ঢাকা , রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শপথের আগে ওয়াশিংটনে হাজারো মানুষের ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামীকাল সোমবার শপথ গ্রহণ করবেন। তবে ট্রাম্পের অভিষেকের আগে হাজার হাজার মানুষ ওয়াশিংটনে বিক্ষোভের জন্য জড়ো হচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ওয়াশিংটন ডিসিতেই নয়, পুরো দেশজুড়েই এমন বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে।

বিবিসি বলছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ পদযাত্রা গতকাল শনিবার থেকেই শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই নারী। এ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে দ্য পিপলস মার্চ, যা আগে উইমেন’স মার্চ হিসেবে পরিচিত ছিল।

বিক্ষোভ আয়োজকদের হিসেব মতে, এই পদযাত্রায় ৫০ হাজার পর্যন্ত মানুষ যোগ দিতে পারে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীর সংখ্যা ২৫ হাজার হতে পারে।

 

এদিকে ট্রাম্প শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে এসেছেন। তার শপথ গ্রহণ উপলক্ষ্যে ভার্জিনিয়ায় তার গলফ ক্লাবে আতশবাজিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।

বিবিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসি’র লিংকন মেমোরিয়ালের দিকে পদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। তিনটি স্থান থেকে পদযাত্রা করে মানুষ সেখানে জড়ো হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে বাড়ছে মানুষের সংখ্যা।

এ প্রসঙ্গে আয়োজকরা বলছেন, সবাই মিলে ‘ট্রাম্পইজম’ (ট্রাম্পের ভাবাদর্শ) মোকাবেলা করাটাই আজকের বিক্ষোভের মূল বিষয়।

পদযাত্রায় যোগ দেওয়া এক নারী বলেন, ‘মানুষ এখনো ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার প্রয়োজন বোধ করবে বলেই তিনি আশা করেন।’

তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের এবারের প্রেসিডেন্সির মেয়াদে ঝুঁকি আগের চেয়ে আরও অনেক বেশি। কারণ, ট্রাম্প এবার আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন। ধনকুবের শ্রেণির মানুষকে তার পাশে পেয়েছেন। আমরা এখনো এখানে আছি, আমরা প্রতিহত করব।’

 

ব্রুক নামের একজন প্রতিবাদকারী বলছেন, ‘আমি গর্ভপাতের সুযোগের বিষয়ে তার সমর্থন জানাতে এসেছি। যেভাবে দেশে ভোট হয়েছে তাতে আমি খুশী নই। আমি অত্যন্ত দু:খিত যে, আমাদের দেশ এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়েছে, যিনি ইতোমধ্যেই একবার ব্যর্থ হয়েছেন এবং আমরা একজন নারী প্রার্থীকে মনোনীত করিনি।’

কায়লা নামে আরেকজন নারী বললেন, ‘কিছু আবেগ আমাকে রাজধানীর রাস্তায় নিয়ে এসেছে। সত্যি বলতে আমি পাগল হয়ে গেছি, আমি দু:খিত আবার আমি আনন্দিত।’

আরেক নারী সুশি এসেছেন সান ফ্রান্সিসকো থেকে। সঙ্গে তার বোন আন্নে এসেছেন। তারা দু’জনেই ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শপথ গ্রহণের পর প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। সে সময়কার ব্যাপক জনসমাগমের কথা মনে করেছেন তিনি। তিনি আশা করেছিলেন, ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে মানুষ এখনো রাস্তায় নামবে।

সুশি বলছিলেন, ‘এবার অংশীদার বেড়েছে। ট্রাম্প আরও সাহসী। তিনি বিলিয়নিয়ার শ্রেণীতে এসেছেন এবং প্রযুক্তি শ্রেণি মাথা নত করেছে।’

আর আন্নে বললেন, ‘প্রতিবাদকারীরা আমেরিকার অনেক বিষয় থেকে বাইরে আছেন। ট্রাম্প গত নভেম্বরে দোদুল্যমান সবকয়টি রাজ্যে জয় পেয়েছেন। এরপরেও আমরা এখানে আছি এবং আমরা প্রতিরোধ করব।’

 

এদিকে শনিবার ওয়াশিংটন মনুমেন্টের সঙ্গে একদল ট্রাম্প সমর্থকও জমায়েত হয়েছিল। সেখানে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ লেখা হ্যাট পরিহিত একজনকে উদ্দেশ্যে করে পিপলস মার্চের একজন নেতা বলেছেন “নো ট্রাম্প, নো কেকেকে”।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে প্রথমবারের মতো পিপলস মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নারীরা তখন ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পরদিন প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছিল, যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল। পরে এই আন্দোলন রাজধানী থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। পরের কয়েক বছরে ট্রাম্পের এজেন্ডার বিরুদ্ধে নারীদের এই ‘মার্চ’ প্রতিবাদ হিসেবে অব্যাহত থাকে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

শপথের আগে ওয়াশিংটনে হাজারো মানুষের ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ

আপডেট টাইম : ৪১ মিনিট আগে

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামীকাল সোমবার শপথ গ্রহণ করবেন। তবে ট্রাম্পের অভিষেকের আগে হাজার হাজার মানুষ ওয়াশিংটনে বিক্ষোভের জন্য জড়ো হচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ওয়াশিংটন ডিসিতেই নয়, পুরো দেশজুড়েই এমন বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে।

বিবিসি বলছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ পদযাত্রা গতকাল শনিবার থেকেই শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই নারী। এ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে দ্য পিপলস মার্চ, যা আগে উইমেন’স মার্চ হিসেবে পরিচিত ছিল।

বিক্ষোভ আয়োজকদের হিসেব মতে, এই পদযাত্রায় ৫০ হাজার পর্যন্ত মানুষ যোগ দিতে পারে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীর সংখ্যা ২৫ হাজার হতে পারে।

 

এদিকে ট্রাম্প শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে এসেছেন। তার শপথ গ্রহণ উপলক্ষ্যে ভার্জিনিয়ায় তার গলফ ক্লাবে আতশবাজিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।

বিবিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসি’র লিংকন মেমোরিয়ালের দিকে পদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। তিনটি স্থান থেকে পদযাত্রা করে মানুষ সেখানে জড়ো হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে বাড়ছে মানুষের সংখ্যা।

এ প্রসঙ্গে আয়োজকরা বলছেন, সবাই মিলে ‘ট্রাম্পইজম’ (ট্রাম্পের ভাবাদর্শ) মোকাবেলা করাটাই আজকের বিক্ষোভের মূল বিষয়।

পদযাত্রায় যোগ দেওয়া এক নারী বলেন, ‘মানুষ এখনো ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার প্রয়োজন বোধ করবে বলেই তিনি আশা করেন।’

তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের এবারের প্রেসিডেন্সির মেয়াদে ঝুঁকি আগের চেয়ে আরও অনেক বেশি। কারণ, ট্রাম্প এবার আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন। ধনকুবের শ্রেণির মানুষকে তার পাশে পেয়েছেন। আমরা এখনো এখানে আছি, আমরা প্রতিহত করব।’

 

ব্রুক নামের একজন প্রতিবাদকারী বলছেন, ‘আমি গর্ভপাতের সুযোগের বিষয়ে তার সমর্থন জানাতে এসেছি। যেভাবে দেশে ভোট হয়েছে তাতে আমি খুশী নই। আমি অত্যন্ত দু:খিত যে, আমাদের দেশ এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়েছে, যিনি ইতোমধ্যেই একবার ব্যর্থ হয়েছেন এবং আমরা একজন নারী প্রার্থীকে মনোনীত করিনি।’

কায়লা নামে আরেকজন নারী বললেন, ‘কিছু আবেগ আমাকে রাজধানীর রাস্তায় নিয়ে এসেছে। সত্যি বলতে আমি পাগল হয়ে গেছি, আমি দু:খিত আবার আমি আনন্দিত।’

আরেক নারী সুশি এসেছেন সান ফ্রান্সিসকো থেকে। সঙ্গে তার বোন আন্নে এসেছেন। তারা দু’জনেই ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শপথ গ্রহণের পর প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। সে সময়কার ব্যাপক জনসমাগমের কথা মনে করেছেন তিনি। তিনি আশা করেছিলেন, ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে মানুষ এখনো রাস্তায় নামবে।

সুশি বলছিলেন, ‘এবার অংশীদার বেড়েছে। ট্রাম্প আরও সাহসী। তিনি বিলিয়নিয়ার শ্রেণীতে এসেছেন এবং প্রযুক্তি শ্রেণি মাথা নত করেছে।’

আর আন্নে বললেন, ‘প্রতিবাদকারীরা আমেরিকার অনেক বিষয় থেকে বাইরে আছেন। ট্রাম্প গত নভেম্বরে দোদুল্যমান সবকয়টি রাজ্যে জয় পেয়েছেন। এরপরেও আমরা এখানে আছি এবং আমরা প্রতিরোধ করব।’

 

এদিকে শনিবার ওয়াশিংটন মনুমেন্টের সঙ্গে একদল ট্রাম্প সমর্থকও জমায়েত হয়েছিল। সেখানে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ লেখা হ্যাট পরিহিত একজনকে উদ্দেশ্যে করে পিপলস মার্চের একজন নেতা বলেছেন “নো ট্রাম্প, নো কেকেকে”।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে প্রথমবারের মতো পিপলস মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নারীরা তখন ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পরদিন প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছিল, যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল। পরে এই আন্দোলন রাজধানী থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। পরের কয়েক বছরে ট্রাম্পের এজেন্ডার বিরুদ্ধে নারীদের এই ‘মার্চ’ প্রতিবাদ হিসেবে অব্যাহত থাকে।