ঢাকা , রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

পশ্চিম তীরের অভিযানে ইসরাইল ‘যুদ্ধপদ্ধতি’ ব্যবহার করছে: জাতিসংঘ

অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন অঞ্চলে পরিচালিত ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর অভিযানে ‘যুদ্ধপদ্ধতি’ ব্যবহারের তীব্র সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ।  শুক্রবার সংস্থাটি বলেছে, ইসরাইলি বাহিনী আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে শক্তি প্রয়োগ করেছে তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আরব নিউজ।

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মাত্র দুই দিন পরই ইসরাইলি বাহিনী দখলকৃত পশ্চিম তীরে ‘অপারেশন আয়রন ওয়াল’ নামে নতুন অভিযান শুরু করে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে তারা বিমান হামলার পাশাপাশি হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে আক্রমণ চালায়।

একইসঙ্গে, সাঁজোয়া যান ও বুলডোজারের সহায়তায় বিপুলসংখ্যক ইসরায়েলি সেনা জেনিন শরণার্থীশিবিরে প্রবেশ করে। এর আগে, পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে শিবিরে প্রবেশ ও বাহিরে যাওয়ার সব পথ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার মুখপাত্র থামিন আল-খীতান জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পশ্চিম তীরের জেনিনে বেআইনি প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহারের বিষয়টি সামনে এনেছে। যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য উপযোগী কৌশল ও সরঞ্জাম ব্যবহার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এতে একাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে এবং নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক ইসরা্লইর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন দেশটি মানবাধিকারের মানদণ্ড মেনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নির্ধারিত নিয়মনীতি প্রয়োগ করে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আয়রন ওয়াল’ নামে পরিচিত এই সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য হলো ওই অঞ্চলে ‘সন্ত্রাসবাদ নির্মূল’ করা।

খীতান জানান, জাতিসংঘ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করেছে মঙ্গলবার থেকে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ৪০ জন আহত হয়েছেন।  নিহতদের অধিকাংশই নিরস্ত্র ছিলেন বলে জানা গেছে।

তিনি বলেন, ‘আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। বেআইনি হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

খীতান আরও জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতির বাসিন্দারা ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে গাড়ি ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন, কিছু ইসরাইলি কর্মকর্তা নতুন বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনার কথা বলেছেন, যা আন্তর্জাতিক আইনের নতুন লঙ্ঘন। আমরা আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ইসরাইল কর্তৃক দখলকৃত অঞ্চলে নিজেদের জনগণকে স্থানান্তরিত করাও একটি যুদ্ধাপরাধ।”

জাতিসংঘ সব পক্ষকে, বিশেষ করে প্রভাবশালী তৃতীয় পক্ষগুলোকে, পশ্চিম তীরসহ পুরো অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বিএনপির সঙ্গে সরকার-ছাত্রদের দূরত্ব যেসব ইস্যুতে

পশ্চিম তীরের অভিযানে ইসরাইল ‘যুদ্ধপদ্ধতি’ ব্যবহার করছে: জাতিসংঘ

আপডেট টাইম : ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫

অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন অঞ্চলে পরিচালিত ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর অভিযানে ‘যুদ্ধপদ্ধতি’ ব্যবহারের তীব্র সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ।  শুক্রবার সংস্থাটি বলেছে, ইসরাইলি বাহিনী আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে শক্তি প্রয়োগ করেছে তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আরব নিউজ।

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মাত্র দুই দিন পরই ইসরাইলি বাহিনী দখলকৃত পশ্চিম তীরে ‘অপারেশন আয়রন ওয়াল’ নামে নতুন অভিযান শুরু করে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে তারা বিমান হামলার পাশাপাশি হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে আক্রমণ চালায়।

একইসঙ্গে, সাঁজোয়া যান ও বুলডোজারের সহায়তায় বিপুলসংখ্যক ইসরায়েলি সেনা জেনিন শরণার্থীশিবিরে প্রবেশ করে। এর আগে, পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে শিবিরে প্রবেশ ও বাহিরে যাওয়ার সব পথ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার মুখপাত্র থামিন আল-খীতান জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পশ্চিম তীরের জেনিনে বেআইনি প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহারের বিষয়টি সামনে এনেছে। যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য উপযোগী কৌশল ও সরঞ্জাম ব্যবহার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এতে একাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে এবং নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক ইসরা্লইর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন দেশটি মানবাধিকারের মানদণ্ড মেনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নির্ধারিত নিয়মনীতি প্রয়োগ করে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আয়রন ওয়াল’ নামে পরিচিত এই সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য হলো ওই অঞ্চলে ‘সন্ত্রাসবাদ নির্মূল’ করা।

খীতান জানান, জাতিসংঘ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করেছে মঙ্গলবার থেকে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ৪০ জন আহত হয়েছেন।  নিহতদের অধিকাংশই নিরস্ত্র ছিলেন বলে জানা গেছে।

তিনি বলেন, ‘আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। বেআইনি হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

খীতান আরও জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতির বাসিন্দারা ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে গাড়ি ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন, কিছু ইসরাইলি কর্মকর্তা নতুন বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনার কথা বলেছেন, যা আন্তর্জাতিক আইনের নতুন লঙ্ঘন। আমরা আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ইসরাইল কর্তৃক দখলকৃত অঞ্চলে নিজেদের জনগণকে স্থানান্তরিত করাও একটি যুদ্ধাপরাধ।”

জাতিসংঘ সব পক্ষকে, বিশেষ করে প্রভাবশালী তৃতীয় পক্ষগুলোকে, পশ্চিম তীরসহ পুরো অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে।