হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনা মহামারির মাঝেই দেখা দিয়েছে ডেঙ্গির প্রকোপ। গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি। হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গি রোগীর চাপও বাড়ছে। করোনা ও ডেঙ্গিজ্বরের উপসর্গ বা লক্ষণের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য থাকলেও রয়েছে কিছু ভিন্নতা। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গিজ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ডেঙ্গিজ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড় দিলে ওই ব্যক্তি সাধারণত চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গিজ্বরে আক্রান্ত হয়। আবার একই ব্যক্তি করোনা ও ডেঙ্গি উভয় ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
করোনা ও ডেঙ্গি উভয় রোগীর মধ্যেই সাধারণত যে উপসর্গগুলো দেখা দেয় তা হলো- জ্বর, গায়ে ব্যথা, গলাব্যথা, ক্লান্তিভাব, সর্দি, স্বাদ না থাকা। তবে ডেঙ্গি রোগীর ক্ষেত্রে জ্বরের তীব্রতা অনেক বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা থাকতে পারে ডেঙ্গিজ্বরে। অন্যদিকে করোনার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, নাকে ঘ্রাণ না পাওয়া এবং কারও কারও পাতলা পায়খানা-এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে। সাধারণত এ উপসর্গগুলো ডেঙ্গিজ্বরে পাওয়া যায় না। ডেঙ্গিজ্বর হওয়ার তিন থেকে চার দিনের মাথায় শরীরজুড়ে লালচে দানা বা লাল অ্যালার্জির মতো র্যাশ হতে পারে, এর সঙ্গে বমি বমি ভাব ও ক্ষুধামন্দা থাকতে পারে এবং রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যেতে পারে। তবে করোনাভাইরাসের কিছু কিছু ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গের ক্ষেত্রেও র্যাশ দেখা দিচ্ছে। ডেঙ্গিজ্বরের জটিল অবস্থা হলো ডেঙ্গি হেমোরেজিক জ্বর। ডেঙ্গিজ্বরের স্বাভাবিক উপসর্গের পাশাপাশি ডেঙ্গি হেমোরেজিক জ্বরে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া, কালো ধরনের পায়খানা হওয়া, বুকে ও পেটে পানি আসা, জন্ডিস ও কিডনি ফেইলিওরের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোম হলো ডেঙ্গিজ্বরের ভয়াবহ রূপ এবং তা হতে পারে রোগীর মৃত্যুর অন্যতম কারণ। হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া, শরীরের পাত-পা ও অন্যান্য অংশ ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, পালস অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হওয়া, এমনকি অনেক সময় হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটতে পারে ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোমে। সেক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোর দিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে। উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে করোনা টেস্ট ও ডেঙ্গিজ্বরের পরীক্ষা উভয়ই করতে হবে। পরীক্ষায় যে কোনো একটি শনাক্ত হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে সব ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। করোনা ও ডেঙ্গি জটিল আকার ধারণ করলে হাসপাতালে ভর্তিসহ আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হতে পারে। লক্ষণ বা উপসর্গগুলো দেখা দিলে সাধারণ ফ্লু ভেবে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বসে থাকা যাবে না। জ্বর শুরু হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, প্রয়োজনে আইসোলেশনে থাকতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। পাল্স অক্সিমিটারের সাহায্যে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডেঙ্গিজ্বরে যারা আগেও আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে রোগটি হলে মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ডেঙ্গিতে জ্বর কমে যাওয়ার পরপরই ক্রিটিক্যাল ফেইজ শুরু হয়। সেক্ষেত্রে জ্বর কমে গেলেই সবকিছুই ঠিক হয়ে গেছে এটা মনে করা যাবে না। রক্তচাপ মনিটর করা, বেশি বেশি পানি ও প্রোটিনজাতীয় খাবার খাওয়া, মূত্র কমে যাচ্ছে কিনা খেয়াল রাখা, রক্তপাতের কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ আছে কিনা সে বিষয়গুলোও লক্ষ রাখা প্রয়োজন।
ডা. সামিউল আউয়াল সাক্ষর : আবাসিক মেডিকেল অফিসার, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা