বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পৃথিবীর অনেক দেশেই কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা প্রদান করা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকার মাধ্যমে গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তবে টিকা নিলে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে ও শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ করতে পারেন মনে করে প্রথমদিকে অনেকে টিকা নিতে ভয় পাচ্ছিলেন এবং এ নিয়ে জনমনে কিছুটা সংশয়ও কাজ করছিল। কিন্তু টিকা নিয়ে আসলে এরকম তীব্র ভয়ের কোনো কারণ নেই। প্রথমদিকের টিকা নিয়ে অযথা ভীতি এখন অনেকটাই কেটে গিয়েছে।
বলা যায়, উৎসাহ নিয়েই মানুষ এখন টিকা গ্রহণ করছেন। কোভিড-১৯ এর মতো যেকোনো সংক্রামক ব্যাধি নির্মূলের জন্য টিকাই হলো সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকরী ব্যবস্থা। অক্সফোর্ডের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, তাদের আবিষ্কৃত টিকা নেওয়ার পর তেমন কোনো জটিলতা সৃষ্টি হয় না। অর্থাৎ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার রেকর্ড নেই বললেই চলে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অন্যান্য টিকার মতোই স্বল্প সময়ের জন্য শুধু বাহুতে টিকা দেওয়ার স্থান কিছুটা ফুলে যাওয়া কিংবা চুলকানি, মৃদু শরীর ব্যথা, মাংসপেশী ও সন্ধিতে ব্যথা, কাঁপুনিসহ হালকা জ্বর কিংবা জ্বর-জ্বর ভাব, ক্লান্তিভাব, অবসাদ, মাথা ব্যথা, বমি ভাব প্রভৃতি হতে পারে।
কারো কারো অবশ্য হালকা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়াও হচ্ছে। চুলকানির পাশাপাশি চামড়ায় হালকা সাময়িক ফুসকুড়ির মতো দেখা দিচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে সপ্তাহখানেক পরে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাহুতে টিকা দেওয়ার জায়গা ফুলে যেতে পারে। বগলের নিচে লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়ার নজিরও রয়েছে বিশ্বের কোথাও কোথাও। তবে সবার ক্ষেত্রেই যে সমস্যাগুলো দেখা দেবে বিষয়টি এমনও নয়। তদুপরি এই মামুলি সমস্যাগুলো পরবর্তীতে এমনিতেই ঠিক হয়ে যায় এবং এসব প্রতিকারের ব্যবস্থা সাধারণ চিকিৎসায়ই সম্ভব। এজন্য কারো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ারও দরকার নেই।
সাধারণত ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব উপসর্গ দেখা দেয়। এগুলো কিন্তু সাময়িক এবং দুই-এক দিনের মধ্যেই এসব উপসর্গ চলে যায়। এখানে উল্লেখ্য, বয়স্কদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে বেশি। এর কারণ হলো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অনাক্রম্য তন্ত্রের রেসপন্স কিছুটা দুর্বল হয়ে আসে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো টিকা নেওয়ার পর মৃদু বা সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে যে শরীরের অনাক্রম্য তন্ত্র সক্রিয় হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর গত ১৩ মার্চ পর্যন্ত আমাদের দেশে টিকা নিয়েছেন ৪৩ লাখ ৪ হাজার ২৫৯ জন। এর মধ্যে মাত্র ৮৮৫ জনের শরীরে মৃদু ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো দেখা গেছে এবং কারো ক্ষেত্রেই কোনো তীব্র ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়নি।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করার জন্য টিকা নেওয়ার পর বাহুতে ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা বেশি হলে পরিষ্কার কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে প্রয়োগ করতে পারেন। এতে আরাম বোধ করবেন। এ ব্যথা দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। এ ছাড়া খুব বেশি ব্যথা কিংবা জ্বর এলে জ্বর ও ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধও সেবন করতে পারেন। পাশাপাশি হাতের হালকা ব্যায়ামও করতে পারেন। টিকা গ্রহণের পর যদি অবসন্নতা বা ক্লান্তি বোধ হতে থাকে, তবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। দরকার হলে একদিন ছুটি নিতে পারেন। শুয়ে থাকলেও মাঝেমধ্যে উঠে সামান্য হাঁটাহাঁটি করুন। টিকা নেওয়ার পর চাহিদা মাফিক পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
সেইসাথে অন্যান্য তরল জাতীয় খাবারও গ্রহণ করতে পারেন। কোনো অ্যালার্জি দেখা দিলে অ্যান্টি-হিস্টামিনজাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। তবে অ্যানাফাইল্যাক্সিস জাতীয় তীব্র অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার ঘটনা খুবই বিরল। আমাদের দেশে এমনটা এখনো দেখা না গেলেও কিছু দেশে দুই-এক জনের শরীরে এরকম প্রতিক্রিয়া হয়েছে। যদিও তা যথাযথভাবেই নিরাময় করা সম্ভব হয়েছে। যদি কারো এরকম তীব্র মাত্রায় অপ্রত্যাশিতভাবে কোনো অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে দেরী না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। টিকা নেওয়ার পর কারো লসিকাগ্রন্থি ফুলে গেলে সেক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। টিকা নেওয়ার পর টিকাকেন্দ্রের বিশ্রামকক্ষে ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এসময় অকারণে ছোটাছুটি করবেন না এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপও নেবেন না।
উল্লেখ্য, আপাতত গর্ভবতী মা ও ১৮ বছরের কম বয়সীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না। ভ্যাকসিন নিলেও সবাইকে মাস্ক পরা, হাত ধোয়াসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কারণ ভ্যাকসিনের পরিপূর্ণ কার্যকারিতার জন্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিনের পূর্ণাঙ্গ দুই ডোজই গ্রহণ করতে হবে এবং দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরে কমপক্ষে আর দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। আসলে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা না করে, করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে সবারই টিকা নেওয়া উচিত। তাই করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উৎকণ্ঠা কিংবা উদ্বেগ থাকলে তা ঝেরে ফেলে টিকা গ্রহণ করে নিজে সুরক্ষিত থাকুন এবং সুরক্ষিত রাখুন গোটা সমাজকে। তবেই আমরা ফিরে পেতে পারি করোনামুক্ত সময়ের আস্বাদ ও নিরাপদ রাখতে পারি সবাইকে।