অপরদিকে মেসের পুরোনো ব্যাচেলর ভাড়াটিয়াদের বাসা ছাড়তে নোটিশ দিচ্ছেন মালিকরা। এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত কয়েকলাখ ব্যাচেলর ও মেসের বাসিন্দারা।
রাজধানীর একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল জোহাইফা। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে জানান, তিনিসহ ৪ জন ছাত্র ব্যাচেলর বাসাভাড়া নিয়ে ধানমণ্ডির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। সেখানে একটি স্কুল করার জন্য তাদের বাসা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দেন বাড়ির মালিক। গত এক মাস ধরে রাজধানীর ধানমণ্ডি, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর ও কল্যাণপুর এলাকায় চেষ্টা করেও বাসা ভাড়া নিতে পারেননি।
তবে কোনো কোনো বাড়িওয়ালা ভাড়া দিতে রাজি হলেও চার থেকে পাঁচ মাসের ভাড়া অগ্রিম এবং বাসা ভাড়া আগের তুলনায় দেড়-দুইগুণ দাবি করছেন বলে অভিযোগ করেন জোহাইফা।
একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন রবিউল ইসলাম। তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত। আগে যাত্রাবাড়ী ছিলেন। এখন শ্যামলী এলাকায় বদলি হয়েছেন। কিন্তু বাসা খুঁজতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে জানান, শ্যামলী ও কল্যাণপুর এলাকায় বাড়িওয়ালারা কোনোভাবেই ব্যাচেলর বাসাভাড়া দিতে রাজি হচ্ছেন না।
কল্যাণপুরের এক ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া খান আহম্মেদ শরীফ। তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত।
পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, অফিসে যাতায়াতের সুবিধার্থেই কল্যাণপুরে মেস বাসা ভাড়া করে থাকি। হঠাৎ মেস ছাড়ার নোটিশ দেওয়ায় বিপাকে পড়েছি। কয়েকটি বাসায় যোগাযোগ করলেও কেউ ব্যাচেলরদের মেস ভাড়া দিতে রাজি হচ্ছেন না।
ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া না দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেছেন কল্যাণপুর, শ্যামলী ও ধানমণ্ডির একাধিক বাড়িওয়ালা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা পরিবর্তন ডটকমকে জানান, পুলিশ ব্যাচেলর ভাড়াটিয়াদের বিষয়ে বেশ ডিস্টার্ব করে। বার বার এসে এটা সেটা জিজ্ঞাসা করেন। আবার থানায়ও ডেকে নিয়ে যায়। পুলিশ আমাদের নিরাপত্তার জন্যই এমন করছে, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তাই পুলিশের ঝামেলা এড়াতে মেসের সদস্যদের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিতে বাধ্য হচ্ছেন বাড়ির মালিকরা।
এ পরিস্থিতিতে ব্যাচেলররা কোথায় যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে কল্যাণপুরের এক বাড়ির মালিক মোহাম্মদ রিপন হোসেন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে মেস ভাড়া দিয়ে বিপদে পড়তে চাই না। বাসা ফাঁকা থাকুক তবু ব্যাচেলর ভাড়া দেব না।
মেসের বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ মেস সংঘের মহাসচিব মো. আয়াতুল্লাহ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, মেসে তল্লাশি ও বাড়িওয়ালাদের ব্যাচেলর ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি করায় এখন মেস ও ব্যাচেলর বাসা ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমাদের হিসেব মতে রাজধানীতে বর্তমানে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ মেস বাড়িতে বসবাস করছেন। ধানমণ্ডি, ঝিগাতলা, মগবাজার, খিলগাঁও, রাজা বাজার, লালবাগ, আজিমপুর, মিরপুর, তেঁজগাঁও, কাঠালবাগান, কলাবাগান এলাকায় সবচেয়ে বেশি মেস রয়েছে। এছাড়াও সমগ্র রাজধানীতেই রয়েছে মেস। এ সব এলাকায় বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়ে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিরতরা বসবাস করে থাকেন। মেসে বসবাস করলেই যে অপরাধী তা তো নয়। আমি বলছি না যে মেসগুলোতে অপরাধ হয় না। কিন্তু সবাই তো অপরাধ করছে না। মাত্র শূন্য দশমিক এক-দুই শতাংশের জন্য কেন লাখ লাখ মেসবাসীকে হয়রানি হতে হবে।
এ সব বাসায় যে শুধু ব্যাচেলররা বসবাস করেন তাও নয়। অনেকে জীবিকার তাগিদে পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে রেখে নিজে মেসে থাকেন। কারণ স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে বাসাবাড়ি নিয়ে বসবাস করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
আয়াতুল্লা বলেন, যে সকল মেস সদস্য অপরাধে জড়িয়ে পড়বে তাদের অবশ্যই গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান চালাতে পারে। ঢালাওভাবে ম্যাচে অভিযান চালালে ব্যাচেলররা যাবেন কোথায়?
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, যারা ভাড়া থাকেন সবাই ব্যাচেলর, নাকি বিবাহিত সেটা বড় কথা নয়। ভাড়াটিয়াদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহে রাখা মালিকদের কর্তব্য। ব্যাচেলরদের বাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে বা বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিতে ডিএমপির কোনো নির্দেশনা নেই। আমরা শুধু সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।