আগে হাওরাঞ্চলে ধান কাটা হত ‘ভাগা’ ভিত্তিতে । এগার ভাগের এক ভাগ(১/১১) ধান পেত দাওয়াল । দুরত্ব বা অন্য কারনে কম বেশী হত । বরিশাল, ফরিদপুর, কুমিল্লা অঞ্চল হতে হাজার হাজার মানুষ বৈশাখ মাসে নৌকা যোগে ধান কাটতে আসত । সাথে করে নিয়ে আসত মাটির হাড়ি ভর্তি করে ঝুলা গুড়, লোনা ইলিশ, গোল আলু । আমরাও ভাগ পেতাম।
পরবর্তীতে এ স্থান দখল করে জামালপুর, টাঙ্গাইল, বৃহত্তর রংপুর, ময়মনসিংহ থেকে আগত লোকজন । তাঁরা শুধু নৌকা নিয়ে আসত, ফিরে যেত হাসিমুখে নৌকা বোঝাই ধান নিয়ে । গৃহস্থও গরু-খাসি জবাই করে বিদায়ী ভোজ দিত । অথবা খাসি-ভেড়া-গরু দিয়ে বিদায় জানাত । বেপারীগণ মহাজনের জয়ধ্বনি দিতে দিতে ফিরে যেত । তার আগে ফাল্গুণ-চৈত্র্য মাসে বেপারীগণ হাওরাঞ্চলে এসে টাকা পয়সা দিয়ে ‘বায়না’ করে যেত । এতে উভয় পক্ষ লাভবান হত, ক্ষতি হত কম, শ্রমের সর্বোচ্চ ব্যবহার হত ।
আজ অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন । ওইসব অঞ্চলের লোকজন আর সেভাবে আসে না ।
গত বছরও ধান কেটেছে এক অষ্টমাংশ (১/৮) হিসাবে । এ বছর দেশী দাওয়ালগণ আর নগদ কাঁচা ধানের বিনিময়ে ধান কাটতে রাজি নয় । ধান কাটবে নগদ টাকায় । প্রতি কের(৪০ শতাংশ) জমির ধান কাটতে দিতে হচ্ছে ৩-৪ হাজার টাকা ।
কৃষক মাত্র ৩৫০-৪৫০ টাকা মন দরে ধান বিক্রি করে দাওয়ালদের চাহিদা মিটাতে বাধ্য হচ্ছে।আবার নগদ ৬০০-৭০০ টাকা মজুরীতেও ধান কাটাতে বাধ্য । সাথে তিন বেলা খাবার । এতে ফাঁকি, ক্ষতি হয় অনেক বেশী । আগাম বন্যার আগ্রাসনের সুযোগ নিচ্ছে দাওয়ালরা ।
এক কেরে ধান হবে ২০-২৫ মন । ধান জমি হতে আনতে ট্রলিকে দিতে হয় ২-৩ মন, মাড়াই করতে ৬-৭ %, সেচকর ১ মন ৩০ কেজি । অন্যান্য খরচ তো আছেই । কৃষকের খাতায় শূণ্য ।
পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে হাওরের কৃষিকে সাজাতে হবে সেভাবে । ক্ষতির ঝুঁকি মোকাবেলায় হাওরে ফসল বৈচিত্রময়করণ (Crops diversification), যান্ত্রিকীকরণে আমাদের যেতেই হবে । সরকারের নেক দৃষ্টি কামনা করছি ।
ড. নিয়াজ পাশা: কৃষি প্রকৌশলী, হাওর ভূমিপুত্র