ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোগ প্রতিরোধে অব্যর্থ দাওয়াই ভেষজ কালমেঘ

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ কালমেঘ আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসাবে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটি সবুজ চিরতা নামেও পরিচিত। কালমেঘ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। কালমেঘ পাতার উপকারিতা প্রচুর। এর অন্য প্রচলিত নাম আলুই। ঔষধি গুণের জন্য সংস্কৃতে একে ‘সর্ব রোগ নিবারণী ‘ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এর স্বাদ অত্যন্ত তিতকুটে, তাই একে ‘কিং অব বিটারনেস’ বলা হয়ে থেকে।

যে কোনও রকম জ্বর বা ক্রনিক ফিভার বা ভাইরাল ফিভার আমাদের শরীরকে খুব দুর্বল করে দেয়, এছাড়া এই সমস্ত রকম জ্বর আমাদের লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কালমেঘ পাতার রস শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়া জ্বরের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত লিভারকেও ঠিক করতে সাহায্য করে। এছাড়া এই পাতা ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। আরও অনেক গুণ রয়েছে কালমেঘের। জেনে নিন সেগুলো কী কী-

লিভারের সমস্যা নিরাময়ে- লিভারের সমস্যায় যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁদের জন্য অবর্থ ওষুধ কালমেঘ পাতার রস। এটিতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং হেপাটোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। লিভারের কোষের ক্ষয়ক্ষতি রোধে কালমেঘ পাতার রস কার্যকরূ। এটি দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি ভাইরাল সংক্রমণের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লিভার সম্পর্কিত যে কোনও সমস্যার সমাধানে প্রাকৃতিক ওষুধের কাজ করে এটি।

ইনফ্লুয়েঞ্জা মোকাবিলায় সাহায্য করে-সাধারণ জ্বরের প্রাকৃতিক প্রতিকারের কালমেঘ পাতার উপকারিতা রয়েছে। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে, প্রদাহ কমাতে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সুরক্ষা প্রদান করতে, পেটের সাথে সম্পর্কিত সমস্যার জন্য কালমেঘ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কালমেঘের ব্যবহারের ফলে পেটের গ্যাস, বদহজম, পেটের কৃমি ইত্যাদি দূর হয়।

ঠাণ্ডা লাগা থেকে বাঁচাতে-অনেকেরই বছরভর ঠাণ্ডা লাগার ধাত থাকে। গরমে ঘাম জমে সর্দি লেগে যায়। এই সমস্যার সমাধানেও কালমেঘ পাতার প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ইমিউনোমোডুলেটরি বৈশিষ্ট্য এক্ষেত্রে কাজে লাগে। নাক থেকে ক্রমাগত পানি ঝরলে কালমেঘ পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।

হালকা জ্বর, গলা ব্যাথা, সর্দির সমস্যাতেও প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কালমেঘ পাতার রস খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী। টনসিলের সমস্যা কারও কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী অস্বস্তির কারণ হয়ে যায়। খেতে পারেন না। গলায় ইনফেকশন হয়ে যায় অনেকের। এক্ষেত্রেও কালমেঘ পাতা উপকারী বন্ধুর ভূমিকা পালন করে।

প্রদাহজনিত রোগ সারাতে সাহায্য করে-কালমেঘ পাতার উপকারিতা এতটাই যে এটি আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো জটিল রোগ সারিয়ে দিতে পারে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যা বৃহদন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে। ইমিউন সিস্টেমের ভুল কাজ করার কারণে এটি ঘটে।

হৃদরোগ জনিত সমস্যায় সাহায্য করে-কালমেঘ উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় উপকারী হতে পারে। এটি পৃথক রক্তনালীগুলোতে রক্ত প্রবাহকে উন্নত করতে সহায়তা করে। কালমেঘের অ্যান্ড্রোগ্রাফোলাইডে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি লিপিড পারক্সিডেশনজনিত ক্ষতির বিরুদ্ধে রক্তনালীগুলো রক্ষা করে।

ত্বকের সমস্যা দূর করতে-কালমেঘ ত্বকের রোগ নিরাময়ে উপকারী হতে পারে। এটিতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি রক্ত পরিশোধনকারী ওষুধের করে। একই সঙ্গে কালমেঘ ত্বকের ফোঁড়া এবং চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কার্যকর হতে পারে।

কালমেঘ পাতা ডায়াবেটিস এর অব্যর্থ ওষুধ। এটি আমাদের শরীরে ব্লাড সুগার এর পরিমাণকে কম রাখতে সাহায্য করে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ মতো সেবন করা উচিত।

কালমেঘ পাতা আর্থারাইটিস ও গাউট (বাত) এর ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ১৫ থেকে ২০টি কালমেঘ পাতার রস করে প্রতিদিন খেলে আর্থারাইটিস বা গাউট এর সমস্যা থেকে দূরে থাকা যেতে পারে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

