ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কমে যাচ্ছে পেঁচার সংখ্যা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ “ভেবে ভেবে ব্যথা পাবো;_ মনে হবে পৃথিবীর পথে যদি থাকিতাম বেঁচে
দেখিতাম সেই লক্ষ্মী-পেঁচাটির মুখ যারে কোনোদিন ভালো করে দেখি নাই আমি_
এমনি লাজুক পাখি, _ ধূসর ডানা কি তার
কুয়াশার ঢেউয়ে ওঠে নেচে;
যখন সাতটি তারা ফুটে ওঠে অন্ধকারে
গাবের নিবিড় বুকে আসে সে কি নামি?”

প্রকৃতির কবি জীবনানন্দের আগে আর কেউ এভাবে পেঁচাকে পর্যবেক্ষণ করে থাকলে তাকে প্রাণিবিজ্ঞানীই বলতে হবে। আর বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য নামী-বেনামী পাখির ভিড়ে লোকালয় থেকে পালিয়ে থাকতে চাওয়া এই নিশাচর পাখিটিকে কবিতায় মর্যাদাপূর্ণ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে জীবনানন্দের মতো আর কেউই নেই। তার কবিতায় এই পেঁচার উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ে।

কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে যেভাবে পেঁচা দেখা যেতো এখন আর তেমন দেখা যায় না। দিন দিন এই পেঁচার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফসলের জন্য ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ, ব্যাঙ পেঁচার খাদ্য। তাই কৃষকের জন্য শত্রু এ প্রাণিগুলোকে মেরে ফসল ভালো রাখতে পেঁচার ভূমিকা অতুলনীয়। নিশাচর পাখি হওয়ায় শিকারের জন্য রাতের বেলা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়।

আমাদের দেশেও কয়েক প্রজাতির পেঁচা চোখে পড়ে। এদের মধ্যে হুতুম পেঁচা, লক্ষ্মী পেঁচা, নিমখোর পেঁচা, ভুতুম পেঁচা ইত্যাদি। পেঁচা নির্জন স্থানে থাকতে ভালবাসে। লক্ষ্মী পেঁচা ছাড়া অন্য প্রজাতির পেঁচা লোকারণ্যে দেখা যায় না। কৃষি প্রধান এলাকায় বসবাস করে থাকে লক্ষ্মী পেঁচা। কৃষকের মাঠের ফসল নষ্টকারী ইঁদুর ভক্ষণ করে অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে বালাই ব্যবস্থাপনা করে থাকে এই লক্ষ্মী পেঁচা। লক্ষ্মী পেঁচা সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষের পিঠের উপর বসে শিকার ধরতে দেখা যায়।

পেঁচার প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। একটি স্ত্রী পেঁচা ২ থেকে ৫টি ডিম দিয়ে থাকে। ডিমের রং গোলাকৃতি, সাদা। আর ১২ থেকে ১৪ দিন ডিমে তা দেবার পর বাচ্চা ফোটে। এরা মরা বাঁশ বা গাছের মাথায় বসতে পছন্দ করে। আর দিনের বেলায় এরা গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে। পেঁচার দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি খুবই প্রখর। অনেক দূরেও বেশ স্পষ্ট দেখতে পায় তারা।

রাতের অন্ধকারে দূরের জিনিষ দিনের আলোর মত পরিষ্কার দেখতে পায়। তবে মনে রাখতে হবে পেঁচা কাছের জিনিষ ভালমত দেখতে পায় না। কিন্তু শত্রুর আগমনের আগেই তারা টের পেয়ে যায়। পেঁচার চওড়া মাথা। পেঁচার চোখ অন্যান্য পাখির মতো মাথার পাশে বসান থাকে না। এদের চোখ আনেকটা মানুষের মতো সামনের দিকে। মাথা ঘুড়াতে পারে প্রায় ২৭০ ডিগ্রি কোণে। এই কারণেই পেঁচা দু’চোখ মেলে তাকালে অনেকে ভয় পায়।

নির্বিচারে বন জঙ্গল উজাড়, ফসলের ক্ষেতে ক্ষতিকর কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রা বৃদ্ধি, খাদ্য সংকট ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে কমে যাচ্ছে পেঁচাদের সংখ্যা। এ বিষয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

কমে যাচ্ছে পেঁচার সংখ্যা

আপডেট টাইম : ০১:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ “ভেবে ভেবে ব্যথা পাবো;_ মনে হবে পৃথিবীর পথে যদি থাকিতাম বেঁচে
দেখিতাম সেই লক্ষ্মী-পেঁচাটির মুখ যারে কোনোদিন ভালো করে দেখি নাই আমি_
এমনি লাজুক পাখি, _ ধূসর ডানা কি তার
কুয়াশার ঢেউয়ে ওঠে নেচে;
যখন সাতটি তারা ফুটে ওঠে অন্ধকারে
গাবের নিবিড় বুকে আসে সে কি নামি?”

প্রকৃতির কবি জীবনানন্দের আগে আর কেউ এভাবে পেঁচাকে পর্যবেক্ষণ করে থাকলে তাকে প্রাণিবিজ্ঞানীই বলতে হবে। আর বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য নামী-বেনামী পাখির ভিড়ে লোকালয় থেকে পালিয়ে থাকতে চাওয়া এই নিশাচর পাখিটিকে কবিতায় মর্যাদাপূর্ণ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে জীবনানন্দের মতো আর কেউই নেই। তার কবিতায় এই পেঁচার উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ে।

কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে যেভাবে পেঁচা দেখা যেতো এখন আর তেমন দেখা যায় না। দিন দিন এই পেঁচার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফসলের জন্য ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ, ব্যাঙ পেঁচার খাদ্য। তাই কৃষকের জন্য শত্রু এ প্রাণিগুলোকে মেরে ফসল ভালো রাখতে পেঁচার ভূমিকা অতুলনীয়। নিশাচর পাখি হওয়ায় শিকারের জন্য রাতের বেলা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়।

আমাদের দেশেও কয়েক প্রজাতির পেঁচা চোখে পড়ে। এদের মধ্যে হুতুম পেঁচা, লক্ষ্মী পেঁচা, নিমখোর পেঁচা, ভুতুম পেঁচা ইত্যাদি। পেঁচা নির্জন স্থানে থাকতে ভালবাসে। লক্ষ্মী পেঁচা ছাড়া অন্য প্রজাতির পেঁচা লোকারণ্যে দেখা যায় না। কৃষি প্রধান এলাকায় বসবাস করে থাকে লক্ষ্মী পেঁচা। কৃষকের মাঠের ফসল নষ্টকারী ইঁদুর ভক্ষণ করে অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে বালাই ব্যবস্থাপনা করে থাকে এই লক্ষ্মী পেঁচা। লক্ষ্মী পেঁচা সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষের পিঠের উপর বসে শিকার ধরতে দেখা যায়।

পেঁচার প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। একটি স্ত্রী পেঁচা ২ থেকে ৫টি ডিম দিয়ে থাকে। ডিমের রং গোলাকৃতি, সাদা। আর ১২ থেকে ১৪ দিন ডিমে তা দেবার পর বাচ্চা ফোটে। এরা মরা বাঁশ বা গাছের মাথায় বসতে পছন্দ করে। আর দিনের বেলায় এরা গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে। পেঁচার দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি খুবই প্রখর। অনেক দূরেও বেশ স্পষ্ট দেখতে পায় তারা।

রাতের অন্ধকারে দূরের জিনিষ দিনের আলোর মত পরিষ্কার দেখতে পায়। তবে মনে রাখতে হবে পেঁচা কাছের জিনিষ ভালমত দেখতে পায় না। কিন্তু শত্রুর আগমনের আগেই তারা টের পেয়ে যায়। পেঁচার চওড়া মাথা। পেঁচার চোখ অন্যান্য পাখির মতো মাথার পাশে বসান থাকে না। এদের চোখ আনেকটা মানুষের মতো সামনের দিকে। মাথা ঘুড়াতে পারে প্রায় ২৭০ ডিগ্রি কোণে। এই কারণেই পেঁচা দু’চোখ মেলে তাকালে অনেকে ভয় পায়।

নির্বিচারে বন জঙ্গল উজাড়, ফসলের ক্ষেতে ক্ষতিকর কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রা বৃদ্ধি, খাদ্য সংকট ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে কমে যাচ্ছে পেঁচাদের সংখ্যা। এ বিষয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।