ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গভবন : আসা-যাওয়ার উপাখ্যান

গভর্নমেন্ট হাউজ, গভর্নর হাউজ ও বঙ্গভবন-ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল, পাকিস্তানের শোষণ-দুঃশাসন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ-একটি ভবন তিন কালে তিন নামে পরিচিত। বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও আবাসস্থল এ ভবন প্রায় সোয়াশ বছরের চলার পথে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পর ২২ ডিসেম্বর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ ভবনে ওঠেন, ততদিনে যা নতুন নাম পেয়েছে বঙ্গভবন।

বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে ফেরেন। ১২ জানুয়ারি তিনি এ বঙ্গভবনেই রাষ্ট্রপতি হিসাবে আনুষ্ঠানিক শপথ নেন; ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শত্রুদেশে বন্দি থাকায় যা সম্ভব হয়নি।

ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে লিখেছেন-‘বিরাজিত পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত ও বলবৎ না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর যুগপৎ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা বাঞ্ছনীয় বলে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এ মত প্রত্যাখ্যান করে বলেন-‘সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।’ (পৃষ্ঠা ১২৩)

প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দেন এবং বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে মন্ত্রিসভা নতুন রাষ্ট্রপতি হিসাবে নিয়োগ দেয়। এরপর রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেন এবং তিনি ও মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। এভাবেই গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হয়েছিল।

ত্রিশ লাখ নারী-পুরুষ-শিশুর আত্মদানে অর্জিত বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ বিষয়ে ১৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছিল-‘The ceremonies today took place in the ornate Bengal House, the former residence of the Pakistani Governor of East Pakistan. The high-ceilinged marble building was damaged by Indian rockets during the war here last month, and there were holes in the wall above the dais where Sheik Mujib took his oath of office.’

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি বঙ্গবন্ধু এবং তার দল আওয়ামী লীগের অঙ্গীকারের কারণে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের যাত্রালগ্নে অনুপম আয়োজন সম্ভব হয়েছিল। আমরা স্মরণ করতে পারি ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিব নগরের আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের ঘটনা। বাংলাদেশ তখন বধ্যভূমি। এর মধ্যেই শপথ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান, দেশি-বিদেশি বিপুলসংখ্যক আমন্ত্রিত অতিথি ও গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতি-আধুনিক রাষ্ট্রে শপথ গ্রহণের মতোই সব ব্যবস্থা সুসম্পন্ন করা হয়েছিল।

এমন দৃঢ় ভিত নিয়ে যে রাষ্ট্রের যাত্রা, গণতান্ত্রিক চর্চায় যার নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত, সেই রাষ্ট্রে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসাবে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পর আবদুল হামিদকে ফুলেল সংবর্ধনা-শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় জানানোর ঘটনা বিস্ময় জাগায় না। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই এ বঙ্গভবনেই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল আস্থার নিদর্শন রেখে বিচারপতি লতিফুর রহমানের হাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। বাংলাদেশে সংবিধানসম্মত ও শান্তিপূর্ণ পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের অনন্য নজির তিনি স্থাপন করেন। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক অঙ্গীকার পালনে বিচারপতি লতিফুর রহমান ব্যর্থ হয়েছিলেন। বাংলাদেশ নিপতিত হয়েছিল অন্ধকার যুগে। অনিয়ম ও শঠতার এ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোটের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের সহযোগী কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর প্রধান দুই নেতাকে।

এ সরকারের আমলেই বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রপতি হিসাবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেন। এর আগে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। উভয় সময়েই ক্ষমতায় ছিল বিএনপি, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে বঙ্গভবন থেকে বিদায় দেওয়ার ভাবনা তার মাথায় আসেনি, আসার কথাও নয়। গণতন্ত্রচর্চার মধ্য দিয়ে বিএনপি নামের দলটির প্রতিষ্ঠা হয়নি। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমদ বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত ব্যক্তি হিসাবে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান পদে বেছে নেন।

১৯৭৬ সালের নভেম্বরের শেষদিকে জিয়াউর রহমান বঙ্গভবনে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের কাছ থেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বিচারপতি সায়েমকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকেও পদত্যাগে বাধ্য করেন। আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের ‘বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি’ এবং খ্যাতিমান সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের ‘বাংলাদেশ : রক্তের ঋণ’ গ্রন্থে জিয়াউর রহমানের বঙ্গভবনের কর্তৃত্ব গ্রহণের ঘটনাবলির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। বিচারপতি সায়েম লিখেছেন, জিয়াউর রহমান সামরিক আইন বজায় রেখে এবং সেনাবাহিনী প্রধান, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদে থেকেই ১৯৭৮ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদে আসীন হওয়ার পর জিয়াউর রহমান একক ক্ষমতায় সংবিধান সংশোধন করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকেও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে সাধারণ নাগরিকের মতো অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া লিখেছেন, ১৯৭৪ সালে নতুন গণভবনে উঠে যাওয়ার প্রস্তাব এলে মহীয়সী নারী ফজিলাতুন নেসা মুজিব বলেছিলেন, সরকারি ভবনের আরাম-আয়েশে প্রতিপালিত হলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে অহমিকাবোধ ও উন্নাসিক ধ্যানধারণা সৃষ্টি হবে। (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু কথা ও বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ১৭৪)

