ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইতিহাস ভুলে থাকা দল আওয়ামী লীগ : অ্যাড আহমেদ আলী

সুদীর্ঘ রাজনীতি এবং আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তানি সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এ দলটি। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে দলটি নেতৃত্ব দেয়। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সেই দলটি আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। আজকের এই দিনে এসে যদি মূল্যায়ন করি তাহলে বলতে হবে, নিজের ইতিহাস ভুলে থাকা দল আওয়ামী লীগ। দল করেন, ক্ষমতার কেন্দ্রে আছেন এমন অনেক নেতাই আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা সাল এবং প্রতিষ্ঠাতাদের নাম জানেন না। তাদের কেউ প্রতিষ্ঠাতাদের স্মরণও করেন না। উপমহাদেশের তিনটি ঐতিহাসিক দল কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগ। কংগ্রেস ১৮৮৫ সালে ক্ষমতাসীনদের সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৬ সালে নবাববাড়িতে শাসকদের সহযোগিতায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীনদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে প্রতিষ্ঠিত হয়। কংগ্রেসের অর্জন, সমঝোতার মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা। মুসলিম লীগের অর্জন, গণভোটে পাকিস্তানের সৃষ্টি। আওয়ামী লীগের অর্জন সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এই তিনটি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আওয়ামী লীগ তার ইতিহাস সংরক্ষণ করেনি। আওয়ামী লীগ মূলত বৃহত্তর কুমিল্লা ও টাঙ্গাইল এলাকার নেতাদের প্রতিষ্ঠা করা দল। এ প্রজন্ম মওলানা ভাসানী, শামসুল হক ও আলী আহমেদ খানদের ভুলে গেছে। তাদের কেউ স্মরণ করেন না। আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করেছে, সংবিধান রচনা করেছে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের অনেকে আজ বেঁচে নেই, যারা বেঁচে আছেন তাদের খুঁজে বের করে সম্মান জানানো দরকার বলে মনে করি। সংবিধান রচনা কমিটিতে ৪৬৭ জন স্বাক্ষর দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বৃহত্তর কুমিল্লার ৪০ জন ছিলেন। ৪০ জনের মধ্যে আমি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমদাদুল বারী এখনো জীবিত। বর্তমান সরকারের কাছে প্রত্যাশা সংবিধান রচনা কমিটির লোকজনকেও সম্মান দেওয়া হোক। বিগত ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আপনার সঙ্গে কথা নেই, আপনি আওয়ামী লীগের ইতিহাস লিখছেন না। কিন্তু পরে সে কথা শেখ হাসিনা ভুলে গেছেন। একবার আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে স্মারকগ্রন্থ করার কথা ছিল। আমার লেখাও নেওয়া হয়েছিল। তবে সে স্মারকগ্রন্থ আর আলোর মুখ দেখেনি।

লেখক :  বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ইতিহাস ভুলে থাকা দল আওয়ামী লীগ : অ্যাড আহমেদ আলী

আপডেট টাইম : ০৭:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০১৬

সুদীর্ঘ রাজনীতি এবং আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তানি সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এ দলটি। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে দলটি নেতৃত্ব দেয়। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সেই দলটি আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। আজকের এই দিনে এসে যদি মূল্যায়ন করি তাহলে বলতে হবে, নিজের ইতিহাস ভুলে থাকা দল আওয়ামী লীগ। দল করেন, ক্ষমতার কেন্দ্রে আছেন এমন অনেক নেতাই আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা সাল এবং প্রতিষ্ঠাতাদের নাম জানেন না। তাদের কেউ প্রতিষ্ঠাতাদের স্মরণও করেন না। উপমহাদেশের তিনটি ঐতিহাসিক দল কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগ। কংগ্রেস ১৮৮৫ সালে ক্ষমতাসীনদের সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৬ সালে নবাববাড়িতে শাসকদের সহযোগিতায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীনদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে প্রতিষ্ঠিত হয়। কংগ্রেসের অর্জন, সমঝোতার মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা। মুসলিম লীগের অর্জন, গণভোটে পাকিস্তানের সৃষ্টি। আওয়ামী লীগের অর্জন সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এই তিনটি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আওয়ামী লীগ তার ইতিহাস সংরক্ষণ করেনি। আওয়ামী লীগ মূলত বৃহত্তর কুমিল্লা ও টাঙ্গাইল এলাকার নেতাদের প্রতিষ্ঠা করা দল। এ প্রজন্ম মওলানা ভাসানী, শামসুল হক ও আলী আহমেদ খানদের ভুলে গেছে। তাদের কেউ স্মরণ করেন না। আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করেছে, সংবিধান রচনা করেছে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের অনেকে আজ বেঁচে নেই, যারা বেঁচে আছেন তাদের খুঁজে বের করে সম্মান জানানো দরকার বলে মনে করি। সংবিধান রচনা কমিটিতে ৪৬৭ জন স্বাক্ষর দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বৃহত্তর কুমিল্লার ৪০ জন ছিলেন। ৪০ জনের মধ্যে আমি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমদাদুল বারী এখনো জীবিত। বর্তমান সরকারের কাছে প্রত্যাশা সংবিধান রচনা কমিটির লোকজনকেও সম্মান দেওয়া হোক। বিগত ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আপনার সঙ্গে কথা নেই, আপনি আওয়ামী লীগের ইতিহাস লিখছেন না। কিন্তু পরে সে কথা শেখ হাসিনা ভুলে গেছেন। একবার আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে স্মারকগ্রন্থ করার কথা ছিল। আমার লেখাও নেওয়া হয়েছিল। তবে সে স্মারকগ্রন্থ আর আলোর মুখ দেখেনি।

লেখক :  বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা