দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন আক্রান্ত-মৃত্যু ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের সব রেকর্ড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ডেঙ্গু সংক্রমণের অন্যতম জটিলতা হলো রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়া। প্লাটিলেট কমতে কমতে বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, প্লাটিলেট ২০,০০০ এর নিচে নেমে গেলে শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি আছে। এমনকি মৃত্যও হতে পারে।
জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে প্লাটিলেটের মাত্রা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। রক্তে কমে যাওয়া প্লাটিলেটের পরিমাণ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কিছু খাবারের বিশেষ ভূমিকা আছে। ডেঙ্গু শনাক্ত হলে এ প্রতিবেদনে উল্লেখিত খাবারগুলো আপনার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন, এসব খাবার প্লাটিলেটের সংখ্যাকে নিরাপদ পর্যায়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
পেঁপে ও পেঁপের পাতা: গবেষণা দেখা গেছে, পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্তে কমে যাওয়া প্লাটিলেটের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পাকা পেঁপের জুসও প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে পারে। এ জন্য কারও রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে তাকে প্রতিদিন তাজা পেঁপে পাতা বেটে রস বের করে ১ চামচ করে দুই বেলা খাওয়ানোর পাশাপাশি পাকা পেঁপের জুসও খেতে দিতে পারেন।
পালংশাক: ডেঙ্গু রোগীদের ভিটামিন কে-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এর কারণ হলো, ভিটামিন কে-সমৃদ্ধ খাবার প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কমাতে পারে। পালংশাক ভিটামিন কে-পুষ্টিতে ভরপুর। ভিটামিন কে সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার খেলেও উপকার মিলবে, যেমন- ব্রোকলি ও বাঁধাকপি। এসব শাকসবজির ফোলেটও প্লাটিলেট বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে।
ডালিম: ডেঙ্গু রোগীর খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ডালিম রাখতে হবে। এটি প্লাটিলেটের সংখ্যাকে আর কমতে দেয় না এবং যা কমেছে তা দ্রুত পূরণ করে। তাই ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই প্রতিদিন ডালিম খাওয়া উচিত, যার ফলে প্লাটিলেটের কমে যাওয়া এড়ানো সম্ভব হবে। ডালিমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। এছাড়া এতে রোগ নিরাময়ের অন্যান্য উপাদানও আছে।
মিষ্টিকুমড়া ও কুমড়ার বীজ: মিষ্টিকুমড়ায় রয়েছে রক্তে প্লাটিলেট তৈরির উপাদান ভিটামিন ‘এ’। রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে তাই নিয়মিত মিষ্টিকুমড়া খাওয়া উপকারী। মিষ্টিকুমড়ার বীজেও রয়েছে প্লাটিলেট বৃদ্ধিকারী উপাদান। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কারণে রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে নিয়মিত মিষ্টিকুমড়া ও মিষ্টিকুমড়ার বীজ খেতে দিন।
বিটরুটের রস: লাল রঙের এই সবজি প্লাটিলেটের ফ্রি রেডিক্যাল জনিত ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে, যার ফলে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে বিপজ্জনক পর্যায়ে যায় না। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুত বাড়াতে প্রতিদিন বিটরুটের রস খেতে পারেন। সালাদ ও স্যূপেও বিটরুট খেতে পারেন।
আমলকী: আমলকীতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। ডেঙ্গু রোগীরা নিয়মিত আমলকী খেলে তাদের রক্তের প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। সেই সঙ্গে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
কমলা: কমলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে।ভিটামিন সি শরীরে প্লাটিলেটের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবারও ডেঙ্গু রোগীর জন্য সহায়ক হতে পারে, যেমন- লেবু, আমলকি, কাঁচামরিচ ও ক্যাপসিকাম।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া