ধানমন্ডির ভবন ছিল অনিরাপদ, বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরা এ সুযোগ গ্রহণ করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মাথা নত করেননি। তিনি ১৫ আগস্ট ঘাতকদের স্টেনগানের মুখে বলেছিলেন-‘আমি জীবন দিতে প্রস্তুত। তবে এর মধ্য দিয়ে তোমরা গণতন্ত্রকেও হত্যা করবে এবং মানবিকতা বিদায় নেবে।’ (ড. জিল্লুর রহমান খান, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মোহনী নেতৃত্ব ও স্বাধীনতা সংগ্রাম’, পৃষ্ঠা ২৬১)

জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থেকেও বঙ্গভবনে থাকেননি, ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বসবাস করেছেন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকেও বসবাস করেছেন ক্যান্টনমেন্টে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছেন সেনাবাহিনীর একটি অংশের হাতে নিহত হয়ে। এইচএম এরশাদ পদত্যাগ করেছিলেন ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। তাদের রাষ্ট্রপতি পদ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় গ্রহণের প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই ছিল না। এইচএম এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৭ মার্চ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের ক্ষমতাবলে বিচারপতি আ ফ ম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন, যাকে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর সরিয়ে দিয়ে নিজেই সে পদে অধিষ্ঠিত হন। খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় দফা প্রধানমন্ত্রীর আমলে বিএনপির অন্যতম শীর্ষনেতা ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করা হয়। কিন্তু ২১৯ দিন পর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ইচ্ছায় তাকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণ করা হয়।

বিএনপির নেতা অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ৬ বছর ১৫৯ দিন রাষ্ট্রপতি পদে থেকেও আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনা পাননি। ২০০৬ সালের অক্টোবরের শেষদিকে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করে নিজেকে একইসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন।

২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন ভাষা আন্দোলনের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান। মেয়াদপূর্তির আগেই মৃত্যু না হলে তিনি বঙ্গভবন থেকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বিদায় নিতেন, সেটি নিশ্চিত। মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এমন সংবর্ধনা পেয়েছেন। রাষ্ট্রপতি পদে থেকে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি বিদায় নেন। নতুন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।

জিল্লুর রহমান ও আবদুল হামিদ রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন, সবাই একবাক্যে তা স্বীকার করেন। জিয়াউর রহমান একক ক্ষমতায় জাতীয় সংসদ অনুমোদিত সংবিধান সংশোধন করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ওই দুজন নেতা এমন কোনো অন্যায়ের পথে চলেননি। ইনডেমনিটি আইন অনুমোদন প্রদান কিংবা দলের নেতাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করার জন্য সংবিধান সংশোধনের মতো অন্যায়ও তারা করেননি। এ দুজন রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বঙ্গভবনে গিয়েছেন নানা বিষয়ে পরামর্শ নিতে। দেশের বাইরে গেলে ফিরে এসেই রাষ্ট্রপতিকে আলোচনা ও চুক্তির বিষয় অবহিত করতেন। আবদুল হামিদের মেয়াদের শেষদিকে তিনি কিশোরগঞ্জের হাওড় এলাকায় তার বাসভবনে আতিথ্য গ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে সম্মান-মর্যাদার সঙ্গে বঙ্গভবন থেকে বিদায় জানানোর পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় উদ্যোগ ছিল, সন্দেহ নেই। প্রায় ১৫ বছর তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে। তিনি বারবার বলছেন, টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে অর্থনীতি ও সামাজিক খাতে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বিরাজ করছে। রাষ্ট্রপতির সম্মানিত পদ থেকে কাউকে হত্যা বা ক্যুয়ের মাধ্যমে বিদায় কাম্য হতে পারে না। সরকার পরিবর্তনও হতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে, জনগণের রায়ে। জনগণ যাকে বেছে নেবে, তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী। যেমনটি ঘটেছিল ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি। সেদিন সংবিধানসম্মত ও গণতান্ত্রিক পন্থায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠানের যে বীজ বপন প্রত্যক্ষ করেছিল বিশ্ব, তা ফুলে-ফলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল। ভবিষ্যতেও এমন আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকারের নেতৃত্বের বিদায় ও নতুন দায়িত্ব গ্রহণ দেখতে পাব, সেটাই প্রত্যাশা।

অজয় দাশগুপ্ত : একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বঙ্গভবন : আসা-যাওয়ার উপাখ্যান

