ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রাফিক সচেতনতা মাস

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ঈদের আগে দেশব্যাপী পরিচালিত ১০ দিনের সম্প্রসারিত ট্রাফিক সপ্তাহের পর গতকাল থেকে রাজধানী ঢাকায় শুরু হয়েছে ট্রাফিক সচেতনতা মাস। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার এক মাসের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তুলে ধরেছেন তিনি। ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, রাজধানীতে বাস থামানোর জন্য ১২১টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব স্থানের বাইরে কেউ বাস থামাতে পারবে না।

যাত্রীরাও নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া অন্য কোনো স্থান থেকে ওঠা-নামা করতে পারবে না। ৪০টি চেকপোস্টে ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি চেক করবে। মোটরসাইকেল আরোহীদের জন্য হেলমেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রিকশার শৃঙ্খলা আনতে ঢাকায় নিবন্ধন নেই এমন রিকশা চলতে দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে, মহানগরীর প্রধান সড়কগুলোতে লেগুনা চলবে না। ডিএমপি কমিশনারের মতে, সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ লেগুনা। রাজধানীতে এত দিন যারা লেগুনা চালিয়েছে, তারা অবৈধভাবে চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রশ্ন হচ্ছে, এত দিন রাজধানীতে এই যানটি অবৈধভাবে চলল কিভাবে? তার চেয়েও বড় কথা, রাজধানীতে গণপরিবহনের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, লেগুনা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি কতটা সংগত? হিউম্যান হলার বা লেগুনা রাজধানী থেকে হঠাৎ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তার একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে। রাজধানীতে এমন অনেক সড়ক আছে, যেখানে লেগুনা বা হিউম্যান হলারই একমাত্র গণপরিবহন। লেগুনার মতো যানবাহন, যেগুলোর বেশির ভাগেরই ফিটনেস নেই, চালকের আসনে অপ্রাপ্তবয়স্করা—এমন বাহন তুলে দেওয়া দরকার। কিন্তু তার আগে বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে। বিকল্প বাহনের ব্যবস্থা না করে হিউম্যান হলার-জাতীয় বাহন তুলে দিলে জনমনে উল্টো প্রতিক্রিয়া হতে পারে। লেগুনার মতো ছোট যান শুধু রাজধানীতে নয়, মহাসড়কেও বিশৃঙ্খলা বাড়াচ্ছে কিন্তু এসব বাহনের ওপর মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সুতরাং বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিকল্প বাহনের বিষয়টি ভাবতে হতো। তাতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ত না।

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিএমপি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার সবই ইতিবাচক। জাহাঙ্গীর গেট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত মডেল ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু, সিগন্যাল বাতির ভিত্তিতে যানবাহন চলাচলসহ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলে রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরবে। কিন্তু গণপরিবহনে আরো বাস, বিশেষ করে দ্বিতল বাস দিতে হবে। সব রুটে বিআরটিসির বাস না চললে বেসরকারি বাস কম্পানিগুলো একচেটিয়া ব্যবসা করবে, সেখানে কোনো প্রতিযোগিতা থাকবে না। বাস মালিকদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে যাত্রীদের। অবিলম্বে রাজধানীর সব রুটে বিআরটিসির বাস চালু করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। মানুষের ভোগান্তি দূর হয় এমন গণপরিবহন ব্যবস্থাকে নাগরিকরা সাধুবাদ জানাবে। কিন্তু জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়, এমন যেকোনো সিদ্ধান্ত জনরোষের কারণ হতে পারে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ট্রাফিক সচেতনতা মাস

আপডেট টাইম : ১০:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ঈদের আগে দেশব্যাপী পরিচালিত ১০ দিনের সম্প্রসারিত ট্রাফিক সপ্তাহের পর গতকাল থেকে রাজধানী ঢাকায় শুরু হয়েছে ট্রাফিক সচেতনতা মাস। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার এক মাসের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তুলে ধরেছেন তিনি। ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, রাজধানীতে বাস থামানোর জন্য ১২১টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব স্থানের বাইরে কেউ বাস থামাতে পারবে না।

যাত্রীরাও নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া অন্য কোনো স্থান থেকে ওঠা-নামা করতে পারবে না। ৪০টি চেকপোস্টে ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি চেক করবে। মোটরসাইকেল আরোহীদের জন্য হেলমেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রিকশার শৃঙ্খলা আনতে ঢাকায় নিবন্ধন নেই এমন রিকশা চলতে দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে, মহানগরীর প্রধান সড়কগুলোতে লেগুনা চলবে না। ডিএমপি কমিশনারের মতে, সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ লেগুনা। রাজধানীতে এত দিন যারা লেগুনা চালিয়েছে, তারা অবৈধভাবে চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রশ্ন হচ্ছে, এত দিন রাজধানীতে এই যানটি অবৈধভাবে চলল কিভাবে? তার চেয়েও বড় কথা, রাজধানীতে গণপরিবহনের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, লেগুনা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি কতটা সংগত? হিউম্যান হলার বা লেগুনা রাজধানী থেকে হঠাৎ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তার একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে। রাজধানীতে এমন অনেক সড়ক আছে, যেখানে লেগুনা বা হিউম্যান হলারই একমাত্র গণপরিবহন। লেগুনার মতো যানবাহন, যেগুলোর বেশির ভাগেরই ফিটনেস নেই, চালকের আসনে অপ্রাপ্তবয়স্করা—এমন বাহন তুলে দেওয়া দরকার। কিন্তু তার আগে বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে। বিকল্প বাহনের ব্যবস্থা না করে হিউম্যান হলার-জাতীয় বাহন তুলে দিলে জনমনে উল্টো প্রতিক্রিয়া হতে পারে। লেগুনার মতো ছোট যান শুধু রাজধানীতে নয়, মহাসড়কেও বিশৃঙ্খলা বাড়াচ্ছে কিন্তু এসব বাহনের ওপর মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সুতরাং বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিকল্প বাহনের বিষয়টি ভাবতে হতো। তাতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ত না।

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিএমপি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার সবই ইতিবাচক। জাহাঙ্গীর গেট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত মডেল ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু, সিগন্যাল বাতির ভিত্তিতে যানবাহন চলাচলসহ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলে রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরবে। কিন্তু গণপরিবহনে আরো বাস, বিশেষ করে দ্বিতল বাস দিতে হবে। সব রুটে বিআরটিসির বাস না চললে বেসরকারি বাস কম্পানিগুলো একচেটিয়া ব্যবসা করবে, সেখানে কোনো প্রতিযোগিতা থাকবে না। বাস মালিকদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে যাত্রীদের। অবিলম্বে রাজধানীর সব রুটে বিআরটিসির বাস চালু করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। মানুষের ভোগান্তি দূর হয় এমন গণপরিবহন ব্যবস্থাকে নাগরিকরা সাধুবাদ জানাবে। কিন্তু জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়, এমন যেকোনো সিদ্ধান্ত জনরোষের কারণ হতে পারে।