ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩৫ হাজার বছর পর মিলল মানুষের নির্মমতার চিহ্ন

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সম্প্রতি রাশিয়ার একটি গুহায় বরফ যুগের একটি ভাল্লুকের জীবাশ্ম পাওয়া যায়। গবেষকরা এক সময় খেয়াল করেন ভাল্লুকটির মাথার খুলির পেছনে একটি গর্ত রয়েছে। যা স্পষ্ট ধারণা দেয় যে কোনো আঘাতের ফলেই এই গর্তের সৃষ্টি। গবেষকরা ধারণা করছেন এটি দূর থেকে ছোঁরা বর্শার আঘাত হতে পারে। এতে আরো একটি ব্যাপার স্পষ্ট হয় যে, ওই অঞ্চলে মানুষের বসবাস ছিল।

ভাল্লুকটির দাঁত কার্বন ডেটিং করে জানা যায়, এটি একটি বাচ্চা ভাল্লুক ছিল। যেটির বয়স  ৩৫ হাজার বছরের বেশি। এই প্রজাতির ভাল্লুকের বাস ছিল প্লেইস্টোসিন গুহা ভালুক পশ্চিম ইউরোপ, রাশিয়ান ককেশাস এবং উরাল পর্বতমালায়। এই বাচ্চা ভাল্লুকটির ওজন ছিল ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ পাউন্ড। ইউরাল ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল ইউরাল পর্বতমালার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত বাশকরিয়া জাতীয় উদ্যানের ইমানায়ে গুহায় এই ভাল্লুকে খুলিটি খুঁজে পান।

মাথার পেছনের এই গর্ত মানুষের বর্শার আঘাতের বলে ধারণা করছেন গবেষকরা

মাথার পেছনের এই গর্ত মানুষের বর্শার আঘাতের বলে ধারণা করছেন গবেষকরা

ভেস্টনিক আর্কিওলজি, অ্যানথ্রোপোলজি আই এথনোগ্রাফি এ প্রকাশিত নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে , খুলির পিছনে একটি গর্ত রয়েছে যা প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে তৈরি হয়েছিল। তখন ভাল্লুকটির বয়স ছিল মাত্র ৯ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস এবং ইউরাল ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরাল শাখার গবেষণাগারের সিনিয়র গবেষক ড। দিমিত্রি গিমরনভ এক বিবৃতিতে বলেছিলেন যে প্রাণীর মাথার খুলির ছিদ্রটি বর্শার মাধ্যমে মৃত্যুর পরে হয়ে থাকতে পারে। তার মতে এটি ভাল্লুকটি মারা যাওয়ার পর প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট হয়ে থাকতে পারে। হাজার বছর ধরে গুহার ভেতরে পানি ফোঁটা পড়ার কারণে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ডক্টর গিমরানোভ বিশ্বাস করেন যে, সম্ভবত প্রাণীটিকে প্রাচীন লোকেরা হত্যা করেছিল। আর যদি তাই হয় তবে এটি মানুষের ভাল্লুক শিকার করার প্রথম প্রমাণ। এছাড়াও বরফ যুগ পার হয়েছে দুই দশমিক আট মিলিয়ন বছর আগে। তবে এই ভাল্লুকের বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে এটি বরফ যুগের সময়কার। রাশিয়ান গুহা থেকে উদ্ধার করা হাড়গুলোর মধ্যে রয়েছে লাল শিয়াল, ম্যামথ, গুহা সিংহ এবং উলি গণ্ডার।

ভাল্লুক ছাড়াও এখানে লাল শিয়াল, ম্যামথ, গুহা সিংহ এবং উলি গণ্ডারের হাড় পাওয়া যায়

ভাল্লুক ছাড়াও এখানে লাল শিয়াল, ম্যামথ, গুহা সিংহ এবং উলি গণ্ডারের হাড় পাওয়া যায়

গবেষকদের ধারণা, সেই সময় এই অঞ্চলে মানুষ বসবাসের জন্য এসেছিল। এরপর নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই তারা প্রাণী শিকার করত। মাংস খাওয়ার জন্য তারা স্তন্যপায়ী প্রাণীকেই বেশি প্রাধান্য দিত। যে কারণে ভাল্লুক শিকার করে থাকতে পারে। তারপরও আরো গবেষণা চলছে ভাল্লুকের মাথার খুলির গর্তটি তার জীবনকালে বা প্রাণীর মৃত্যুর পরে তৈরি হয়েছিল কিনা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

৩৫ হাজার বছর পর মিলল মানুষের নির্মমতার চিহ্ন

আপডেট টাইম : ০১:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সম্প্রতি রাশিয়ার একটি গুহায় বরফ যুগের একটি ভাল্লুকের জীবাশ্ম পাওয়া যায়। গবেষকরা এক সময় খেয়াল করেন ভাল্লুকটির মাথার খুলির পেছনে একটি গর্ত রয়েছে। যা স্পষ্ট ধারণা দেয় যে কোনো আঘাতের ফলেই এই গর্তের সৃষ্টি। গবেষকরা ধারণা করছেন এটি দূর থেকে ছোঁরা বর্শার আঘাত হতে পারে। এতে আরো একটি ব্যাপার স্পষ্ট হয় যে, ওই অঞ্চলে মানুষের বসবাস ছিল।

ভাল্লুকটির দাঁত কার্বন ডেটিং করে জানা যায়, এটি একটি বাচ্চা ভাল্লুক ছিল। যেটির বয়স  ৩৫ হাজার বছরের বেশি। এই প্রজাতির ভাল্লুকের বাস ছিল প্লেইস্টোসিন গুহা ভালুক পশ্চিম ইউরোপ, রাশিয়ান ককেশাস এবং উরাল পর্বতমালায়। এই বাচ্চা ভাল্লুকটির ওজন ছিল ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ পাউন্ড। ইউরাল ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল ইউরাল পর্বতমালার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত বাশকরিয়া জাতীয় উদ্যানের ইমানায়ে গুহায় এই ভাল্লুকে খুলিটি খুঁজে পান।

মাথার পেছনের এই গর্ত মানুষের বর্শার আঘাতের বলে ধারণা করছেন গবেষকরা

মাথার পেছনের এই গর্ত মানুষের বর্শার আঘাতের বলে ধারণা করছেন গবেষকরা

ভেস্টনিক আর্কিওলজি, অ্যানথ্রোপোলজি আই এথনোগ্রাফি এ প্রকাশিত নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে , খুলির পিছনে একটি গর্ত রয়েছে যা প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে তৈরি হয়েছিল। তখন ভাল্লুকটির বয়স ছিল মাত্র ৯ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস এবং ইউরাল ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরাল শাখার গবেষণাগারের সিনিয়র গবেষক ড। দিমিত্রি গিমরনভ এক বিবৃতিতে বলেছিলেন যে প্রাণীর মাথার খুলির ছিদ্রটি বর্শার মাধ্যমে মৃত্যুর পরে হয়ে থাকতে পারে। তার মতে এটি ভাল্লুকটি মারা যাওয়ার পর প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট হয়ে থাকতে পারে। হাজার বছর ধরে গুহার ভেতরে পানি ফোঁটা পড়ার কারণে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ডক্টর গিমরানোভ বিশ্বাস করেন যে, সম্ভবত প্রাণীটিকে প্রাচীন লোকেরা হত্যা করেছিল। আর যদি তাই হয় তবে এটি মানুষের ভাল্লুক শিকার করার প্রথম প্রমাণ। এছাড়াও বরফ যুগ পার হয়েছে দুই দশমিক আট মিলিয়ন বছর আগে। তবে এই ভাল্লুকের বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে এটি বরফ যুগের সময়কার। রাশিয়ান গুহা থেকে উদ্ধার করা হাড়গুলোর মধ্যে রয়েছে লাল শিয়াল, ম্যামথ, গুহা সিংহ এবং উলি গণ্ডার।

ভাল্লুক ছাড়াও এখানে লাল শিয়াল, ম্যামথ, গুহা সিংহ এবং উলি গণ্ডারের হাড় পাওয়া যায়

ভাল্লুক ছাড়াও এখানে লাল শিয়াল, ম্যামথ, গুহা সিংহ এবং উলি গণ্ডারের হাড় পাওয়া যায়

গবেষকদের ধারণা, সেই সময় এই অঞ্চলে মানুষ বসবাসের জন্য এসেছিল। এরপর নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই তারা প্রাণী শিকার করত। মাংস খাওয়ার জন্য তারা স্তন্যপায়ী প্রাণীকেই বেশি প্রাধান্য দিত। যে কারণে ভাল্লুক শিকার করে থাকতে পারে। তারপরও আরো গবেষণা চলছে ভাল্লুকের মাথার খুলির গর্তটি তার জীবনকালে বা প্রাণীর মৃত্যুর পরে তৈরি হয়েছিল কিনা।