ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রীমঙ্গলে জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ টিকটিক করে ঘড়ির কাঁটা চলছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। আমরা সেই প্রহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছি নতুন গন্তব্যপানে। আমার সঙ্গে আছে সব্যসাচী গুপ্ত আর সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রণব স্যার।

আমরা এগিয়ে চলছি চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের পানে। সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের প্রায় আনাগোনা থাকে এখানে। তবে আমরা যাচ্ছি পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ দেখতে।

পথপ্রদর্শক হিসেবে আছেন প্রণব স্যার। মহাসড়কে বেপরোয়া বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধীরগতিতে এগিয়ে চলছি। সূর্যদেবের প্রভা বেশ তির্যকভাবে পড়েছে মহাসড়কে। লালাবাজার, তাজপুর, শেরপুর পাড়ি দিয়ে আমরা চলছি এগিয়ে। প্রায় একশ’ বিশ মিনিট ধরে আমরা পথে আছি।

এবার বিরতি নেয়ার পালা। কোথায় দাঁড়িয়ে পেট পূজা শেষ করে নেয়া যায়। স্যার প্রস্তাব দিলেন, চলুন পানসীতে সেরে নেই। স্যারের কথায় সবাই সায় দিল। যেই বলা সেই আমাদের পাইলট মশায় আমাদের চার চাকার যান পানসীতে নিয়ে অবতরণ করলেন। লোকে লোকারণ্য- বসার কোনো জায়গা নেই। নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছু সময়।

স্বল্প সময়ের মাঝে আমরা বসার আসন পেলাম। খাবারের অর্ডার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাঝে খাবার পরিবেশন করা হল। সাদা রুটি, সবজি, ডিম পোচ, পুডিং- সব আইটেম বেশ মুখরোচক। আমরা তৃপ্তিসহকারে খেয়ে বের হয়ে পড়লাম গন্তব্যপানে।

দেখতে দেখতে আমরা এসে পৌঁছলাম গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট-এর সামনে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট-এর বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলাম। অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আমরা এসে পৌঁছলাম জান্নাতুল ফেরদৌস-এর সদর দরজায়। প্রবেশদ্বার পেরিয়ে আমাদের প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হল। নাম অন্তর্ভুক্তির পর আমরা এগিয়ে গেলাম সম্মুখপানে। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ- নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা পেলাম, সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ- দেখতে দারুণ।

শতাধিক সিঁড়ি। এবারে আমাদের অনুরোধ করা হল, নগ্ন পায়ে সিঁড়ি বেয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা নগ্ন পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম। চারদিকে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে আবার সারি সারি চা বাগান।

আমরা গুনে গুনে একশ’ পঞ্চাশ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম মসজিদে। প্রণব স্যার বললেন, জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রহ.)’। মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান। প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে দেখা পেলাম নানা ধরনের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান।

সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদকে ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না জানা পাখিদের কিচিরমিচির- এক অন্য রকম পরিবেশ তৈরি করেছে।

দেখা পেলাম ওই এলাকার বাসিন্দা রইস সাহেবের সঙ্গে। তিনি বললেন, খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এ মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে।

দর্শনীয় এ মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এ খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রহ.)-এর উত্তরসূরি। মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্ট হাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এ চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া এখানে আছে একটি হেলিপ্যাডও। গেস্ট হাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

তাছাড়া মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে একবার ঘুরে যায়। এছাড়া প্রতি বছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদকে ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক উরস মাহফিলের। আমরা ঘুরে দেখতে লাগলাম মসজিদের চারপাশ। এ এক অন্যরকম অনুভূতি- বলে বোঝানো যাবে না।

কীভাবে যাবেন :

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট-এর বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ’ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

শ্রীমঙ্গলে জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ

আপডেট টাইম : ০৪:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ টিকটিক করে ঘড়ির কাঁটা চলছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। আমরা সেই প্রহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছি নতুন গন্তব্যপানে। আমার সঙ্গে আছে সব্যসাচী গুপ্ত আর সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রণব স্যার।

আমরা এগিয়ে চলছি চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের পানে। সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের প্রায় আনাগোনা থাকে এখানে। তবে আমরা যাচ্ছি পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ দেখতে।

পথপ্রদর্শক হিসেবে আছেন প্রণব স্যার। মহাসড়কে বেপরোয়া বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধীরগতিতে এগিয়ে চলছি। সূর্যদেবের প্রভা বেশ তির্যকভাবে পড়েছে মহাসড়কে। লালাবাজার, তাজপুর, শেরপুর পাড়ি দিয়ে আমরা চলছি এগিয়ে। প্রায় একশ’ বিশ মিনিট ধরে আমরা পথে আছি।

এবার বিরতি নেয়ার পালা। কোথায় দাঁড়িয়ে পেট পূজা শেষ করে নেয়া যায়। স্যার প্রস্তাব দিলেন, চলুন পানসীতে সেরে নেই। স্যারের কথায় সবাই সায় দিল। যেই বলা সেই আমাদের পাইলট মশায় আমাদের চার চাকার যান পানসীতে নিয়ে অবতরণ করলেন। লোকে লোকারণ্য- বসার কোনো জায়গা নেই। নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছু সময়।

স্বল্প সময়ের মাঝে আমরা বসার আসন পেলাম। খাবারের অর্ডার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাঝে খাবার পরিবেশন করা হল। সাদা রুটি, সবজি, ডিম পোচ, পুডিং- সব আইটেম বেশ মুখরোচক। আমরা তৃপ্তিসহকারে খেয়ে বের হয়ে পড়লাম গন্তব্যপানে।

দেখতে দেখতে আমরা এসে পৌঁছলাম গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট-এর সামনে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট-এর বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলাম। অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আমরা এসে পৌঁছলাম জান্নাতুল ফেরদৌস-এর সদর দরজায়। প্রবেশদ্বার পেরিয়ে আমাদের প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হল। নাম অন্তর্ভুক্তির পর আমরা এগিয়ে গেলাম সম্মুখপানে। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ- নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা পেলাম, সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ- দেখতে দারুণ।

শতাধিক সিঁড়ি। এবারে আমাদের অনুরোধ করা হল, নগ্ন পায়ে সিঁড়ি বেয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা নগ্ন পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম। চারদিকে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে আবার সারি সারি চা বাগান।

আমরা গুনে গুনে একশ’ পঞ্চাশ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম মসজিদে। প্রণব স্যার বললেন, জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রহ.)’। মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান। প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে দেখা পেলাম নানা ধরনের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান।

সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদকে ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না জানা পাখিদের কিচিরমিচির- এক অন্য রকম পরিবেশ তৈরি করেছে।

দেখা পেলাম ওই এলাকার বাসিন্দা রইস সাহেবের সঙ্গে। তিনি বললেন, খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এ মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে।

দর্শনীয় এ মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এ খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রহ.)-এর উত্তরসূরি। মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্ট হাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এ চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া এখানে আছে একটি হেলিপ্যাডও। গেস্ট হাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

তাছাড়া মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে একবার ঘুরে যায়। এছাড়া প্রতি বছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদকে ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক উরস মাহফিলের। আমরা ঘুরে দেখতে লাগলাম মসজিদের চারপাশ। এ এক অন্যরকম অনুভূতি- বলে বোঝানো যাবে না।

কীভাবে যাবেন :

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট-এর বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ’ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।