কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত যদি সঠিকভাবে পালন করা হয় তাহলে পুঁজিবাজারের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। পুঁজিবাজারে বইতে পারে সুবাতাস। ব্যাংকগুলোর একক ও যৌথ বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত পুঁজিবাজার নীতি সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেছে। এর আগে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিক ভাবে সিদ্ধান্ত জানালেও বিনিয়োগকারীদের দাবি ছিল এই নীতির আওতায় কী কী পড়ছে তা প্রকাশ করা। কিন্তু এক্সপোজার লিমিটের শুধু শর্ত শীথিল করে যখন নীতি সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন পুঁজিবাজারের সূচক বছরের সর্বনিম্ন গতি অতিক্রম করে।
এ সপ্তাহের রবিবার সরকারী ছুটি থাকায় সোমবার ঢাকার বাজারে সূচকের অবস্থান চলে আসে চার হাজার একশত একাত্তর পয়েন্টে। আর বাজারের এমন করুণ পরিণতি দেখে অনেকটা চাপের মুখেই তড়িঘড়ি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাংবাদিকদের ডেকে এর ব্যাখ্যা দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই নীতির আওতায় যেসব ব্যাংকের পুঁজিবাজারে অতিরিক্ত শেয়ার আছে তারা তাদের বিনিয়োগ সমন্বয় করতে পারবে। আর এরপর মঙ্গলবার সকালে ঢাকার বাজারে প্রধান সূচক ১০০ পয়েন্ট, শরিয়া সূচক ২৪ ও থার্টি সূচক ৪৫ পয়েন্ট বাড়ে। আর তার একদিন পর বুধবার সারাদিন সূচকের নেতিবাচক প্রবণতা থাকে।
মঙ্গলবার একদিনে অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে পুঁজিবাজারে বিক্রির চাপ বেড়ে যায় আর অনেকেই অল্প সময়ে মুনাফা নেয়ার চেষ্টা করে। আবার এরই মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্য পরিষদ আসন্ন ২০১৬ -২০১৭ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ বরাদ্দ, এক্সপোজারের সময় বাড়ানোসহ নয় দফা দাবি পেশ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে। আর বিএসইসি ও ডিএসইসির সাথে বৈঠক করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়েশন ও শীর্ষ ব্রোকাররা।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাপের মুখে দেরিতে হলেও যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তা বিনিয়োগকারীরা কিভাবে নিচ্ছে? আর এতে পুঁজিবাজারেও বা কি ধরনের পরিবর্তন এসেছে? বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুঁজিবাজারে বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংককে কোনো শেয়ার বিক্রি করতে হবে না। পুঁজিবাজারে বর্তমানে নির্ধারিত সীমার চেয়ে সামান্য বেশি বিনিয়োগ রয়েছে ১০টি ব্যাংকের। তা আইনি সীমায় নামিয়ে আনতে তাদের জন্য কেস টু কেস ভিত্তিতে সমাধান দিবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা সাবসিডিয়ারি ব্যাংকগুলো যদি সঠিকভাবে পালন করে তাহলে পুঁজিবাজারের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। কারণ বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মূল কোম্পানি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে যে বিনিয়োগ করেছে তা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির ব্যালেন্স শীটে লোন এবং মূলধন হিসেবে আছে।
বর্তমানে সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মূলধন পুঁজিবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিটের বাইরে এবং ঋণ এক্সপোজার লিমিটের মধ্যে। সুতরাং লোন কনভার্ট করে যদি মূলধন বৃদ্ধি করা হয় তাহলে এক্সপোজার লিমিট কমে আসবে এবং মূলধন বৃদ্ধি পাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত বাজারের জন্য ভালো, কারণ সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির ফলে তার আর্থিক অবস্থান শক্তিশালী হবে। এতে পুঁজিবাজারে এক্সপোজারের জন্য শেয়ার বিক্রির যে তাগিদ ছিল এখন তা প্রয়োজন পড়বে না। এই সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে নতুন করে আর এক্সপোজার লিমিটের সময় বাড়ানোরও প্রয়োজন হবে না।
এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে বলা হয়েছে। কোনো ব্যাংককেই শেয়ার বিক্রি করে এক্সপোজার সমন্বয় করতে হবে না। তবে চলতি বছরের ২১ জুলাইয়ের মধ্যে পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, এটা করতে গিয়ে কতটুকু মূলধন বৃদ্ধি করবে তার কোনো নীতিমালা না থাকায় মূল কোম্পানি থেকে সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মূলধন বেশি হয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর এ জায়গায় অস্পষ্টতা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিষয়ে বাজারে স্পষ্ট ধারণা দেয়া উচিৎ যাতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোনো অস্থিরতা না থাকে।