বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সংস্থা জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের প্রধানরা এখন বাংলাদেশে। জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থা সরেজমিন প্রত্যক্ষ করতেই তাঁদের এই সফর। গতকাল তাঁরা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে হত্যা-নির্যাতনের যে বিবরণ শুনেছেন, তা অকল্পনীয়। তিনি লিখেছেন, ‘তারা এর বিচার চায়, নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে চায়।’ এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁরা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা একটি বৈশ্বিক দায়িত্ব। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গাদের জন্য ৪৮ কোটি ডলারের অনুদানও ঘোষণা করেছে।
গত শতাব্দীর সত্তরের দশক থেকে মিয়ানমারের সামরিক সরকার আইন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ সব অধিকার কেড়ে নেয় এবং তাদের দেশ থেকে বিতাড়নের লক্ষ্যে হত্যা-নির্যাতন শুরু করে। এর পর থেকেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে দেশটির সেনাবাহিনী যে ব্যাপকতায় রোহিঙ্গা নিধন অভিযানে নামে তাকে অনেক বিশ্বনেতাই গণহত্যার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন। ঢাকায় পৌঁছে জাতিসংঘ মহাসচিব যথার্থই বলেছেন, মিয়ানমারই এই সংকট সৃষ্টি করেছে। এর সমাধানও তাদেরই করতে হবে। আমরাও তাই মনে করি। রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে হবে। তার আগে তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। তাদের সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং মৌলিক অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের জানিয়েছেন, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা উপস্থিতির কারণে কক্সবাজারের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনেও নেমে এসেছে এক দুর্বিষহ অবস্থা। রোহিঙ্গাদের জীবনও নানাভাবে হুমকির মুখোমুখি। এ অবস্থায় কিছু রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে নিকটস্থ একটি দ্বীপে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে দুই বিশ্ব সংস্থার প্রধান বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রারও ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ পাওয়া দেশ—এই তথ্য জানিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে আপনার (শেখ হাসিনার) নেতৃত্বের প্রতি আমাদের আস্থারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশের উত্তরণকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যাতে ভবিষ্যতেও কম সুদে ঋণ পায় সে জন্য তিনি বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে অনুরোধ জানাবেন। জাতিসংঘ মহাসচিবও বলেন, বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেন।
রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা। যত ক্ষতির কারণই হোক, সম্পূর্ণ মানবিক কারণে ১১ লাখ মানুষের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বাংলাদেশকে বহন করতে হচ্ছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয় করেই এই সংকট থেকে উত্তরণের চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য রাষ্ট্র ও সংস্থার আন্তরিকতাকে আমরা সম্মান জানাই। আশা করি, দ্রুতই এই সংকটের যুক্তিগ্রাহ্য সমাধান হবে।