উৎপাদন কম-বেশি যেমনই হোক, দেশের কৃষকদের প্রধান সমস্যা মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য। এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, সমাধানে কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশের কৃষকরা এখনো মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে জিম্মি। একদিকে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্রেতাদের উচ্চমূল্যে কৃষিপণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে। বস্তুত মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যে কৃষিপণ্যের উৎপাদক-ক্রেতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ সমস্যা আমলে নিয়ে কৃষি বিপণন নীতিমালা-২০২২ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আশা করা যায়, এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে কৃষক-ক্রেতা উভয়েই উপকৃত হবে। এ খসড়া নীতিমালায় কৃষিপণ্যের বিপণন ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের কথা বলা হয়েছে। কৃষিকে লাভজনক পেশায় রূপ দেওয়া, এ খাতে উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ভোক্তাস্বার্থ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব প্রদানের বিষয়টিও প্রশংসার দাবি রাখে।
এ বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে-আধুনিক বাজারকাঠামো, উন্নতমানের সংরক্ষণাগার, প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রসহ অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব প্রদান করা হবে। এ ছাড়া পাবলিক প্রাইভেট পার্টনাশিপের মাধ্যমে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানিরও উদ্যোগ নেওয়া হবে। এসব প্রক্রিয়ার সঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ যুক্ত থাকবে। আশা করা যায়, নীতিমালাটি বাস্তবায়িত হলে নিরাপদ কৃষিপণ্য উৎপাদিত হবে; পাশাপাশি কৃষক-ব্যবসায়ী- ভোক্তা সবাই উপকৃত হবেন।
আধুনিক প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় গত একযুগেরও বেশি সময় হলো মানুষের কাছে বিভিন্ন তথ্যপ্রাপ্তি সহজ হয়েছে। এখন একজন কৃষক জানেন, তিনি যে দরে সবজি বিক্রি করছেন, ক্রেতা তার কয়েকগুণ বেশি দামে তা ক্রয় করছে। কিন্তু এসব তথ্য কৃষকের কাজে লাগছে না। কারণ, তারা মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে জিম্মি। একইভাবে ক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য থাকলে আলোচিত নীতিমালা বাস্তবায়িত হলেও কৃষক-ব্যবসায়ী-ভোক্তা কতটা উপকৃত হবেন, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। কাজেই এক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধ করতে হবে।
উৎপাদন ও আমদানি হ্রাস এবং খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ৪৫টি দেশকে খাদ্য ঘাটতির তালিকায় রেখেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা। অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, রোহিঙ্গাদের খাদ্যের জোগান এবং বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ তালিকায় বাংলাদেশের নাম যুক্ত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্যশস্যের উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান তা নিশ্চিত করতে হবে। করোনার আঘাত, মূল্যস্ফীতির চাপসহ বিভিন্ন কারণে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ খুব কষ্টে দিনযাপন করছে। মধ্যস্বত্বভোগী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে মানুষের কষ্ট দূর হবে না। কৃত্রিম সংকট তৈরি, অবৈধ মজুতদারি বা অন্য কোনো কৌশলে কৃষক-ব্যবসায়ী-ভোক্তার দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারকে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে।