বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ চিত্রনায়িকা পরীমনিকে রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে হাইকোর্টের মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। হাইকোর্ট বলেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা কী তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রিমান্ডের আবেদন করল, আর বিচারিক আদালত তা মঞ্জুর করলেন-এগুলো পরীক্ষা করা দরকার।
হাইকোর্ট আরও বলেছেন, ‘এগুলো তো কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না, ঘটতে পারে না।’ উল্লেখ্য, পরীমনিকে তিন দফায় সাত দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়।
রিমান্ডের এ আদেশ অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা চেয়ে গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্টে আবেদন করে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র। এ আবেদনের ওপর শুনানিকালে উপরোক্ত মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
‘রিমান্ড’ শব্দটির অর্থ আসামিকে পুলিশি হেফাজতে পুনঃপ্রেরণ, যা আইনি ভাষায় ‘পুলিশ হেফাজতে আটক’ রাখা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বস্তুত এটি ফৌজদারি মামলার আসামির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর দুটি ধারায় ‘রিমান্ড’ শব্দের কথা উল্লেখ থাকলেও কার্যবিধির কোথাও রিমান্ড শব্দটির সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে রিমান্ডের ব্যাপারে হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
এসব নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-কারও রিমান্ডের প্রয়োজন হলে তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের কাচনির্মিত বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন।
কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া না গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে সর্বোচ্চ তিন দিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হবে।
পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে, ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।
পুলিশ হেফাজতে বা কারাগারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে হবে। পুলিশ বা কারা হেফাজতে কেউ মারা গেলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে তা তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত করা হবে।
ময়নাতদন্তে বা তদন্তে যদি মনে হয়, ওই ব্যক্তি কারা বা পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট মৃত ব্যক্তির আÍীয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তা তদন্তের নির্দেশ দেবেন।
অভিযোগ আছে, রিমান্ডে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা খুব একটা মেনে চলা হয় না। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগ হলো-বিচারিক আদালত কর্তৃক অপ্রয়োজনে রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করা। হাইকোর্টের মন্তব্যে এ বিষয়টির ওপরই ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান।
আমরা মনে করি, রিমান্ডের যেন কোনো ধরনের অপব্যবহার না হয়, সে ব্যাপারে প্রতিটি বিচারিক আদালত এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের সজাগ থাকা উচিত। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে চলা বাঞ্ছনীয়।