বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চাঁদপুরে এ বছর ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের মধ্যে আনন্দ দেখা দিলেও ধান কাটার শ্রমিক না পেয়ে তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। জেলার হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জে বৃষ্টির কারণে অনেক ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও শ্রমিক না পাওয়ায় ধান কাটতে পারছেন না চাষি। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে জানা গেছে, ধান কাটার জন্য পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত শ্রমিক।
চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। চাঁদপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী আহম্মদ জানান, চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬১ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় রয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন চাল। চাঁদপুরের কৃষক সাধারণত হাইব্রিড, স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ তিন জাতের ইরি-বোরো চাষাবাদ করে থাকেন। দেশের অন্যতম দুটি সেচ প্রকল্প মেঘনা-ধনাগোদা এবং চাঁদপুর সেচ প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও চাঁদপুর খাদ্য ঘাটতির জেলা। এর কারণ, নদীভাঙনে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি বিলীন এবং আবাদি জমির ওপর বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। তারপরও এ জেলায় ধানসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের চাষাবাদ হয়।
গ্রামীণ জনপদের দিকে তাকালে এখনও দেখা যায় ব্যস্ত কৃষক জমি থেকে ধান কাটা এবং মেশিনে নতুন মাড়ানো, রোদে শুকানো ও বস্তা বা গোলায় ভরার কাজে। হাজীগঞ্জ উপজেলার কালোচা উত্তর ইউনিয়নের কৃষক জলিল বলেন, এবার চাষাবাদ করে বিপদে পড়েছি। ধানের মণ ৭০০ টাকা বদলার (শ্রমিকের) রোজ ৮০০ টাকা।
একই উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের চাষি তৈয়ব আলী মোল্লা জানান, আমি দুই কানি (২ একর ৪০ শতাংশ) জমি চাষ করেছি। ধান জমিতে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে রয়েছে শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, শ্রমিক পেলেও ৯টার সময় কাজে এসে দুপুর ১টায় কাজ শেষ করে চলে যান। তাদের রোজ দিতে হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। তার পরও বদলা পাওয়া দুষ্কর।
সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের মধ্য বালিয়া দিঘিরপাড় এলাকার গৃহস্থ বাদল গাজী এবং কৃষক বিল্লাল গাজী জানান, তিন একর জমিতে এবার ইরি বিআর ২৯ আবাদ করে প্রায় ১৮০ মণ ধান পাব। ফসল বাম্পার হলেও ধান বিক্রি নিয়ে তারা চিন্তিত। দালালদের কারণে ধান বিক্রি হচ্ছে না। মিল মালিকরা এবং বেপারিরা এখন ধান কিনেন না। ধানের মণ ১ হাজার টাকা হলেও গৃহস্থের পোষায় না। তারপরও ৮০০ টাকায় ধানের মণ পেলে উৎপাদন খরচ মোটামুটি উঠে আসে।
এ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানান, এ অঞ্চলে আলু চাষ হওয়ার প্রায় ৩০ থেকে ৪০ দিন পর ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়। এতে প্রায় সব জমির আলু নষ্ট হয়ে যায়। পরে আবার মাঠ তৈরি করে আলু চাষ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যদি সামনের দিকে আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে ফসল কৃষকের ঘরে উঠবে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর নির্ভর করবে ফসল ভালো পাওয়ার বিষয়টি।