রোগ প্রতিরোধে অব্যর্থ দাওয়াই ভেষজ কালমেঘ

আপডেট টাইম : ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ কালমেঘ আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসাবে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটি সবুজ চিরতা নামেও পরিচিত। কালমেঘ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। কালমেঘ পাতার উপকারিতা প্রচুর। এর অন্য প্রচলিত নাম আলুই। ঔষধি গুণের জন্য সংস্কৃতে একে ‘সর্ব রোগ নিবারণী ‘ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এর স্বাদ অত্যন্ত তিতকুটে, তাই একে ‘কিং অব বিটারনেস’ বলা হয়ে থেকে।

যে কোনও রকম জ্বর বা ক্রনিক ফিভার বা ভাইরাল ফিভার আমাদের শরীরকে খুব দুর্বল করে দেয়, এছাড়া এই সমস্ত রকম জ্বর আমাদের লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কালমেঘ পাতার রস শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়া জ্বরের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত লিভারকেও ঠিক করতে সাহায্য করে। এছাড়া এই পাতা ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। আরও অনেক গুণ রয়েছে কালমেঘের। জেনে নিন সেগুলো কী কী-

লিভারের সমস্যা নিরাময়ে- লিভারের সমস্যায় যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁদের জন্য অবর্থ ওষুধ কালমেঘ পাতার রস। এটিতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং হেপাটোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। লিভারের কোষের ক্ষয়ক্ষতি রোধে কালমেঘ পাতার রস কার্যকরূ। এটি দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি ভাইরাল সংক্রমণের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লিভার সম্পর্কিত যে কোনও সমস্যার সমাধানে প্রাকৃতিক ওষুধের কাজ করে এটি।

ইনফ্লুয়েঞ্জা মোকাবিলায় সাহায্য করে-সাধারণ জ্বরের প্রাকৃতিক প্রতিকারের কালমেঘ পাতার উপকারিতা রয়েছে। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে, প্রদাহ কমাতে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সুরক্ষা প্রদান করতে, পেটের সাথে সম্পর্কিত সমস্যার জন্য কালমেঘ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কালমেঘের ব্যবহারের ফলে পেটের গ্যাস, বদহজম, পেটের কৃমি ইত্যাদি দূর হয়।

ঠাণ্ডা লাগা থেকে বাঁচাতে-অনেকেরই বছরভর ঠাণ্ডা লাগার ধাত থাকে। গরমে ঘাম জমে সর্দি লেগে যায়। এই সমস্যার সমাধানেও কালমেঘ পাতার প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ইমিউনোমোডুলেটরি বৈশিষ্ট্য এক্ষেত্রে কাজে লাগে। নাক থেকে ক্রমাগত পানি ঝরলে কালমেঘ পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।

হালকা জ্বর, গলা ব্যাথা, সর্দির সমস্যাতেও প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কালমেঘ পাতার রস খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী। টনসিলের সমস্যা কারও কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী অস্বস্তির কারণ হয়ে যায়। খেতে পারেন না। গলায় ইনফেকশন হয়ে যায় অনেকের। এক্ষেত্রেও কালমেঘ পাতা উপকারী বন্ধুর ভূমিকা পালন করে।

প্রদাহজনিত রোগ সারাতে সাহায্য করে-কালমেঘ পাতার উপকারিতা এতটাই যে এটি আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো জটিল রোগ সারিয়ে দিতে পারে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যা বৃহদন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে। ইমিউন সিস্টেমের ভুল কাজ করার কারণে এটি ঘটে।

হৃদরোগ জনিত সমস্যায় সাহায্য করে-কালমেঘ উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় উপকারী হতে পারে। এটি পৃথক রক্তনালীগুলোতে রক্ত প্রবাহকে উন্নত করতে সহায়তা করে। কালমেঘের অ্যান্ড্রোগ্রাফোলাইডে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি লিপিড পারক্সিডেশনজনিত ক্ষতির বিরুদ্ধে রক্তনালীগুলো রক্ষা করে।

ত্বকের সমস্যা দূর করতে-কালমেঘ ত্বকের রোগ নিরাময়ে উপকারী হতে পারে। এটিতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি রক্ত পরিশোধনকারী ওষুধের করে। একই সঙ্গে কালমেঘ ত্বকের ফোঁড়া এবং চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কার্যকর হতে পারে।

কালমেঘ পাতা ডায়াবেটিস এর অব্যর্থ ওষুধ। এটি আমাদের শরীরে ব্লাড সুগার এর পরিমাণকে কম রাখতে সাহায্য করে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ মতো সেবন করা উচিত।

কালমেঘ পাতা আর্থারাইটিস ও গাউট (বাত) এর ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ১৫ থেকে ২০টি কালমেঘ পাতার রস করে প্রতিদিন খেলে আর্থারাইটিস বা গাউট এর সমস্যা থেকে দূরে থাকা যেতে পারে।