ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেমন আছেন বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বাবারা

বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিশেষভাবে উৎসর্গ করে যে দিনটি পালন করা হয় তাকে বাবা দিবস বলে। আসলে বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না, তার পরও বিশেষভাবে স্মরণ করে রাখার জন্যই এ দিনটির আয়োজন।

পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই বাবা হচ্ছেন পরিবারের প্রধান। সন্তানের জন্য পরম আদর্শ আর নির্ভরতার অন্য নাম বাবা।

বটবৃক্ষের মতো ছায়া হয়ে আমাদের আগলে রাখেন আমৃত্যু। বাবাদের ভালোবাসা মায়ের মতো প্রকাশিত হয় না। নিজের সুখ বিলিয়ে দিয়ে তারা সন্তানের সুখ কেনেন। অথচ জীবনের পড়ন্ত বিকালে সন্তানের কাছে হয়ে ওঠেন বোঝা, বাড়তি ঝামেলা। এমনকি শেষ আশ্রয়স্থল হয় তখন বৃদ্ধাশ্রম!

এমন হতভাগা বাবা রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ঠাঁই হয়েছে গাজীপুরের মনিপুরের বৃদ্ধাশ্রমে।

জনপ্রিয় এই চিকিৎসক কাজ করেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অর্থ আর আভিজাত্যের কোনো অভাব ছিল না তার। দুই ছেলেকে বানিয়েছেন তার মতো চিকিৎসক। আর দুই ছেলেকে করেছেন প্রকৌশলী। নিজের পরিচয় আর অর্থ দিয়ে উন্নত জীবনের আশায় করে দিয়েছেন আমেরিকার ভিসা। আর ভিসায় যেন কাল হয়েছে। এই ছেলেরাই উন্নত জীবনের আশায় প্রিয় বাবাকে ছেড়ে মাকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেছে সুদূর আমেরিকা।

প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসের একদিন চেম্বার শেষ করে বাসায় ফিরেন চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম। এসে দেখেন বাড়িতে তালা দেওয়া। বাড়িতে কাউকে না পেয়ে তার ব্যক্তিগত চালক ও তিনি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে পাশের বাড়ির লোকজন জানায় তার পরিবারের সবাই চলে গেছেন আমেরিকায়। তখন যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।

সেই কষ্টে সেদিন রাতেই স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে পড়েন তিনি। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় চলে আসেন এই প্রবীণ নিবাসে। জীবনের বাকিটা সময় কাটিয়ে এখন শুধু মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি।

শুধু রফিকুল ইসলাম নয়। তার মতো প্রায় ২৫০ জন প্রবীণদের ঠাঁই হয়েছে গাজীপুরের মনিপুর প্রবীণ নিবাসে।

প্রবীণ নিবাসের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সন্তান আর পরিবারকে ভুলিয়ে রেখে যতটা পরিবারের মতো আনন্দ দেওয়া যায় তার কোনো কমতি রাখেন না তারা।

যতই প্রবীণ নিবাস তাদের পরিবারের কথা ভুলিয়ে রাখতে চান, সম্পর্কের এই মায়া আর পরিবারের সুখের অভাবে কাটে এই প্রবীণদের। সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিমাপ করতেও পারে না। বাবার প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শনে একদিন কিছুই নয়। তবু শুধুই তার জন্য একটি দিন, একটু আলাদা করে উদযাপন করতেই বাবা দিবস। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা। সব বাবারা ভালো থাকুন। আর কোনো বাবার ঠিকানা যেন বৃদ্ধাশ্রমে না হয়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

কেমন আছেন বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বাবারা

আপডেট টাইম : ০২:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩

বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিশেষভাবে উৎসর্গ করে যে দিনটি পালন করা হয় তাকে বাবা দিবস বলে। আসলে বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না, তার পরও বিশেষভাবে স্মরণ করে রাখার জন্যই এ দিনটির আয়োজন।

পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই বাবা হচ্ছেন পরিবারের প্রধান। সন্তানের জন্য পরম আদর্শ আর নির্ভরতার অন্য নাম বাবা।

বটবৃক্ষের মতো ছায়া হয়ে আমাদের আগলে রাখেন আমৃত্যু। বাবাদের ভালোবাসা মায়ের মতো প্রকাশিত হয় না। নিজের সুখ বিলিয়ে দিয়ে তারা সন্তানের সুখ কেনেন। অথচ জীবনের পড়ন্ত বিকালে সন্তানের কাছে হয়ে ওঠেন বোঝা, বাড়তি ঝামেলা। এমনকি শেষ আশ্রয়স্থল হয় তখন বৃদ্ধাশ্রম!

এমন হতভাগা বাবা রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ঠাঁই হয়েছে গাজীপুরের মনিপুরের বৃদ্ধাশ্রমে।

জনপ্রিয় এই চিকিৎসক কাজ করেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অর্থ আর আভিজাত্যের কোনো অভাব ছিল না তার। দুই ছেলেকে বানিয়েছেন তার মতো চিকিৎসক। আর দুই ছেলেকে করেছেন প্রকৌশলী। নিজের পরিচয় আর অর্থ দিয়ে উন্নত জীবনের আশায় করে দিয়েছেন আমেরিকার ভিসা। আর ভিসায় যেন কাল হয়েছে। এই ছেলেরাই উন্নত জীবনের আশায় প্রিয় বাবাকে ছেড়ে মাকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেছে সুদূর আমেরিকা।

প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসের একদিন চেম্বার শেষ করে বাসায় ফিরেন চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম। এসে দেখেন বাড়িতে তালা দেওয়া। বাড়িতে কাউকে না পেয়ে তার ব্যক্তিগত চালক ও তিনি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে পাশের বাড়ির লোকজন জানায় তার পরিবারের সবাই চলে গেছেন আমেরিকায়। তখন যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।

সেই কষ্টে সেদিন রাতেই স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে পড়েন তিনি। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় চলে আসেন এই প্রবীণ নিবাসে। জীবনের বাকিটা সময় কাটিয়ে এখন শুধু মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি।

শুধু রফিকুল ইসলাম নয়। তার মতো প্রায় ২৫০ জন প্রবীণদের ঠাঁই হয়েছে গাজীপুরের মনিপুর প্রবীণ নিবাসে।

প্রবীণ নিবাসের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সন্তান আর পরিবারকে ভুলিয়ে রেখে যতটা পরিবারের মতো আনন্দ দেওয়া যায় তার কোনো কমতি রাখেন না তারা।

যতই প্রবীণ নিবাস তাদের পরিবারের কথা ভুলিয়ে রাখতে চান, সম্পর্কের এই মায়া আর পরিবারের সুখের অভাবে কাটে এই প্রবীণদের। সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিমাপ করতেও পারে না। বাবার প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শনে একদিন কিছুই নয়। তবু শুধুই তার জন্য একটি দিন, একটু আলাদা করে উদযাপন করতেই বাবা দিবস। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা। সব বাবারা ভালো থাকুন। আর কোনো বাবার ঠিকানা যেন বৃদ্ধাশ্রমে না হয়।