আপডেট টাইম : ০৭:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ মে ২০২৩

গভর্নমেন্ট হাউজ, গভর্নর হাউজ ও বঙ্গভবন-ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল, পাকিস্তানের শোষণ-দুঃশাসন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ-একটি ভবন তিন কালে তিন নামে পরিচিত। বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও আবাসস্থল এ ভবন প্রায় সোয়াশ বছরের চলার পথে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পর ২২ ডিসেম্বর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ ভবনে ওঠেন, ততদিনে যা নতুন নাম পেয়েছে বঙ্গভবন।

বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে ফেরেন। ১২ জানুয়ারি তিনি এ বঙ্গভবনেই রাষ্ট্রপতি হিসাবে আনুষ্ঠানিক শপথ নেন; ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শত্রুদেশে বন্দি থাকায় যা সম্ভব হয়নি।

ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে লিখেছেন-‘বিরাজিত পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত ও বলবৎ না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর যুগপৎ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা বাঞ্ছনীয় বলে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এ মত প্রত্যাখ্যান করে বলেন-‘সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।’ (পৃষ্ঠা ১২৩)

প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দেন এবং বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে মন্ত্রিসভা নতুন রাষ্ট্রপতি হিসাবে নিয়োগ দেয়। এরপর রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেন এবং তিনি ও মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। এভাবেই গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হয়েছিল।

ত্রিশ লাখ নারী-পুরুষ-শিশুর আত্মদানে অর্জিত বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ বিষয়ে ১৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছিল-‘The ceremonies today took place in the ornate Bengal House, the former residence of the Pakistani Governor of East Pakistan. The high-ceilinged marble building was damaged by Indian rockets during the war here last month, and there were holes in the wall above the dais where Sheik Mujib took his oath of office.’

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি বঙ্গবন্ধু এবং তার দল আওয়ামী লীগের অঙ্গীকারের কারণে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের যাত্রালগ্নে অনুপম আয়োজন সম্ভব হয়েছিল। আমরা স্মরণ করতে পারি ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিব নগরের আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের ঘটনা। বাংলাদেশ তখন বধ্যভূমি। এর মধ্যেই শপথ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান, দেশি-বিদেশি বিপুলসংখ্যক আমন্ত্রিত অতিথি ও গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতি-আধুনিক রাষ্ট্রে শপথ গ্রহণের মতোই সব ব্যবস্থা সুসম্পন্ন করা হয়েছিল।

এমন দৃঢ় ভিত নিয়ে যে রাষ্ট্রের যাত্রা, গণতান্ত্রিক চর্চায় যার নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত, সেই রাষ্ট্রে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসাবে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পর আবদুল হামিদকে ফুলেল সংবর্ধনা-শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় জানানোর ঘটনা বিস্ময় জাগায় না। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই এ বঙ্গভবনেই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল আস্থার নিদর্শন রেখে বিচারপতি লতিফুর রহমানের হাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। বাংলাদেশে সংবিধানসম্মত ও শান্তিপূর্ণ পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের অনন্য নজির তিনি স্থাপন করেন। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক অঙ্গীকার পালনে বিচারপতি লতিফুর রহমান ব্যর্থ হয়েছিলেন। বাংলাদেশ নিপতিত হয়েছিল অন্ধকার যুগে। অনিয়ম ও শঠতার এ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোটের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের সহযোগী কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর প্রধান দুই নেতাকে।

এ সরকারের আমলেই বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রপতি হিসাবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেন। এর আগে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। উভয় সময়েই ক্ষমতায় ছিল বিএনপি, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে বঙ্গভবন থেকে বিদায় দেওয়ার ভাবনা তার মাথায় আসেনি, আসার কথাও নয়। গণতন্ত্রচর্চার মধ্য দিয়ে বিএনপি নামের দলটির প্রতিষ্ঠা হয়নি। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমদ বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত ব্যক্তি হিসাবে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান পদে বেছে নেন।

১৯৭৬ সালের নভেম্বরের শেষদিকে জিয়াউর রহমান বঙ্গভবনে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের কাছ থেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বিচারপতি সায়েমকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকেও পদত্যাগে বাধ্য করেন। আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের ‘বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি’ এবং খ্যাতিমান সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের ‘বাংলাদেশ : রক্তের ঋণ’ গ্রন্থে জিয়াউর রহমানের বঙ্গভবনের কর্তৃত্ব গ্রহণের ঘটনাবলির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। বিচারপতি সায়েম লিখেছেন, জিয়াউর রহমান সামরিক আইন বজায় রেখে এবং সেনাবাহিনী প্রধান, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদে থেকেই ১৯৭৮ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদে আসীন হওয়ার পর জিয়াউর রহমান একক ক্ষমতায় সংবিধান সংশোধন করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকেও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে সাধারণ নাগরিকের মতো অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া লিখেছেন, ১৯৭৪ সালে নতুন গণভবনে উঠে যাওয়ার প্রস্তাব এলে মহীয়সী নারী ফজিলাতুন নেসা মুজিব বলেছিলেন, সরকারি ভবনের আরাম-আয়েশে প্রতিপালিত হলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে অহমিকাবোধ ও উন্নাসিক ধ্যানধারণা সৃষ্টি হবে। (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু কথা ও বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ১৭৪)

ধানমন্ডির ভবন ছিল অনিরাপদ, বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরা এ সুযোগ গ্রহণ করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মাথা নত করেননি। তিনি ১৫ আগস্ট ঘাতকদের স্টেনগানের মুখে বলেছিলেন-‘আমি জীবন দিতে প্রস্তুত। তবে এর মধ্য দিয়ে তোমরা গণতন্ত্রকেও হত্যা করবে এবং মানবিকতা বিদায় নেবে।’ (ড. জিল্লুর রহমান খান, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মোহনী নেতৃত্ব ও স্বাধীনতা সংগ্রাম’, পৃষ্ঠা ২৬১)

জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থেকেও বঙ্গভবনে থাকেননি, ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বসবাস করেছেন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকেও বসবাস করেছেন ক্যান্টনমেন্টে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছেন সেনাবাহিনীর একটি অংশের হাতে নিহত হয়ে। এইচএম এরশাদ পদত্যাগ করেছিলেন ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। তাদের রাষ্ট্রপতি পদ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় গ্রহণের প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই ছিল না। এইচএম এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৭ মার্চ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের ক্ষমতাবলে বিচারপতি আ ফ ম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন, যাকে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর সরিয়ে দিয়ে নিজেই সে পদে অধিষ্ঠিত হন। খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় দফা প্রধানমন্ত্রীর আমলে বিএনপির অন্যতম শীর্ষনেতা ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করা হয়। কিন্তু ২১৯ দিন পর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ইচ্ছায় তাকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণ করা হয়।

বিএনপির নেতা অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ৬ বছর ১৫৯ দিন রাষ্ট্রপতি পদে থেকেও আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনা পাননি। ২০০৬ সালের অক্টোবরের শেষদিকে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করে নিজেকে একইসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন।

২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন ভাষা আন্দোলনের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান। মেয়াদপূর্তির আগেই মৃত্যু না হলে তিনি বঙ্গভবন থেকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বিদায় নিতেন, সেটি নিশ্চিত। মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এমন সংবর্ধনা পেয়েছেন। রাষ্ট্রপতি পদে থেকে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি বিদায় নেন। নতুন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।

জিল্লুর রহমান ও আবদুল হামিদ রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন, সবাই একবাক্যে তা স্বীকার করেন। জিয়াউর রহমান একক ক্ষমতায় জাতীয় সংসদ অনুমোদিত সংবিধান সংশোধন করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ওই দুজন নেতা এমন কোনো অন্যায়ের পথে চলেননি। ইনডেমনিটি আইন অনুমোদন প্রদান কিংবা দলের নেতাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করার জন্য সংবিধান সংশোধনের মতো অন্যায়ও তারা করেননি। এ দুজন রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বঙ্গভবনে গিয়েছেন নানা বিষয়ে পরামর্শ নিতে। দেশের বাইরে গেলে ফিরে এসেই রাষ্ট্রপতিকে আলোচনা ও চুক্তির বিষয় অবহিত করতেন। আবদুল হামিদের মেয়াদের শেষদিকে তিনি কিশোরগঞ্জের হাওড় এলাকায় তার বাসভবনে আতিথ্য গ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে সম্মান-মর্যাদার সঙ্গে বঙ্গভবন থেকে বিদায় জানানোর পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় উদ্যোগ ছিল, সন্দেহ নেই। প্রায় ১৫ বছর তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে। তিনি বারবার বলছেন, টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে অর্থনীতি ও সামাজিক খাতে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বিরাজ করছে। রাষ্ট্রপতির সম্মানিত পদ থেকে কাউকে হত্যা বা ক্যুয়ের মাধ্যমে বিদায় কাম্য হতে পারে না। সরকার পরিবর্তনও হতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে, জনগণের রায়ে। জনগণ যাকে বেছে নেবে, তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী। যেমনটি ঘটেছিল ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি। সেদিন সংবিধানসম্মত ও গণতান্ত্রিক পন্থায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠানের যে বীজ বপন প্রত্যক্ষ করেছিল বিশ্ব, তা ফুলে-ফলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল। ভবিষ্যতেও এমন আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকারের নেতৃত্বের বিদায় ও নতুন দায়িত্ব গ্রহণ দেখতে পাব, সেটাই প্রত্যাশা।

অজয় দাশগুপ্ত : একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক