক্লিনিক-হাসপাতালে ছোটাছুটি শুরু করছেন। অথচ স্থানীয় পর্যায়ে তারা যদি প্রথমে পল্লী চিকিৎসকদের কাছে যান, তাহলে সঠিক পরামর্শ পেতে পারেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসাও নিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে এমনটি ঘটছেও। এ ক্ষেত্রে ঈশ্বরদী উপজেলা একটি উদাহরণ হতে পারে। এ উপজেলায় ইপিজেড ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থাকায় বিদেশি নাগরিকসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের চলাচল রয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই এ উপজেলায় সংক্রমণের হার তুলনামূলক বেশি। প্রায় সব করোনা রোগীই হচ্ছেন হাসপাতাল অভিমুখী (উপজেলা সদর হাসপাতাল)।

দানশীল ব্যক্তিরা ঈশ্বরদী হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেছেন। তবে সমন্বয়হীনতার অভাবে চিকিৎসকরা সেগুলো ব্যবহারে হিমশিম খাচ্ছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করার জন্য হাসপাতালে নগদ অর্থের বরাদ্দ নেই। এ কারণে কেউ কেউ নিজের টাকায় সিলিন্ডার রিফিল করছেন। ডাক্তাররা ঝামেলা এড়ানোর জন্য কোনো কোনো রোগীকে রাজশাহী বা ঢাকায় রেফার্ড করছেন।

এ উপজেলায় তিন শতাধিক রেজিস্টার্ড পল্লী চিকিৎসক রয়েছেন (সারা দেশে লক্ষাধিক)। রোগীদের কেউ কেউ রাজশাহী বা ঢাকায় না গিয়ে পল্লী চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। সে জন্য জরুরি ভিত্তিতে (সাময়িকভাবে হলেও) তাদের নিযুক্ত করা উচিত। পাশের দেশসহ কয়েকটি দেশ অস্থায়ী চিকিৎসক কিংবা টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়ে ভালো ফল পেয়েছে। পল্লী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা প্রায়ই বলে থাকেন, ‘আপনারা ৮১ হাজার গ্রামে একটি করে রোগী দেখলে প্রতিদিন ৮১ হাজার রোগী দেখছেন। আপনারাই জনগণের সবচেয়ে কাছের ডাক্তার।’

সরকার যদি বিষয়টি নীতিগতভাবে গ্রহণ করে, তাহলে স্থানীয় প্রশাসন তাদের সুন্দর একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে। উল্লেখ্য, উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে প্রাইমারি কালচার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (পিসিডিসি) উদ্যোগে ২৫ জুলাই রাতে একটি জুম মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ নুরুজ্জামান বিশ্বাস, ঈশ্বরদী উপজেলার ইউএনও পিএম ইমরুল কায়েস, পল্লী চিকিৎসকগণ এবং এলাকার সুশীল সমাজের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করবেন বলে জানান। একজন শিল্পপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অন্যান্য আর্থিক সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন। এখন প্রয়োজন এ ধরনের উদ্যোগ গোটা দেশে যেন কার্যকর হয়, সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মোশাররফ হোসেন মুসা : গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারবিষয়ক গবেষক

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

করোনার প্রাথমিক চিকিৎসায় পল্লী চিকিৎসক

আপডেট টাইম : ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ অগাস্ট ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ যে কোনো মহামারি যুদ্ধের মতোই। একে ‘গণযুদ্ধ’ও বলা যায়। কারণ দেশের সব মানুষের এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গণযুদ্ধে কামান-বন্দুকের চেয়ে লাঠিসোটা কাজে লাগে বেশি। একইভাবে বর্তমানে করোনার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পল্লী চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।

কোনো রোগী জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হলেই তিনি ভাবতে শুরু করেন তার করোনা হয়েছে। ফলে কেউ কেউ আতঙ্কে অর্ধমৃত হয়ে যাচ্ছেন; অযথা ক্লিনিক-হাসপাতালে ছোটাছুটি শুরু করছেন। অথচ স্থানীয় পর্যায়ে তারা যদি প্রথমে পল্লী চিকিৎসকদের কাছে যান, তাহলে সঠিক পরামর্শ পেতে পারেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসাও নিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে এমনটি ঘটছেও। এ ক্ষেত্রে ঈশ্বরদী উপজেলা একটি উদাহরণ হতে পারে। এ উপজেলায় ইপিজেড ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থাকায় বিদেশি নাগরিকসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের চলাচল রয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই এ উপজেলায় সংক্রমণের হার তুলনামূলক বেশি। প্রায় সব করোনা রোগীই হচ্ছেন হাসপাতাল অভিমুখী (উপজেলা সদর হাসপাতাল)।

দানশীল ব্যক্তিরা ঈশ্বরদী হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেছেন। তবে সমন্বয়হীনতার অভাবে চিকিৎসকরা সেগুলো ব্যবহারে হিমশিম খাচ্ছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করার জন্য হাসপাতালে নগদ অর্থের বরাদ্দ নেই। এ কারণে কেউ কেউ নিজের টাকায় সিলিন্ডার রিফিল করছেন। ডাক্তাররা ঝামেলা এড়ানোর জন্য কোনো কোনো রোগীকে রাজশাহী বা ঢাকায় রেফার্ড করছেন।

এ উপজেলায় তিন শতাধিক রেজিস্টার্ড পল্লী চিকিৎসক রয়েছেন (সারা দেশে লক্ষাধিক)। রোগীদের কেউ কেউ রাজশাহী বা ঢাকায় না গিয়ে পল্লী চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। সে জন্য জরুরি ভিত্তিতে (সাময়িকভাবে হলেও) তাদের নিযুক্ত করা উচিত। পাশের দেশসহ কয়েকটি দেশ অস্থায়ী চিকিৎসক কিংবা টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়ে ভালো ফল পেয়েছে। পল্লী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা প্রায়ই বলে থাকেন, ‘আপনারা ৮১ হাজার গ্রামে একটি করে রোগী দেখলে প্রতিদিন ৮১ হাজার রোগী দেখছেন। আপনারাই জনগণের সবচেয়ে কাছের ডাক্তার।’

সরকার যদি বিষয়টি নীতিগতভাবে গ্রহণ করে, তাহলে স্থানীয় প্রশাসন তাদের সুন্দর একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে। উল্লেখ্য, উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে প্রাইমারি কালচার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (পিসিডিসি) উদ্যোগে ২৫ জুলাই রাতে একটি জুম মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ নুরুজ্জামান বিশ্বাস, ঈশ্বরদী উপজেলার ইউএনও পিএম ইমরুল কায়েস, পল্লী চিকিৎসকগণ এবং এলাকার সুশীল সমাজের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করবেন বলে জানান। একজন শিল্পপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অন্যান্য আর্থিক সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন। এখন প্রয়োজন এ ধরনের উদ্যোগ গোটা দেশে যেন কার্যকর হয়, সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মোশাররফ হোসেন মুসা : গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারবিষয়ক গবেষক