ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রম মন্ত্রণালয়ের শুভ সূচনা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ শুনেছি কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙতে ছয় মাস সময় লাগে। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুম ৪৭ বছরেও ভাঙল না। কবে ভাঙবে, তাও কারো জানা নেই। পৃথিবীতে যদি ঘুমের কোনো প্রতিযোগিতা থাকত, তাহলে বাংলাদেশের এসব কর্মকর্তাকে শীর্ষস্থান থেকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা এবং যোগ্যতা যে কারো নেই—এ দেশের মানুষ তা বিশ্বাস করে। তবে কুম্ভকর্ণ প্রকৃত অর্থে ঘুমিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের এসব কর্মকর্তা জেগে জেগে ঘুমান। ছয় মাস পরে হলেও কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙে, কিন্তু এসব সরকারি কর্মকর্তার ঘুম অনন্তকালের সঙ্গে সম্পর্কিত।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণের ৯৫ শতাংশ কারখানাই অনিবন্ধিত। এ বাক্যটিকেই বিশ্লেষণ করে বলা যায়, নিবন্ধন পরিদর্শন কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্তাব্যক্তিরা দায়িত্ব পালনে কতটা সংযত! জরিপ বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বিভিন্ন খাতের কারখানা রয়েছে মোট ৫ হাজার ৪৫৭টি। এর মধ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের (ডিআইএফই) নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ৩৫০ কারখানার। এ হিসাবে ডিআইএফইর নিবন্ধন ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে ৯৫ শতাংশ কারখানা। অর্থাৎ এই ৯৫ শতাংশ কারখানা এ যাবত সব ধরনের জবাবদিহির বাইরে থাকার সুযোগ পেয়েছে। অথবা বলা যায়, সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, কে বা কারা এ সুযোগ তৈরি করে দিল? উত্তরটাও ওপেন সিক্রেটের মতো। অর্থাৎ সবারই জানা। ক্ষমতা এবং যোগ্যতার অভাবে তারা মুখ ফোটে বলতে পারেন না। বলার দায়িত্বও তাদের নয়। যাদের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়ে আছে, তারা তো ঘুমিয়ে আছেন। জেগে জেগে ঘুমিয়ে থাকলে তাদের এ ঘুম ভাঙাবার সাধ্য কার? তবে রাষ্ট্রব্যবস্থায় ঘুম ভাঙানোর ব্যবস্থা যে নেই, তাও নয়। অভাব শুধু একটাই। দেখভালের জন্য যারা আছেন, তারাও ঘুমকাতুরে। সবাই যেন অনিবন্ধিত কারখানা থেকে সরবরাহকৃত ঘুমের ওষুধ সেবনে অভ্যস্ত। আর সে কারণেই অবস্থা এতটাই ভয়াবহ।

তবে অনেক দেরিতে হলেও শ্রম মন্ত্রণালয়ের ঘুম ভেঙেছে। চোখ খুলেছে। অনিয়মের দরোজা উন্মোচিত হয়েছে। আমরা আশান্বিত হয়েছি। একই সঙ্গে আমরা আশান্বিত হচ্ছি পুরান ঢাকার এসব কারখানা এবার জবাবদিহির আওতায় আসবে। সম্প্রতি চকবাজারের অগ্নিকান্ডে বিপুল প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে ডিআইএফই যে জরিপ চালিয়েছে, তা এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। মন্ত্রণালয় তালিকাটি খতিয়ে দেখছে। শিগগিরই তারা তাদের কর্মযজ্ঞ শুরু করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয়, এসব অবৈধ কারখানা যে অগ্নিকান্ডের প্রশ্নে একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে, তা অনুধাবনে মন্ত্রণালয় যে সক্ষম হয়েছে, এ কারণে দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ। এখন আমরা একটি ইতিবাচক ফলাফলের অপেক্ষায় থাকলাম।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

