ঢাকা , মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৮৩, ভারত ১৪১, পাকিস্তান ১৫৩

দেশের টেলিভিশন চ্যানেলসমূহে পারলে সারাদিনই জঙ্গিবাদের খবর প্রচার করা হচ্ছে। নিজস্ব কোনো আইডিয়া, বুদ্ধি ও গবেষণাপ্রসূত বিশেষ সংবাদ কিংবা বিনোদন-নির্ভর অনুষ্ঠান না থাকায় দেশের প্রায় সবকটি টিভি চ্যানেলই এখন নগদ ঘটনা আর ডাবিংকৃত ভারতীয় বিজ্ঞাপননির্ভর। কোনো একটা ঘটনার খবর পেলেই হল, দে ছুট। শুরু হয় লাইভ। পাল্লা দিয়ে ‘সাংবাদিকতা’ চালায় অনলাইন সংবাদপত্রগুলো। ঘরে-ঘরে, অফিসে-আদালতে, দোকানে, চায়ের আড্ডায়, হোটেলে, রেস্তোরায় মানুষ আতঙ্কিত হয়। এক পর্যায়ে সিআইএ-মোসাদের সৃষ্টি, তথাকথিত ‘আইএস’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ইহুদীদের প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টিলিজেন্স থেকে হামলার স্বীকারোক্তি দেয়। আমাদের টেলিভিশনগুলো নতুন উদ্যমে শুরু করে ‘আইএস’ এর প্রচার। আমাদের বাচ্চাদের কানে ‘জঙ্গি’, ‘আইএস’ শব্দগুলো প্রবেশ করে ধীরে ধীরে কিন্তু অবিরাম। আমাদের বাচ্চারা, আমাদের বাবা-মায়েরা আতঙ্কিত হন। সুযোগ পেলে বিদেশে চলে যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে বড় হয় আমাদের বাচ্চারা।

যারা নানা কারণে দেশে কিছু করতে পারেন না বা করতে চান না, তারা বিদেশ চলে যান। এর অন্যতম কারণ, এরা দেশে যতদিন থাকেন, ততদিন কোনোমতে পড়ে থাকেন। সুযোগ পেলেই উড়াল। দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বুয়েটের দিকে তাকালেও কিন্ত একথার প্রমাণ পাওয়া যায়। দেশের সেবা করার জন্য নয়, মনে হয় বুয়েটে ভর্তি হন দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। যাইহোক এর অন্যতম কারণ যে মনের অশান্তি, সেটা বলাই বাহুল্য । ছোটবেলা থেকে মনের অশান্তি নিয়ে বড় হওয়ার অন্যতম অনুঘটক হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের মিডিয়াগুলো। যত ছোট আমরা নিজের দেশকে মনে করি; যত অশান্তি মনে রাজ করে, ততখানি কি বাস্তবেও আছে? সুন্দরবনের বাঘ দিন দিন কমে গেলেও, মনের বাঘ যেন বেড়েই চলেছে।

আসলে বাংলাদেশ কি খুব খারাপ অবস্থায় আছে? নাকি আমরা বাস্তব পরিস্থিতি জানিনা? জানিনা, নাকি জানতে দেয়া হয়না? শুরু করব ভারত দিয়ে। আন্তর্জাতিক নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী, প্রতিবেশি ভারত থেকে বাংলাদেশ জেন্ডার গ্যাপ দূরীকরণে এবং ইনক্লুসিভ ইকোনমিক গ্রোথ রেট এ বেশ এগিয়ে আছে।

যেমন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ‘২০১৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক নানা ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণে সাফল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ৭২তম স্থানে অবস্থান করছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম স্থানে। সুইজারল্যান্ডের ডাভোস শহরে অনুষ্ঠিত ইকোনমিক ফোরামের ৫৩তম সম্মেলনে উপস্থাপিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে জেন্ডার গ্যাপ দূরীকরণে সাফল্য বিবেচনায় ভারতের অবস্থান ৮৭তম, চীনের অবস্থান ৯৯ এবং জাপানের অবস্থান ১১১ তম।  অন্যদিকে পাকিস্তান অবস্থান করছে ১৪৩তম স্থানে।

দারিদ্র বিমোচন, প্রাথমিক শিক্ষা, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য, স্যানিটেশন সুবিধা ইত্যাদি নানাসূচকে বাংলাদেশ ভারত থেকে ঢের এগিয়ে গেছে। যেমন- ‘অন্তর্ভুক্তিকর’ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সূচকে ভারত ও পাকিস্তান থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ১৬ ধাপ এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৭ সালের ‘ইনক্লোসিভ গ্রোথ অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট ইনডেক্স (আইডিআই)’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

ফোরামের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সামগ্রিক উন্নয়নের মানদণ্ডে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬তম। অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রতগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ ভারতের অবস্থান ৬০ এবং পাকিস্তানের ৫২তম।

‘আইডিআই’ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে হিমালয়ের দেশ নেপাল। প্রতিবেদন অনুযায়ী নেপালের অবস্থান ২৭তম। বিশ্বের ৭৯টি দেশ থেকে সংগৃহীত নানা তথ্য, উপাত্ত ও পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রতিবছর এই প্রতিবেদন তৈরি করে।

সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, জাত-পাতের বৈষম্য, কুসংস্কার, ধর্মীয় উন্মাদনা ইত্যাদি কয়েকটা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে ভারতের তুলনা করাই সমীচীন নয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ভারতের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করলে অনেকে রাগ করেন। আমি ইচ্ছে করেই করি। ভারতীয় ‘আধিপত্যবাদ’ এদেশে বহুল আলোচিত বিষয়। অন্যদিকে, ‘বাংলাদেশ কিছুই না’, এমন একটা ধারনা ভারতে ব্যাপক প্রচলিত। অনেকের কাছে ভারত  সন্দেহজনকভাবে আপন। অনেকে আছেন, ভারত শব্দটাই শুনতে চান না। দুইটার একটাও সমর্থনযোগ্য নয়। যাইহোক, মূল প্রসংগে আসি। জঙ্গিবাদ, জঙ্গিবাদ বলে সারাদিন মিডিয়া প্রচার করলেও পুরো বিশ্বের মানদণ্ডে বিচার করলে বাংলাদেশ এখনো অন্যতম সম্ভাবনাময় ও শান্তিপূর্ণ দেশ।

এত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যেমন ধরুন গ্লোবাল পিস ইনডেক্স’ ২০১৬ শীর্ষক প্রতিবেদন এর কথা। ভারতের অবস্থা বুরুন্ডি, সার্বিয়া কিংবা বুরকিনাফাসো এর মত রাষ্ট্র থেকেও খারাপ। শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় ১৬৩টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১৪১তম। ভারতের আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার ফলে ২০১৫ সালে ক্ষতির পরিমাণ ৬৮০ বিলিয়ন ডলার বলে সে রিপোর্টে জানায় অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট ফর পিস অ্যান্ড ইকনমিকস। সবচেয়ে বিপদজনক রাষ্ট্রের তালিকায় প্রথম স্থানে আছে সিরিয়া। তারপরে আছে সাউথ সুদান, ইরাক, আফগানিস্তান এবং সোমালিয়া।

বাংলাদেশের অবস্থা জানেন কত? ভারতের অবস্থান ১৪১তম, বাংলাদেশের ৮৩তম। বাংলাদেশ তাহলে কতধাপ এগিয়ে থাকল? বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় ভারত থেকে ৫৮ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উপরে আছে কেবল ভুটান (১৩তম) এবং নেপাল (৭৮)। অন্যদিকে শ্রীলংকার অবস্থান ৯৭ এবং পাকিস্তানের ১৫৩তম।

গ্লোবাল পিস ইনডেক্স নিয়ে ভারতের একটি পত্রিকা, হিন্দুস্তান টাইমস এর একটি প্রতিবেদন পড়লাম। প্রতিবেদনে ভুটানের নাম থাকলেও বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলংকার নামই দেয়নি পত্রিকাটি। তবে পাকিস্তানের নাম দিতে ভুলেনি পত্রিকা। বোঝাতে চেয়েছে পাকিস্তান থেকে ভারতের অবস্থান ভালো। আফগানিস্তানের নামও আছে হিন্দুস্তান টাইমস এর সেই প্রতিবেদনে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান ও  ছিল বলেই বোধহয়, ভারতে শান্তির চিত্র মুখে মুখে সবাই শান্তির পক্ষে। কিন্তু পৃথিবী যে ক্রমশ অশান্ত হচ্ছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ গ্লোবাল পিস ইনডেক্স রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় সম্পূর্ণভাবে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মুক্ত দেশ আছে পৃথিবীতে এখন মাত্র ১০টি।

মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, উদ্বাস্তু সংকটের সমাধান না হওয়া এবং বিশ্বের নানা দেশে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা সবকিছু মিলে  ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সাল ছিল তুলনামূলক কম শান্তিপূর্ণ বলে রিপোর্টে বলা হয়।  সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ৮১টি দেশ ২০১৫ সালের তুলনায় বেশি শান্তিপূর্ণ হয়েছে অন্যদিকে ৭৯টি দেশের পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

আইইপি এর গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের নতুন একটি প্রবণতায় দেখা গেছে, শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর অবস্থা ক্রমশ ভালোর দিকে গেছে, অন্যদিকে দ্বন্দ্ব-সংঘাতপূর্ণ  দেশগুলোর পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে গেছে।

বিশ্ব শান্তি পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে কারণ সম্পর্কে আইইপি প্রতিবেদনে বলেছে, ইরাক ও আফগানিস্তান এর সংকট সমাধান হয়নি। তদুপরি নতুন করে লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনে নতুন করে সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।

 

আগ্রাসন এবং গৃহযুদ্ধের ফলে পুরো বিশ্বে এক লাখ ১২ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে ২০১৬ সালে, যা ছিল গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। শুধুমাত্র  সিরিয়া, ইরাক এবং আফগানিস্তানেই নিহত হয়েছে ৭৫ শতাংশ মানুষ।

আইসল্যান্ড আবারো বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছে। এরপরেই আছে ডেনমার্ক, অষ্ট্রিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং পর্তুগাল। সিরিয়া  ২০১৫ সালের মত সর্বশেষ প্রতিবেদনেও সবচেয়ে কম শান্তির দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছে।  অঞ্চল হিসেবে, সবচেয়ে বেশি শান্তির অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ইউরোপ। শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায়  শীর্ষে থাকা ১০ টি দেশের ৭টিই যে ইউরোপ মহাদেশের।  তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগ্রাসন চালানোর জন্য ইউরোপের ব্রিটেন, ফ্রান্স  এবং বেলজিয়ামসহ কয়েকটি দেশের শান্তি পরিস্থিতি ছিল হুমকির মধ্যে।

গত দশবছর ধরে অস্ট্রেলিয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আইইপি বিশ্বের প্রায় ৯৯.৭ শতাংশ অঞ্চল থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ২৩ টি গুণবাচক এবং পরিমানবাচক নির্দেশক এর উপর ভিত্তি করে বছর-ভিত্তিক এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে।  ২০১৬ সালের রিপোর্টে ১৬৩টি দেশের তথ্য-উপাত্তের ব্যবহার করা হয়েছে।

নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষা করে কীভাবে সাংবাদিকতা করতে হয় তা শিখে ফেলেছে ভারতের সাংবাদিকরা। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। অতিরিক্ত নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করতে করতে বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে আর্থিকভাবে সক্ষম মানুষগুলোর মনে ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে এত ভালো ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছে যে, সবাই মরার আগে একবার ভারত যেতে চায়। আমাদের ডাক্তাররা সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে এত পরিশ্রম করেন, কিন্তু ইতিবাচক সংবাদ প্রচার হয়না বললেই চলে। ডাক্তারদের অবস্থা এদেশে এত খারাপভাবে তুলে ধরা হচ্ছে যে,  ডাক্তাররা এখন অনলাইন পত্রিকা খুলতে বাধ্য হয়েছেন। আমাদের টাকাওয়ালা রোগীদের ভাগিয়ে নিতে ভারতের ডাক্তার, সরকার, সংবাদমাধ্যম একযোগে কাজ করে। আমাদের মিডিয়ার একটা বড় অংশ বুঝে হোক, না বুঝে হোক সেখানে তাল দেয়।  বাংলাদেশে হাজার হাজার রোগী প্রতিদিন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন। কিন্তু জিজ্ঞেস করে দেখুন, দুনিয়ার অভিযোগ শুনতে হবে তখন। সব দোষ যেন ঐ ডাক্তারদের। প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, সরকার, রাষ্ট্রের যেন কোনো দায় নেই!

জঙ্গিবাদের খবর নিয়ে এত মাতামাতির দরকার নেই। গণমাধ্যমকে ইতিবাচক ও সৃজনশীল নানা উপাদান দিয়ে ব্যবহার করে মানুষের মনে, প্রজন্মের মনে শান্তি আনা দরকার। নিজেদের সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করতে পারলে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে। দেশপ্রেম তৈরি করতে হবে, মানুষের প্রতি দরদ তৈরি করতে হবে। শুধু ধর্ষণ, দুর্ঘটনা আর জঙ্গিবাদের সংবাদ প্রচার করে এটা সম্ভব না। এদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,  জাতীয় চার নেতা, এদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের সত্য ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা, সাধারণ মানুষের অসাধারণ হয়ে উঠার গল্প এগুলো বেশি বেশি প্রচার করুন। এদেশের মানুষের ধর্ম, দর্শনের প্রকৃত চিত্র, প্রকৃত বোধ তুলে ধরেন। একটু সৃজনশীল হোন। একটি দরদ দিয়ে, সাধারণ মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে সাংবাদিকতা করে দেখুন। পরিবর্তন আসবে। মানুষ শুধু ডাবিংকৃত বিজ্ঞাপন, লম্বা লম্বা আলাপ-অত্যাচার আর শুধুই নেতিবাচক সংবাদ নিতে পারছেনা। তাইতো বাধ্য হয়ে রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস টিপে শান্তি খুঁজছে ভারতীয় চ্যানেলে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৮৩, ভারত ১৪১, পাকিস্তান ১৫৩

আপডেট টাইম : ০৬:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০১৭

দেশের টেলিভিশন চ্যানেলসমূহে পারলে সারাদিনই জঙ্গিবাদের খবর প্রচার করা হচ্ছে। নিজস্ব কোনো আইডিয়া, বুদ্ধি ও গবেষণাপ্রসূত বিশেষ সংবাদ কিংবা বিনোদন-নির্ভর অনুষ্ঠান না থাকায় দেশের প্রায় সবকটি টিভি চ্যানেলই এখন নগদ ঘটনা আর ডাবিংকৃত ভারতীয় বিজ্ঞাপননির্ভর। কোনো একটা ঘটনার খবর পেলেই হল, দে ছুট। শুরু হয় লাইভ। পাল্লা দিয়ে ‘সাংবাদিকতা’ চালায় অনলাইন সংবাদপত্রগুলো। ঘরে-ঘরে, অফিসে-আদালতে, দোকানে, চায়ের আড্ডায়, হোটেলে, রেস্তোরায় মানুষ আতঙ্কিত হয়। এক পর্যায়ে সিআইএ-মোসাদের সৃষ্টি, তথাকথিত ‘আইএস’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ইহুদীদের প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টিলিজেন্স থেকে হামলার স্বীকারোক্তি দেয়। আমাদের টেলিভিশনগুলো নতুন উদ্যমে শুরু করে ‘আইএস’ এর প্রচার। আমাদের বাচ্চাদের কানে ‘জঙ্গি’, ‘আইএস’ শব্দগুলো প্রবেশ করে ধীরে ধীরে কিন্তু অবিরাম। আমাদের বাচ্চারা, আমাদের বাবা-মায়েরা আতঙ্কিত হন। সুযোগ পেলে বিদেশে চলে যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে বড় হয় আমাদের বাচ্চারা।

যারা নানা কারণে দেশে কিছু করতে পারেন না বা করতে চান না, তারা বিদেশ চলে যান। এর অন্যতম কারণ, এরা দেশে যতদিন থাকেন, ততদিন কোনোমতে পড়ে থাকেন। সুযোগ পেলেই উড়াল। দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বুয়েটের দিকে তাকালেও কিন্ত একথার প্রমাণ পাওয়া যায়। দেশের সেবা করার জন্য নয়, মনে হয় বুয়েটে ভর্তি হন দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। যাইহোক এর অন্যতম কারণ যে মনের অশান্তি, সেটা বলাই বাহুল্য । ছোটবেলা থেকে মনের অশান্তি নিয়ে বড় হওয়ার অন্যতম অনুঘটক হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের মিডিয়াগুলো। যত ছোট আমরা নিজের দেশকে মনে করি; যত অশান্তি মনে রাজ করে, ততখানি কি বাস্তবেও আছে? সুন্দরবনের বাঘ দিন দিন কমে গেলেও, মনের বাঘ যেন বেড়েই চলেছে।

আসলে বাংলাদেশ কি খুব খারাপ অবস্থায় আছে? নাকি আমরা বাস্তব পরিস্থিতি জানিনা? জানিনা, নাকি জানতে দেয়া হয়না? শুরু করব ভারত দিয়ে। আন্তর্জাতিক নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী, প্রতিবেশি ভারত থেকে বাংলাদেশ জেন্ডার গ্যাপ দূরীকরণে এবং ইনক্লুসিভ ইকোনমিক গ্রোথ রেট এ বেশ এগিয়ে আছে।

যেমন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ‘২০১৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক নানা ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণে সাফল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ৭২তম স্থানে অবস্থান করছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম স্থানে। সুইজারল্যান্ডের ডাভোস শহরে অনুষ্ঠিত ইকোনমিক ফোরামের ৫৩তম সম্মেলনে উপস্থাপিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে জেন্ডার গ্যাপ দূরীকরণে সাফল্য বিবেচনায় ভারতের অবস্থান ৮৭তম, চীনের অবস্থান ৯৯ এবং জাপানের অবস্থান ১১১ তম।  অন্যদিকে পাকিস্তান অবস্থান করছে ১৪৩তম স্থানে।

দারিদ্র বিমোচন, প্রাথমিক শিক্ষা, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য, স্যানিটেশন সুবিধা ইত্যাদি নানাসূচকে বাংলাদেশ ভারত থেকে ঢের এগিয়ে গেছে। যেমন- ‘অন্তর্ভুক্তিকর’ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সূচকে ভারত ও পাকিস্তান থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ১৬ ধাপ এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৭ সালের ‘ইনক্লোসিভ গ্রোথ অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট ইনডেক্স (আইডিআই)’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

ফোরামের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সামগ্রিক উন্নয়নের মানদণ্ডে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬তম। অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রতগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ ভারতের অবস্থান ৬০ এবং পাকিস্তানের ৫২তম।

‘আইডিআই’ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে হিমালয়ের দেশ নেপাল। প্রতিবেদন অনুযায়ী নেপালের অবস্থান ২৭তম। বিশ্বের ৭৯টি দেশ থেকে সংগৃহীত নানা তথ্য, উপাত্ত ও পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রতিবছর এই প্রতিবেদন তৈরি করে।

সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, জাত-পাতের বৈষম্য, কুসংস্কার, ধর্মীয় উন্মাদনা ইত্যাদি কয়েকটা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে ভারতের তুলনা করাই সমীচীন নয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ভারতের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করলে অনেকে রাগ করেন। আমি ইচ্ছে করেই করি। ভারতীয় ‘আধিপত্যবাদ’ এদেশে বহুল আলোচিত বিষয়। অন্যদিকে, ‘বাংলাদেশ কিছুই না’, এমন একটা ধারনা ভারতে ব্যাপক প্রচলিত। অনেকের কাছে ভারত  সন্দেহজনকভাবে আপন। অনেকে আছেন, ভারত শব্দটাই শুনতে চান না। দুইটার একটাও সমর্থনযোগ্য নয়। যাইহোক, মূল প্রসংগে আসি। জঙ্গিবাদ, জঙ্গিবাদ বলে সারাদিন মিডিয়া প্রচার করলেও পুরো বিশ্বের মানদণ্ডে বিচার করলে বাংলাদেশ এখনো অন্যতম সম্ভাবনাময় ও শান্তিপূর্ণ দেশ।

এত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যেমন ধরুন গ্লোবাল পিস ইনডেক্স’ ২০১৬ শীর্ষক প্রতিবেদন এর কথা। ভারতের অবস্থা বুরুন্ডি, সার্বিয়া কিংবা বুরকিনাফাসো এর মত রাষ্ট্র থেকেও খারাপ। শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় ১৬৩টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১৪১তম। ভারতের আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার ফলে ২০১৫ সালে ক্ষতির পরিমাণ ৬৮০ বিলিয়ন ডলার বলে সে রিপোর্টে জানায় অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট ফর পিস অ্যান্ড ইকনমিকস। সবচেয়ে বিপদজনক রাষ্ট্রের তালিকায় প্রথম স্থানে আছে সিরিয়া। তারপরে আছে সাউথ সুদান, ইরাক, আফগানিস্তান এবং সোমালিয়া।

বাংলাদেশের অবস্থা জানেন কত? ভারতের অবস্থান ১৪১তম, বাংলাদেশের ৮৩তম। বাংলাদেশ তাহলে কতধাপ এগিয়ে থাকল? বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় ভারত থেকে ৫৮ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উপরে আছে কেবল ভুটান (১৩তম) এবং নেপাল (৭৮)। অন্যদিকে শ্রীলংকার অবস্থান ৯৭ এবং পাকিস্তানের ১৫৩তম।

গ্লোবাল পিস ইনডেক্স নিয়ে ভারতের একটি পত্রিকা, হিন্দুস্তান টাইমস এর একটি প্রতিবেদন পড়লাম। প্রতিবেদনে ভুটানের নাম থাকলেও বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলংকার নামই দেয়নি পত্রিকাটি। তবে পাকিস্তানের নাম দিতে ভুলেনি পত্রিকা। বোঝাতে চেয়েছে পাকিস্তান থেকে ভারতের অবস্থান ভালো। আফগানিস্তানের নামও আছে হিন্দুস্তান টাইমস এর সেই প্রতিবেদনে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান ও  ছিল বলেই বোধহয়, ভারতে শান্তির চিত্র মুখে মুখে সবাই শান্তির পক্ষে। কিন্তু পৃথিবী যে ক্রমশ অশান্ত হচ্ছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ গ্লোবাল পিস ইনডেক্স রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় সম্পূর্ণভাবে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মুক্ত দেশ আছে পৃথিবীতে এখন মাত্র ১০টি।

মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, উদ্বাস্তু সংকটের সমাধান না হওয়া এবং বিশ্বের নানা দেশে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা সবকিছু মিলে  ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সাল ছিল তুলনামূলক কম শান্তিপূর্ণ বলে রিপোর্টে বলা হয়।  সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ৮১টি দেশ ২০১৫ সালের তুলনায় বেশি শান্তিপূর্ণ হয়েছে অন্যদিকে ৭৯টি দেশের পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

আইইপি এর গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের নতুন একটি প্রবণতায় দেখা গেছে, শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর অবস্থা ক্রমশ ভালোর দিকে গেছে, অন্যদিকে দ্বন্দ্ব-সংঘাতপূর্ণ  দেশগুলোর পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে গেছে।

বিশ্ব শান্তি পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে কারণ সম্পর্কে আইইপি প্রতিবেদনে বলেছে, ইরাক ও আফগানিস্তান এর সংকট সমাধান হয়নি। তদুপরি নতুন করে লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনে নতুন করে সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।

 

আগ্রাসন এবং গৃহযুদ্ধের ফলে পুরো বিশ্বে এক লাখ ১২ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে ২০১৬ সালে, যা ছিল গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। শুধুমাত্র  সিরিয়া, ইরাক এবং আফগানিস্তানেই নিহত হয়েছে ৭৫ শতাংশ মানুষ।

আইসল্যান্ড আবারো বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছে। এরপরেই আছে ডেনমার্ক, অষ্ট্রিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং পর্তুগাল। সিরিয়া  ২০১৫ সালের মত সর্বশেষ প্রতিবেদনেও সবচেয়ে কম শান্তির দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছে।  অঞ্চল হিসেবে, সবচেয়ে বেশি শান্তির অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ইউরোপ। শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায়  শীর্ষে থাকা ১০ টি দেশের ৭টিই যে ইউরোপ মহাদেশের।  তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগ্রাসন চালানোর জন্য ইউরোপের ব্রিটেন, ফ্রান্স  এবং বেলজিয়ামসহ কয়েকটি দেশের শান্তি পরিস্থিতি ছিল হুমকির মধ্যে।

গত দশবছর ধরে অস্ট্রেলিয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আইইপি বিশ্বের প্রায় ৯৯.৭ শতাংশ অঞ্চল থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ২৩ টি গুণবাচক এবং পরিমানবাচক নির্দেশক এর উপর ভিত্তি করে বছর-ভিত্তিক এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে।  ২০১৬ সালের রিপোর্টে ১৬৩টি দেশের তথ্য-উপাত্তের ব্যবহার করা হয়েছে।

নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষা করে কীভাবে সাংবাদিকতা করতে হয় তা শিখে ফেলেছে ভারতের সাংবাদিকরা। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। অতিরিক্ত নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করতে করতে বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে আর্থিকভাবে সক্ষম মানুষগুলোর মনে ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে এত ভালো ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছে যে, সবাই মরার আগে একবার ভারত যেতে চায়। আমাদের ডাক্তাররা সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে এত পরিশ্রম করেন, কিন্তু ইতিবাচক সংবাদ প্রচার হয়না বললেই চলে। ডাক্তারদের অবস্থা এদেশে এত খারাপভাবে তুলে ধরা হচ্ছে যে,  ডাক্তাররা এখন অনলাইন পত্রিকা খুলতে বাধ্য হয়েছেন। আমাদের টাকাওয়ালা রোগীদের ভাগিয়ে নিতে ভারতের ডাক্তার, সরকার, সংবাদমাধ্যম একযোগে কাজ করে। আমাদের মিডিয়ার একটা বড় অংশ বুঝে হোক, না বুঝে হোক সেখানে তাল দেয়।  বাংলাদেশে হাজার হাজার রোগী প্রতিদিন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন। কিন্তু জিজ্ঞেস করে দেখুন, দুনিয়ার অভিযোগ শুনতে হবে তখন। সব দোষ যেন ঐ ডাক্তারদের। প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, সরকার, রাষ্ট্রের যেন কোনো দায় নেই!

জঙ্গিবাদের খবর নিয়ে এত মাতামাতির দরকার নেই। গণমাধ্যমকে ইতিবাচক ও সৃজনশীল নানা উপাদান দিয়ে ব্যবহার করে মানুষের মনে, প্রজন্মের মনে শান্তি আনা দরকার। নিজেদের সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করতে পারলে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে। দেশপ্রেম তৈরি করতে হবে, মানুষের প্রতি দরদ তৈরি করতে হবে। শুধু ধর্ষণ, দুর্ঘটনা আর জঙ্গিবাদের সংবাদ প্রচার করে এটা সম্ভব না। এদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,  জাতীয় চার নেতা, এদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের সত্য ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা, সাধারণ মানুষের অসাধারণ হয়ে উঠার গল্প এগুলো বেশি বেশি প্রচার করুন। এদেশের মানুষের ধর্ম, দর্শনের প্রকৃত চিত্র, প্রকৃত বোধ তুলে ধরেন। একটু সৃজনশীল হোন। একটি দরদ দিয়ে, সাধারণ মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে সাংবাদিকতা করে দেখুন। পরিবর্তন আসবে। মানুষ শুধু ডাবিংকৃত বিজ্ঞাপন, লম্বা লম্বা আলাপ-অত্যাচার আর শুধুই নেতিবাচক সংবাদ নিতে পারছেনা। তাইতো বাধ্য হয়ে রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস টিপে শান্তি খুঁজছে ভারতীয় চ্যানেলে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়