ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তীব্র গ্যাস সংকটে শিল্প খাত দ্রুত নিরসন করতে হবে

গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে দেশজুড়ে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন। গ্যাস সংকটের কারণে অনেক শিল্প-কারখানার কাজ দিনে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এছাড়া বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশন, পেট্রোল পাম্প-সর্বত্রই একই অবস্থা। জানা যায়, রাজধানীর অনেক এলাকায় আবাসিক গ্রাহকরা সকাল ৭টার পর থেকে আর গ্যাস পান না। চুলায় আগুন না থাকায় অনেক এলাকায় গ্রাহকরা মধ্যরাতে সারছেন রান্নার কাজ। এ অবস্থায় অনেক গ্রাহক বাধ্য হয়ে তিতাসের পাশাপাশি সিলিন্ডার (এলপিজি) গ্যাস কিনতেও বাধ্য হচ্ছেন। আবার যারা গাড়িতে জ্বালানি হিসাবে সিএনজি ব্যবহার করেন, তারা দীর্ঘ লাইনে থেকে গ্যাস সংগ্রহ করছেন। কারণ, সিএনজি পাম্পেও গ্যাসের চাপ কম।

শিল্পমালিকরা বলছেন, একদিকে ডলার ক্রাইসিস, অন্যদিকে গ্যাসের এমন সংকট চলতে থাকলে এ সেক্টরে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। পেট্রোবাংলার তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ রয়েছে ২৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলাসহ জ্বালানি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের এপ্রিলের পর এবারই দেশে গ্যাসের সরবরাহ সর্বনিম্ন। অবশ্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্তমানে যে সংকট চলছে কিছুদিনের মধ্যেই তার সমাধান হবে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করা গ্যাস সরবরাহে দেশে দুটি রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) আছে। গত বছরের নভেম্বরে একটি ইউনিট সংস্কারের জন্য পাঠানো হয়। এ কারণে গ্যাসের সংকট বেড়েছে। এছাড়া ২০২৬ সালের মধ্যে দেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে আবাসিকে গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করে তিতাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শীতে সঞ্চালন লাইনে সমস্যার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যার সমাধান এ মাসের ১৯ তারিখের মধ্যেই হয়ে যাবে।

শীত মৌসুমে প্রতিবছরই দেশে গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। মূলত চাহিদানুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকাই এর মূল কারণ। মনে রাখা দরকার, দেশে ডলার আসার যে কয়টি ক্ষেত্র রয়েছে তার মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্য অন্যতম। রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা যদি গ্যাস সংকটে ভোগে, তাহলে উৎপাদন যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি ডলার আয়ের প্রবাহ কমে গেলে এর প্রভাবও দেশের অর্থনীতিতে পড়বে। আবার গ্যাসের অভাবে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারে ব্যয় বেড়ে গেলে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেড়ে যাবে, যার প্রভাব অভ্যন্তরীণ তো বটেই, আন্তর্জাতিক বাজারেও পড়বে। চাহিদামাফিক উৎপাদিত পণ্য সময়মতো সরবরাহ করতে না পারলে কিংবা পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিতে, এমনকি বাতিলও করতে পারেন, যা অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না। এ অবস্থায় গ্যাস সংকট কাটাতে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানির পরিমাণও প্রয়োজনমাফিক বাড়াতে হবে। তা না হলে নিকট ভবিষ্যতে এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না। সরকার দ্রুত গ্যাস সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

তীব্র গ্যাস সংকটে শিল্প খাত দ্রুত নিরসন করতে হবে

আপডেট টাইম : ০১:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪

গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে দেশজুড়ে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন। গ্যাস সংকটের কারণে অনেক শিল্প-কারখানার কাজ দিনে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এছাড়া বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশন, পেট্রোল পাম্প-সর্বত্রই একই অবস্থা। জানা যায়, রাজধানীর অনেক এলাকায় আবাসিক গ্রাহকরা সকাল ৭টার পর থেকে আর গ্যাস পান না। চুলায় আগুন না থাকায় অনেক এলাকায় গ্রাহকরা মধ্যরাতে সারছেন রান্নার কাজ। এ অবস্থায় অনেক গ্রাহক বাধ্য হয়ে তিতাসের পাশাপাশি সিলিন্ডার (এলপিজি) গ্যাস কিনতেও বাধ্য হচ্ছেন। আবার যারা গাড়িতে জ্বালানি হিসাবে সিএনজি ব্যবহার করেন, তারা দীর্ঘ লাইনে থেকে গ্যাস সংগ্রহ করছেন। কারণ, সিএনজি পাম্পেও গ্যাসের চাপ কম।

শিল্পমালিকরা বলছেন, একদিকে ডলার ক্রাইসিস, অন্যদিকে গ্যাসের এমন সংকট চলতে থাকলে এ সেক্টরে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। পেট্রোবাংলার তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ রয়েছে ২৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলাসহ জ্বালানি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের এপ্রিলের পর এবারই দেশে গ্যাসের সরবরাহ সর্বনিম্ন। অবশ্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্তমানে যে সংকট চলছে কিছুদিনের মধ্যেই তার সমাধান হবে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করা গ্যাস সরবরাহে দেশে দুটি রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) আছে। গত বছরের নভেম্বরে একটি ইউনিট সংস্কারের জন্য পাঠানো হয়। এ কারণে গ্যাসের সংকট বেড়েছে। এছাড়া ২০২৬ সালের মধ্যে দেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে আবাসিকে গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করে তিতাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শীতে সঞ্চালন লাইনে সমস্যার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যার সমাধান এ মাসের ১৯ তারিখের মধ্যেই হয়ে যাবে।

শীত মৌসুমে প্রতিবছরই দেশে গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। মূলত চাহিদানুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকাই এর মূল কারণ। মনে রাখা দরকার, দেশে ডলার আসার যে কয়টি ক্ষেত্র রয়েছে তার মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্য অন্যতম। রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা যদি গ্যাস সংকটে ভোগে, তাহলে উৎপাদন যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি ডলার আয়ের প্রবাহ কমে গেলে এর প্রভাবও দেশের অর্থনীতিতে পড়বে। আবার গ্যাসের অভাবে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারে ব্যয় বেড়ে গেলে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেড়ে যাবে, যার প্রভাব অভ্যন্তরীণ তো বটেই, আন্তর্জাতিক বাজারেও পড়বে। চাহিদামাফিক উৎপাদিত পণ্য সময়মতো সরবরাহ করতে না পারলে কিংবা পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিতে, এমনকি বাতিলও করতে পারেন, যা অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না। এ অবস্থায় গ্যাস সংকট কাটাতে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানির পরিমাণও প্রয়োজনমাফিক বাড়াতে হবে। তা না হলে নিকট ভবিষ্যতে এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না। সরকার দ্রুত গ্যাস সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।