বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন ও মিয়ানমার সরকারের বৈরী মনোভাবের কারণে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের এ ভূমিকা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, চিরদিনের জন্য তাদের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। একদিন তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতেই হবে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সঙ্গে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মহল। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার তৎপর। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনাও করেছে। বাংলাদেশের অব্যাহত তৎপরতায় এবং বিশ্বমহলের চাপে তারা প্রত্যাবাসনে সম্মতও হয়েছে, যদিও তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রোহিঙ্গারা সমর্যাদায় ও নিরাপদে তাদের বাসভূমিতে থাকতে পারবে কি না এ নিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলেরও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে আজ ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। প্রথম ধাপে দুই হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন করা হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন উদ্যোগে চীন ও ভারতের সমর্থন রয়েছে। তারা চায়, দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু হোক। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার গত মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে ৬০ জনেরও বেশি বিদেশি কূটনীতিককে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার কথা অবহিত করেন। তিনি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বানও জানান। রোহিঙ্গা সংকটকে ভয়াবহতম সংকটগুলোর একটি উল্লেখ করে হাইকমিশনার কূটনীতিকদের জানান, মিয়ানমারের সৃষ্টি করা এ সংকটের চাপ বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকলে এ সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মহল এখনো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দিহান। তাই এ প্রক্রিয়া স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান মিশেল ব্ল্যাশেলেট। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেনেভা থেকে এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান। এর আগে সোমবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো অনুকূল পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। গত সপ্তাহে মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ইয়াংহি লিও একই কারণে প্রত্যাবাসন উদ্যোগ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ব্ল্যাশেলেট বলেছেন, এ প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের জীবন ও স্বাধীনতা চরম ঝুঁকিতে পড়বে। তাঁর দপ্তর এখনো রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের হত্যা, গুম ও গ্রেপ্তার করার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক ঘটনাবিষয়ক অভিযোগ পাচ্ছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি রয়েছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর অর্থ তাদের আবার সহিংসতা ও নিপীড়নের মধ্যে ঠেলে দেওয়া। মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আন্তরিকতা প্রদর্শন করতেও বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ অযৌক্তিক নয়। মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর আচরণে স্বস্তিদায়ক পরিবর্তন এখনো ঘটেনি। বাংলাদেশ এ বিষয়ে সম্যক অবহিত। তবু বাংলাদেশের তৎপরতায় এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপে তারা প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরু করতে সম্মত হয়েছে। অতএব প্রক্রিয়া শুরু হোক। এটিকে প্রতীকী প্রত্যাবাসন ভেবে নেওয়াই ভালো। এটি মিয়ানমারের জন্য পরীক্ষাও বটে। আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিবেচনায় নিয়েই প্রক্রিয়াটির সূচনা হোক।