ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংকট নিরসনে চাই জরুরি উদ্যোগ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশের জাতীয় আয়ের একটি বিশাল অংশ আসে রেমিট্যান্স থেকে। যার জোগানদাতা বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা। বর্তমানে ১৬২ দেশে প্রায় এক কোটি অভিবাসী কর্মরত। এ ছাড়া প্রতি বছর প্রায় ছয় লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসননীতির অভাবে বাংলাদেশের শ্রমিকরা প্রায়ই নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যার জ্বলন্ত উদাহরণ মালয়েশিয়া।

মালয়েশিয়ায় যেসব বিদেশি শ্রমিক কাজ করেন তাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশের। কিন্তু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অভিবাসন ব্যয় বাড়ানো এবং বৈধ নথিপত্র না থাকায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর চলতি পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। এমনকি সেখানে অবস্থানরত শ্রমিকদের ধরপাকড়সহ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও চলছে। এতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে যারা মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন, তাদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।

গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈধ নথিপত্র ছাড়া অবস্থানরত বিদেশিদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। আটক নথিপত্রহীন অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকও রয়েছেন। বৈধ নথিপত্রহীন বিদেশি শ্রমিকদের স্বদেশে ফেরত যেতে বেঁধে দেওয়া আলটিমেটাম গত বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার পর এই সাঁড়াশি অভিযানে নামে অভিবাসন দফতর। কিন্তু ঘটনা যাই হোক, আমাদের অবশ্যই এ কথা মনে রাখতে হবে, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ১০ লাখের মতো বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত। তাদের স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে।

আমরা আশা করি, দুই দেশের সরকার যদি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়, তাহলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া যেতে হলে যে কাউকে প্রায় চার লাখ কুড়ি হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। পুরনো পদ্ধতিতে অর্থাৎ ২০১৬ সালের আগে বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেকোনো রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে পারত। ওই বছর মালয়েশিয়া সরকার নতুন পদ্ধতিতে বাংলাদেশের ১০টি এজেন্সিকে নির্ধারণ করে দেয় যারা সে দেশে শ্রমিক পাঠাতে পারবে। কিন্তু সিন্ডিকেটের অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশের ওই ১০টি এজেন্সির কর্মকা- স্থগিত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর তখন থেকেই এ সংকট মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত, যত দ্রুত সম্ভব সমস্যাটির সমাধানে যৌক্তিক পরিবেশ তৈরা করা।

অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশযাত্রা রোধে ও দালাল-প্রতারকদের দৌরাত্ম্য কমানোর ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় জনশক্তি রফতানির উদ্যোগ বেশ আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু তা কাক্সিক্ষত মাত্রায় কার্যকর না থাকায় এসব অবৈধ তৎপরতা থামেনি। অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা রোধ ও বিদেশে নিরাপদ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বৈধ পথে কম খরচে প্রবাসে কর্মসংস্থানের সরকারি উদ্যোগে গতি আনা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় যে শ্রমিক সংকট চলছে, তা নিরসনেও জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

সংকট নিরসনে চাই জরুরি উদ্যোগ

আপডেট টাইম : ০৬:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশের জাতীয় আয়ের একটি বিশাল অংশ আসে রেমিট্যান্স থেকে। যার জোগানদাতা বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা। বর্তমানে ১৬২ দেশে প্রায় এক কোটি অভিবাসী কর্মরত। এ ছাড়া প্রতি বছর প্রায় ছয় লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসননীতির অভাবে বাংলাদেশের শ্রমিকরা প্রায়ই নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যার জ্বলন্ত উদাহরণ মালয়েশিয়া।

মালয়েশিয়ায় যেসব বিদেশি শ্রমিক কাজ করেন তাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশের। কিন্তু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অভিবাসন ব্যয় বাড়ানো এবং বৈধ নথিপত্র না থাকায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর চলতি পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। এমনকি সেখানে অবস্থানরত শ্রমিকদের ধরপাকড়সহ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও চলছে। এতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে যারা মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন, তাদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।

গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈধ নথিপত্র ছাড়া অবস্থানরত বিদেশিদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। আটক নথিপত্রহীন অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকও রয়েছেন। বৈধ নথিপত্রহীন বিদেশি শ্রমিকদের স্বদেশে ফেরত যেতে বেঁধে দেওয়া আলটিমেটাম গত বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার পর এই সাঁড়াশি অভিযানে নামে অভিবাসন দফতর। কিন্তু ঘটনা যাই হোক, আমাদের অবশ্যই এ কথা মনে রাখতে হবে, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ১০ লাখের মতো বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত। তাদের স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে।

আমরা আশা করি, দুই দেশের সরকার যদি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়, তাহলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া যেতে হলে যে কাউকে প্রায় চার লাখ কুড়ি হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। পুরনো পদ্ধতিতে অর্থাৎ ২০১৬ সালের আগে বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেকোনো রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে পারত। ওই বছর মালয়েশিয়া সরকার নতুন পদ্ধতিতে বাংলাদেশের ১০টি এজেন্সিকে নির্ধারণ করে দেয় যারা সে দেশে শ্রমিক পাঠাতে পারবে। কিন্তু সিন্ডিকেটের অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশের ওই ১০টি এজেন্সির কর্মকা- স্থগিত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর তখন থেকেই এ সংকট মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত, যত দ্রুত সম্ভব সমস্যাটির সমাধানে যৌক্তিক পরিবেশ তৈরা করা।

অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশযাত্রা রোধে ও দালাল-প্রতারকদের দৌরাত্ম্য কমানোর ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় জনশক্তি রফতানির উদ্যোগ বেশ আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু তা কাক্সিক্ষত মাত্রায় কার্যকর না থাকায় এসব অবৈধ তৎপরতা থামেনি। অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা রোধ ও বিদেশে নিরাপদ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বৈধ পথে কম খরচে প্রবাসে কর্মসংস্থানের সরকারি উদ্যোগে গতি আনা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় যে শ্রমিক সংকট চলছে, তা নিরসনেও জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন।