বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ রহস্যময় এক রোগ। অতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় একদিনের মধ্যেই মৃত্যু হয় আক্রান্তদের। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইংল্যান্ডে এমনই একটি রহস্যজনক রোগ ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল ঘাম রোগে। ইতিহাসে আজও এটি ‘সুয়েটিং ডিজিজ বা ঘামজনিত রোগ’ নামে পরিচিত।
প্রিন্স আর্থার টিউডর এ রহস্যময় রোগে মৃত্যুবরণ করেন ১৫০২ সালে। তার মৃত্যুর পর অষ্টম হেনরির অশান্ত রাজত্বের সূচনা হয়েছিল। রোগটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক রহস্য হিসেবে আজও রয়ে গেছে। ৭০ বছরে টানা ৫ বার রোগটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। এতে মারা যায় হাজার হাজার মানুষ।
চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে ব্ল্যাক ডেথের মতোই ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়া রোগটি ছিল অনেক ভয়াবহ। এ রোগে মৃত্যুর হার ছিল ৩০-৫০ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টা হওয়ার আগেই ঘাম রোগে আক্রান্তরা মারা যান।
তবে যারা ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকতেন; তাদের ক্ষেত্রে আবার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। হেনরি অষ্টমের প্রধান উপদেষ্টা থমাস ক্রমওয়েল তিনবার আক্রন্ত হয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন এ রোগ থেকে।
এটি ভৌগোলিকভাবে ইংল্যান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। স্কটল্যান্ড, ওয়েলস বা সমুদ্র পেরিয়ে আয়ারল্যান্ডের সীমানায় খুব কমই ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানের মানুষ।
অন্যান্য মহামারির মতোই রোগটি বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য মরণব্যাধি হয়ে দাঁড়ায়। জ্বর এবং ঘাড়ে ব্যথা দিয়ে শুরু। তারপরে পিঠে এবং পেটে ব্যথা ও বমি হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভুক্তভোগীরা চরম শীত অনুভব করার পাশাপাশি অতিমাত্রায় জ্বরে ভুগতেন।
মৃত্যুর ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে ভুক্তভোগীরা ঘামতে শুরু করতেন। ঘাম ছিল খুবই দুর্গন্ধযুক্ত। ১৫৫৭ সালে হোলিনশেডের ক্রনিকলস একে ‘তীক্ষ্ণ ও মারাত্মক ঘাম’ বলে বর্ণনা করেছেন।
সাধারণত গ্রীষ্মের শেষের দিকে বা শরতের শুরুর দিকে এ রোগ দেখা দেয়। এটি প্রথমে ১৪৮৪ সালে এসেছিল। তবে ১৫০৮ সালে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। তারপর ১৫১৭, ১৫২৮ এবং ১৫৫১ সালে আসে আবার চলে যায়।
এ রহস্যময় রোগের উৎপত্তি কোথা থেকে তা আজও জানেন না ইতিহাসবিদরা। ১৪৮৫ সালে এর প্রাদুর্ভাব বসওয়ার্থ ফিল্ডের যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বলে ধারণা করেন গবেষকরা। লন্ডনে হেনরির সেনাবাহিনীর বিজয়ী প্রত্যাবর্তনের পরে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।
জানা যায়, ৬ সপ্তাহের মধ্যে ১৫ হাজার মানুষ এ রোগে মারা যায়। ১৫০২ সালে সম্ভবত হেনরির সপ্তম পুত্র এবং ইংরেজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স আর্থার টিউডর সম্ভবত এ রোগের কারণে তার ১৬তম জন্মদিনের কয়েক মাস আগে মারা যান।
বিজ্ঞানীরা ২০০২ সালে ওয়ার্সেস্টার ক্যাথেড্রালে আর্থারের মৃতদেহটি বের করেন পরীক্ষার জন্য। তবে তারা কোনো তথ্যই পাননি মৃতদেহ থেকে। তাদের ধারণা, গোলাপ যুদ্ধের সমাপ্তির সময়কার শীতল আবহাওয়ায় ইঁদুরের মাধ্যমেই বিষাক্ত এক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে মানুষের শরীরে।
ম্যাক্কাবির এইচ-এর ইতিহাসবিদ ইয়োসি রিমার বলেছিলেন, ‘সেসময় পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছিল এবং তারা বিশাল পরিমাণে কাঠ কাটা শুরু করেছিল। বনের মধ্যেই তারা হয়তো কোনো ভাইরাসের মুখোমুখি হয়েছিল।’
এ রোগের কিছু লক্ষণ ১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারির সঙ্গে মিলে যায়। ব্রাসেলসের কুইন অ্যাস্ট্রিড মিলিটারি হাসপাতালের গবেষকরা ২০১৩ সালে একটি নিবন্ধে হন্তাভাইরাস বলে এ রহস্যময় রোগটির নামকরণ করেন।