বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশে দেশে সংঘাত, সীমান্তে উত্তেজনা, একে অপরকে দোষারোপ এবং শেষ পর্যন্ত আবার উভয় পক্ষের বৈঠক ও শান্তির আশ্বাস- এই চলছে ঘুরেফিরে। কিন্তু অধরা শান্তির দেখা আর মিলছে না। সাধারণ মানুষ থেকে নিয়ে রাজনৈতিক নেতা- সবার একই কথা শান্তি চাই। শান্তির পথে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ‘কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’। চুক্তি, অঙ্গীকার ও শান্তির পায়রা উড়ানো আছে ঠিকই; কিন্তু বাস্তবে দেখা মিলছে না শান্তির, কমছে না উত্তেজনা। বরং থেকে থেকে তা বেড়ে উঠছে। আমরা চাই, বিশ্বে সত্যিকারের শান্তি বিরাজ করুক। শান্তিতে ঘুমাক প্রতিটি মানুষ।
সর্বশেষ শনিবার শান্তির জন্য সীমান্তে পারস্পরিক উত্তেজনা কমাতে একমত হয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী। শান্তির পক্ষে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ছয়বার বৈঠকে মিলিত হয়েছেন শি জিনপিং ও নরেন্দ্র মোদি। চীন-নেপাল-ভারত ত্রিদেশীয় সীমান্তের দোকলাম উপত্যকা নিয়ে গত বছরের ৭২ দিনের উত্তেজনা ও মুখোমুখি অবস্থানের পর সম্পর্কের বরফ গলাতে অনানুষ্ঠানিক সফরে শুক্রবার চীন যান মোদি। তারপর শান্তির পক্ষে দুই দেশের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে তারা আলোচনা করেন এবং সীমান্তে যে কোনো ধরনের উত্তেজনা থেকে বিরত থাকার পক্ষে একমত হন। আমাদের প্রতিবেশী এবং এশিয়ার শীর্ষ দেশ দুটির মধ্যে শান্তি বজায় থাকলে তা সবার জন্যই মঙ্গল।
শুক্রবার ঐতিহাসিক বৈঠকে শান্তির এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে একমত হন দুই কোরিয়া- দক্ষিণ ও উত্তরের প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন ও কিম জং উন। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৬৮ বছর পর কোরিয়া যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটেছে। আর কোনো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা না করা এবং এ বছরই চূড়ান্ত পর্যায়ের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষরের পক্ষে একমত হন তারা। দুই কোরিয়ার বিরোধের কারণে যে কেবল প্রতিবেশী জাপানসহ কিছু দেশ আতঙ্কে ছিল তা-ই নয়, গোটা বিশ্বই এক ধরনের পারমাণবিক হুমকির মধ্যে ছিল। শেষ পর্যন্ত ঐতিহাসিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে শান্তির পথে তাদের অগ্রযাত্রা শুরু হল। যদিও উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-কিম বৈঠকের আগে স্পষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তারপরও সবাই সচেতন হলে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তির আশা করাই যায়।
শান্তির বিষয়টি সামনে এলেই সবার আগে ভেসে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যের ছবি। ফিলিস্তিন-ইসরাইল সীমান্তে ৭০ বছরের ইসরাইলি নারকীয় কাণ্ড এবং প্রায় সাত বছর ধরে সিরিয়াকেন্দ্রিক অশান্তি সেখানের মানুষের ঘুম তো বটেই; জীবন কেড়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইসরাইলের অগণিত ফিলিস্তিনি হত্যা ছাড়াও লাখো মানুষের মৃত্যু ও অসংখ্য পঙ্গুত্ব সিরিয়াতে ঘটেছে মাত্র অর্ধযুগে। সিরিয়ায় পরাশক্তিগুলোর দখল-পাল্টাদখল এবং নিজেদের ইগোর কারণে সাধারণ মানুষকে প্রাণ দিতে হচ্ছে।
অন্যদিকে আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমার সীমান্তকে করে রেখেছে আস্ত এক নরক। রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে গণহত্যার পাশাপাশি চীন সীমান্তের কাচিন থেকে খ্রিান নিশ্চিহ্নে অভিযান চলছে তাদের। রোহিঙ্গা ও অন্য সমস্যার সমাধান হচ্ছে না চীন ও ভারতের আন্তরিকতার অভাবে। ফলে নিজেদের সীমান্তে শান্তির প্রতিশ্রুতি; কিন্তু অন্যের বেলায় শান্তির পক্ষ না নেয়া দেশ দুটির জন্য পরস্পরবিরোধী নয় কি? আসলে শক্তিধর দেশগুলো চাইলেই কেবল অধরা শান্তিকে ধরা যাবে আসবে, অন্যথায় নয়। কেবল ‘মে পিস প্রিভেইল অন আর্থ’ লিখিত শান্তিদণ্ড গাড়ানো ও পায়রা উড়ালে হবে না, দায়িত্বশীলরা মন থেকে চাইলেই অধরা শান্তি ধরা দেবে।