বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ লুনার এক্লিপস টেস্ট বা চন্দ্রগ্রহণ পরীক্ষার অপেক্ষায় দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক যাত্রা। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর এ পরীক্ষা সম্পন্ন করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালাস এলেনিয়া। এরপর গ্রাহকদের কাছে সেবা পৌঁছানোর পালা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করতে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)। এর আগে আগামীকাল ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল কোম্পানিটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিএসসিএলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, লুনার এক্লিপস টেস্ট মূলত এক ধরনের পরীক্ষা যা দিয়ে স্যাটেলাইটের ব্যাটারির পূর্ণ সক্ষমতা যাচাই করা হয়। পৃথিবীতে চন্দ্রগ্রহণের মতো ওই দিন সূর্য এবং চাঁদের পেছনে এক সারিতে স্যাটেলাইটটি অবস্থান করবে। এ অবস্থায় স্যাটেলাইটের ব্যাটারি পুরো ডিসচার্জ করে ফেলা হবে। পরে আবার চার্জ হওয়ার পর সেগুলোর অবস্থা যাচাই করা হবে। এ পরীক্ষায় সফল হলে আগামী অক্টোবরের শুরুর দিকে গ্রাহকদের কাছে স্যাটেলাইটের সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গত ১১ মে (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ১২ মে) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ কেনাভেরালে স্পেস এক্সের উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ফ্যালকন-৯ রকেটে মহাকাশ যাত্রা করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। পরদিন ইন্দোনেশিয়ার সুমবা দ্বীপের ওপর দিয়ে উড়ে নিজ কক্ষপথের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চিত্র প্রকাশ করে স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান স্টাফ ল্যায়ার। প্রথম ধাপ ‘লঞ্চ এন্ড আরলি অরবিট ফেইজ (এলইওপি)’ সম্পন্ন করে গত ২৩ মে দ্বিতীয় ধাপ নিজ কক্ষপথে অবস্থান নেয় স্যাটেলাইটটি। সেখানে স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন ধরে গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চালানো হয়। ইন অরবিট টেস্টের মাধ্যমে তা শেষ করা হয়। এরপর স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপনের কাজ বা নেটওয়ার্ক এক্সেপটেন্স টেস্ট সম্পন্ন হয়।
এদিকে বাজারদরের চেয়ে কম দামে ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া দেয়ার নীতি নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ করে যাচ্ছে বিসিএসসিএল। বড় বড় গ্রাহকের পাশাপাশি ছোট গ্রাহকদেরও এ স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া দিতে আগ্রহ রয়েছে তাদের। এ প্রসঙ্গে বিসিএসসির জেনারেল ম্যানেজার বখতিয়ার আহমেদ জানান, আমরা প্রয়োজনীয় কাজগুলো আগেই সেরে রাখছি। ফ্রিকোয়েন্সির জন্য প্রাথমিক একটা দাম নির্ধারণ করেছি। তিনি বলেন, আমরা সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে যাচ্ছি। দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে। এরই মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিসিএসসিএলের একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, আমরা সরকারি-বেসরকারি বড় বড় গ্রাহকের কথাই শুধু ভাবছি না। বরং ভিস্যাট ব্যবহারকারীসহ অপেক্ষাকৃত ছোট গ্রাহকদেরও সেবা দিতে চাই।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি বর্তমানে গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি গাজীপুর ও বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশন দুটির নাম প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে করা হয়েছে। থ্যালাস এলেনিয়ার প্রকৌশলীদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা গ্রাউন্ড স্টেশনগুলোতে কাজ করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জনান, স্যাটেলাইট সব সময় তার অরবিটাল উইন্ডো থেকে বের হয়ে যেতে চেষ্টা করে। সেটাকে কক্ষপথে ঠিক রাখার জন্য গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে নির্দেশনা পাঠাতে হয়। আগামী ১৫ বছর ধরেই এ কাজ করতে হবে। এ জন্য মহাকাশে নির্ধারিত ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথে এটিকে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় স্থির রাখতে হবে। নইলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যাবে না।
গত বছরের ১৫ জানুয়ারি রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ২৮ মিলিয়ন ডলারে ১৫ বছরের জন্য অরবিটাল প্লট ভাড়া নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের খরচ ধরা হয় ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। তবে পরে এ ব্যয় কমে গিয়ে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকায় নেমে আসে।