বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ গত বছর প্রবল অকালবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরাঞ্চলে ব্যাপক ফসলহানির ধকল ওই অঞ্চলের কৃষকেরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এবারও তাঁদের ফসল রক্ষা পাবে কি না, এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও ফসল রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ এবং সংস্কারকাজের অর্ধেকও শেষ হয়নি। তাই হাওরাঞ্চলের কৃষকদের মনে ফসলহানির শঙ্কা বাড়ছে, বাড়ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ। বড় হাওরগুলোর পারে কৃষকদের বিক্ষোভ-সমাবেশ হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের লেদারবন্দ হাওরপারে গত বুধবার তেমনই একটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সেখানে কৃষকেরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন এবং বাঁধ নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।
হাওরাঞ্চলে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ ১০ ডিসেম্বর শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার বাধ্যতামূলক নিয়ম রয়েছে। এই সময়সীমা ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে, কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, এর মধ্যে মাত্র ৬৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। অবশ্য বেসরকারি সূত্রগুলো বলছে, ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি কাজ হয়নি। কোনো বছরই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয় না বলে সময়সীমা বাড়ানো হয়। শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়া করে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা হলে মান ভালো হয় না, অনেক বাঁধের নাজুক অংশ সামান্য পানির তোড়েই ভেঙে যায়। ফলে হাওরে পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হয়।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হাওরের পানি নেমে যেতে দেরি হওয়ায় বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করতেও দেরি হয়েছে। এটা একটা বাস্তব সমস্যা বটে, কিন্তু এই সমস্যারও অন্তত কিছুটা সমাধানের চেষ্টা করা যায়। অনেক জলকপাট অকেজো হয়ে আছে, সেগুলো মেরামত করে পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু সে রকম কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। প্রাকৃতিকভাবে পানি নেমে যাওয়া পর্যন্ত হাত গুটিয়ে বসে থাকার অর্থ দুর্ভাগ্য মেনে নেওয়া, এটা সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আসলে হাওরে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজে যাঁরা নিয়োজিত, তাঁদের কড়া জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকা উচিত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা না হলে তার যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে, ব্যাখ্যা বাস্তব যুক্তিসম্পন্ন না হলে দায়িত্বশীলদের শাস্তি পেতে হবে। তা ছাড়া, শুধু বাঁধ নির্মাণ করলেই চলবে না, নির্মাণকাজের গুণগত মানও নিশ্চিত করা জরুরি। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী কৃষকেরা অভিযোগ করেন, অনেক বাঁধে নামকাওয়াস্তে মাটি ফেলা হয়, বাঁধটি মজবুত করার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি কাজগুলো করা হয় না। এই সমস্ত কিছুর ওপর যথার্থ তদারকি দরকার।