ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদ-নদী দখল বন্ধ করতে হবে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বারবার উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও নদ-নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা যায়নি। বিশেষ করে ঢাকার চারপাশের শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর দিকে তাকালে এই চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দখলের কারণে নদ-নদীগুলো ক্রমেই নাব্য হারাচ্ছে। পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে গভীরতা। চর পড়ে অনেক নদী যেমন সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে, তেমনি হারাচ্ছে তাদের অস্তিত্ব। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় নদ-নদীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত সেই বোধ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক আগেই নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ এতে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাড়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ ও চাষের জমি বাড়বে। আজকের বাস্তবতায় আমরা তা গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারছি, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা ছিল খুবই প্রাসঙ্গিক।

তবে আশার কথা, গতকাল থেকে ঢাকার ছয়টি নদীর পাড়ে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। এ জন্য নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান একটি কমিটি গঠন করেছেন। এ কমিটির সঙ্গে থাকবেন টাস্কফোর্স সদস্যরা। আমরা আশা করি, নদী রক্ষায় সরকারের এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এবং ক্রমেই এর পরিধি সারা দেশে বিস্তৃত হবে। এর আগে নদ-নদী রক্ষায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থা গত ১০ বছরে অবৈধদখলকারীদের উচ্ছেদে প্রায় ৪০ দফা অভিযান চালিয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে সাড়ে আট হাজারেরও বেশি অবৈধ স্থাপনা। তবে অভিযানের পর পরই নজরদারির অভাবে অপদখলকারীদের থাবা আবারও বিস্তৃত হয়েছে।

ঢাকার চারপাশ ঘিরে থাকা বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। নাব্য সংকটে বালু নদীতেও নৌযান চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। ৩৬ কিলোমিটার এই নদীর ২২ কিলোমিটারই অবৈধ দখলে। গত রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘দূষণ, ভাঙন ও নাব্য সংকট : বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, প্রতি বছর গড়ে দশটি নদী তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে। ইতোমধ্যে দখল ও দূষণের কারণে হারিয়ে গেছে ২৫টি নদী। বর্তমানে বিপন্ন নদীর সংখ্যা ১৭৪টি। এর মধ্যে ১১৭টি নদীর মরণদশা ঘনিয়ে এসেছে। এই চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। নদ-নদী-জলাশয় রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এখানে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনাও উপেক্ষিত হচ্ছে।

আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নদী নিয়ে যে সমস্যাগুলো আছে, তা সমাধানে সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। নদীদূষণমুক্ত করা ও দখল প্রক্রিয়া বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কোনোভাবেই দেশের পরিবেশ, প্রতিবেশকে আর হুমকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া যাবে না। দ্রুত খননের কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর কাছে আমাদের প্রত্যাশা—তারা যেন তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশসহ দেশের নদ-নদী রক্ষার অঙ্গীকার জাতির সামনে তোলে ধরবেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

নদ-নদী দখল বন্ধ করতে হবে

আপডেট টাইম : ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বারবার উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও নদ-নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা যায়নি। বিশেষ করে ঢাকার চারপাশের শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর দিকে তাকালে এই চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দখলের কারণে নদ-নদীগুলো ক্রমেই নাব্য হারাচ্ছে। পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে গভীরতা। চর পড়ে অনেক নদী যেমন সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে, তেমনি হারাচ্ছে তাদের অস্তিত্ব। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় নদ-নদীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত সেই বোধ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক আগেই নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ এতে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাড়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ ও চাষের জমি বাড়বে। আজকের বাস্তবতায় আমরা তা গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারছি, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা ছিল খুবই প্রাসঙ্গিক।

তবে আশার কথা, গতকাল থেকে ঢাকার ছয়টি নদীর পাড়ে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। এ জন্য নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান একটি কমিটি গঠন করেছেন। এ কমিটির সঙ্গে থাকবেন টাস্কফোর্স সদস্যরা। আমরা আশা করি, নদী রক্ষায় সরকারের এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এবং ক্রমেই এর পরিধি সারা দেশে বিস্তৃত হবে। এর আগে নদ-নদী রক্ষায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থা গত ১০ বছরে অবৈধদখলকারীদের উচ্ছেদে প্রায় ৪০ দফা অভিযান চালিয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে সাড়ে আট হাজারেরও বেশি অবৈধ স্থাপনা। তবে অভিযানের পর পরই নজরদারির অভাবে অপদখলকারীদের থাবা আবারও বিস্তৃত হয়েছে।

ঢাকার চারপাশ ঘিরে থাকা বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। নাব্য সংকটে বালু নদীতেও নৌযান চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। ৩৬ কিলোমিটার এই নদীর ২২ কিলোমিটারই অবৈধ দখলে। গত রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘দূষণ, ভাঙন ও নাব্য সংকট : বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, প্রতি বছর গড়ে দশটি নদী তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে। ইতোমধ্যে দখল ও দূষণের কারণে হারিয়ে গেছে ২৫টি নদী। বর্তমানে বিপন্ন নদীর সংখ্যা ১৭৪টি। এর মধ্যে ১১৭টি নদীর মরণদশা ঘনিয়ে এসেছে। এই চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। নদ-নদী-জলাশয় রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এখানে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনাও উপেক্ষিত হচ্ছে।

আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নদী নিয়ে যে সমস্যাগুলো আছে, তা সমাধানে সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। নদীদূষণমুক্ত করা ও দখল প্রক্রিয়া বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কোনোভাবেই দেশের পরিবেশ, প্রতিবেশকে আর হুমকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া যাবে না। দ্রুত খননের কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর কাছে আমাদের প্রত্যাশা—তারা যেন তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশসহ দেশের নদ-নদী রক্ষার অঙ্গীকার জাতির সামনে তোলে ধরবেন।