শ্রম মন্ত্রণালয়ের শুভ সূচনা

আপডেট টাইম : ১১:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ মার্চ ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ শুনেছি কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙতে ছয় মাস সময় লাগে। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুম ৪৭ বছরেও ভাঙল না। কবে ভাঙবে, তাও কারো জানা নেই। পৃথিবীতে যদি ঘুমের কোনো প্রতিযোগিতা থাকত, তাহলে বাংলাদেশের এসব কর্মকর্তাকে শীর্ষস্থান থেকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা এবং যোগ্যতা যে কারো নেই—এ দেশের মানুষ তা বিশ্বাস করে। তবে কুম্ভকর্ণ প্রকৃত অর্থে ঘুমিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের এসব কর্মকর্তা জেগে জেগে ঘুমান। ছয় মাস পরে হলেও কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙে, কিন্তু এসব সরকারি কর্মকর্তার ঘুম অনন্তকালের সঙ্গে সম্পর্কিত।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণের ৯৫ শতাংশ কারখানাই অনিবন্ধিত। এ বাক্যটিকেই বিশ্লেষণ করে বলা যায়, নিবন্ধন পরিদর্শন কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্তাব্যক্তিরা দায়িত্ব পালনে কতটা সংযত! জরিপ বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বিভিন্ন খাতের কারখানা রয়েছে মোট ৫ হাজার ৪৫৭টি। এর মধ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের (ডিআইএফই) নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ৩৫০ কারখানার। এ হিসাবে ডিআইএফইর নিবন্ধন ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে ৯৫ শতাংশ কারখানা। অর্থাৎ এই ৯৫ শতাংশ কারখানা এ যাবত সব ধরনের জবাবদিহির বাইরে থাকার সুযোগ পেয়েছে। অথবা বলা যায়, সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, কে বা কারা এ সুযোগ তৈরি করে দিল? উত্তরটাও ওপেন সিক্রেটের মতো। অর্থাৎ সবারই জানা। ক্ষমতা এবং যোগ্যতার অভাবে তারা মুখ ফোটে বলতে পারেন না। বলার দায়িত্বও তাদের নয়। যাদের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়ে আছে, তারা তো ঘুমিয়ে আছেন। জেগে জেগে ঘুমিয়ে থাকলে তাদের এ ঘুম ভাঙাবার সাধ্য কার? তবে রাষ্ট্রব্যবস্থায় ঘুম ভাঙানোর ব্যবস্থা যে নেই, তাও নয়। অভাব শুধু একটাই। দেখভালের জন্য যারা আছেন, তারাও ঘুমকাতুরে। সবাই যেন অনিবন্ধিত কারখানা থেকে সরবরাহকৃত ঘুমের ওষুধ সেবনে অভ্যস্ত। আর সে কারণেই অবস্থা এতটাই ভয়াবহ।

তবে অনেক দেরিতে হলেও শ্রম মন্ত্রণালয়ের ঘুম ভেঙেছে। চোখ খুলেছে। অনিয়মের দরোজা উন্মোচিত হয়েছে। আমরা আশান্বিত হয়েছি। একই সঙ্গে আমরা আশান্বিত হচ্ছি পুরান ঢাকার এসব কারখানা এবার জবাবদিহির আওতায় আসবে। সম্প্রতি চকবাজারের অগ্নিকান্ডে বিপুল প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে ডিআইএফই যে জরিপ চালিয়েছে, তা এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। মন্ত্রণালয় তালিকাটি খতিয়ে দেখছে। শিগগিরই তারা তাদের কর্মযজ্ঞ শুরু করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয়, এসব অবৈধ কারখানা যে অগ্নিকান্ডের প্রশ্নে একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে, তা অনুধাবনে মন্ত্রণালয় যে সক্ষম হয়েছে, এ কারণে দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ। এখন আমরা একটি ইতিবাচক ফলাফলের অপেক্ষায় থাকলাম।