ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুহোইরের মধ্যে মাচা বানাইয়া থাহি

আমার স্বামী মইরা গেছে ১৫ বছর হইছে। আমার একটা নাতি আছে ও আমার সাথে থাকে। এই নাতিরে লইয়া অনেক কষ্টে দিন কাটাই। একটা বাসা ভাড়া নিছিলাম হেয়াও পানিতে তলাইয়া যায়। তাছাড়া আয় রোজগারের কেউ না থাহায় ভাড়া দিতে পারছি না। এর আগে আমার ভাই বাসা ভাড়ার টাকা দিতো তিনি এখন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, এহন কই যামু, যাওয়ার কোনো পথ দেহি না। মোর মায়ে জায়গা পাইবো মামাবাড়ি। কিন্তু আমারে ঘর বানাইতে দেয়নায় বাড়িতে। যখন তাদের কাছে গেছি আমারে ধাক্কা মাইরা ফালাইয়া দিছে। বাঁশ খুটি ভাইঙ্গা ফালাইয়া দিয়ে ঘর বানাইতে দেয় নায়। এরপর আমার মামাতো ভাই সিদ্দিকুর রহমান বলেন, যদি জায়গা নেন তাহলে উপরে দিমু না পুহোইরের (পুকুর)  মধ্যে আছে সেখানে নেন। পরে আমি কি করমু আমার কপালে আছে এটা। পুকুরের মধ্যে বাঁশখুটি দিয়া মাচা বানাইয়া তিন মাস ধরে নাতিরে লইয়া থাহি।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন অসহায় বিধবা নারী মিনারা বেগম। মিনারা বেগমের বিয়ে হয়েছিল ফরিদপুরে। তার স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারণে যা জমি ছিল তা বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছেন।

মিনারা বেগমের বাবার বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের রাজ পাশা গ্রামে। সেখানে তাদের কোনো জমি নেই। তাই তিনি মামা বাড়িতে তার মায়ের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মামাতো ভাইরা তাকে জমি দিতে চাননি। তাই মায়ের পাওয়া জমিতে পুকুরের মধ্যে বাঁশ খুটি দিয়ে মাচা তৈরি করে পলিথিন দিয়ে গত তিনমাস ধরে বসবাস করছেন মিনারা বেগম ও তার নাতি নিরব সরদার।

মিনারা বেগম

মিনারা বেগম জানান, আমার কোনো ছেলে সন্তান নেই। একটা মেয়ে আছে তারও জামাই তাকে ছেড়ে দিছে। আমার মেয়ে চিটাগং থাকে। আমি তিন বছর হয়েছে নলছিটিতে এসেছি। মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কোনো কিছুই পাইনি। সরকারি ঘরের জন্য দুইবার আবেদন করেছি কিন্তু তাও কপালে জোটেনি। তাছাড়া বিধবা ভাতার জন্য গেছি, তারা বলছেন কোটা নাকি খালি নেই।

তিনি জানান, আমার নাতি নলছিটি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। ঘর না থাকায় সে অনেক কান্নাকাটি করে। বলে এভাবে থাকা যায় না। পড়াশোনা করতে কষ্ট হয়। নাতি যে চট্টগ্রাম গিয়ে লেখাপড়া করবে তার মায়ের কাছে সেখানে অনেক খরচ বেশি। এহন যদি কেউ আমারে সাহায্য সহযোগিতা বা থাকার জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে নাতিটাকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারি।

মাচার ওপর মিনারা বেগমের সংসার

নলছিটি পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বিধবা ওই মহিলা তার নাতিকে নিয়ে ৩ মাস ধরে এখানে বাঁশ খুটি মাচা বানিয়ে পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিয়ে পুকুরের ওপর থাকছেন।আসলে এটা মানুষ কতটা অসহায় হলে এভাবে বসবাস করছে তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমার কাছে আসলে আমি ফেইসবুক লাইভ দিলে বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। ঢাকার জসিম ভাই নামে এক সাংবাদিক তাদের দুই বান্ডিল টিন কিনে দিয়েছেন। আসলে তার দরকার থাকার মতো একটা ঘর।

এবিষয়ে মিনারা বেগমের মামাতো ভাইদের বাড়িতে না পাওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মাটির চুলায় ভাত রান্না করছেন মিনারা বেগম

নলছিটি উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, মিনারা বেগমের জাতীয় পরিচয় পত্র দেখে যদি উনি ভাতা পাওয়ার যোগ্য হন তাহলে অবশ্যই তাকে ভাতার আওতায় আনা হবে।

নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মিনারা বেগমের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি ওখানে যাবো। তার অবস্থা দেখবো। তার জন্য সরকারি সহয়তার ব্যবস্থা করা হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

পুহোইরের মধ্যে মাচা বানাইয়া থাহি

আপডেট টাইম : ০৩:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আমার স্বামী মইরা গেছে ১৫ বছর হইছে। আমার একটা নাতি আছে ও আমার সাথে থাকে। এই নাতিরে লইয়া অনেক কষ্টে দিন কাটাই। একটা বাসা ভাড়া নিছিলাম হেয়াও পানিতে তলাইয়া যায়। তাছাড়া আয় রোজগারের কেউ না থাহায় ভাড়া দিতে পারছি না। এর আগে আমার ভাই বাসা ভাড়ার টাকা দিতো তিনি এখন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, এহন কই যামু, যাওয়ার কোনো পথ দেহি না। মোর মায়ে জায়গা পাইবো মামাবাড়ি। কিন্তু আমারে ঘর বানাইতে দেয়নায় বাড়িতে। যখন তাদের কাছে গেছি আমারে ধাক্কা মাইরা ফালাইয়া দিছে। বাঁশ খুটি ভাইঙ্গা ফালাইয়া দিয়ে ঘর বানাইতে দেয় নায়। এরপর আমার মামাতো ভাই সিদ্দিকুর রহমান বলেন, যদি জায়গা নেন তাহলে উপরে দিমু না পুহোইরের (পুকুর)  মধ্যে আছে সেখানে নেন। পরে আমি কি করমু আমার কপালে আছে এটা। পুকুরের মধ্যে বাঁশখুটি দিয়া মাচা বানাইয়া তিন মাস ধরে নাতিরে লইয়া থাহি।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন অসহায় বিধবা নারী মিনারা বেগম। মিনারা বেগমের বিয়ে হয়েছিল ফরিদপুরে। তার স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারণে যা জমি ছিল তা বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছেন।

মিনারা বেগমের বাবার বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের রাজ পাশা গ্রামে। সেখানে তাদের কোনো জমি নেই। তাই তিনি মামা বাড়িতে তার মায়ের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মামাতো ভাইরা তাকে জমি দিতে চাননি। তাই মায়ের পাওয়া জমিতে পুকুরের মধ্যে বাঁশ খুটি দিয়ে মাচা তৈরি করে পলিথিন দিয়ে গত তিনমাস ধরে বসবাস করছেন মিনারা বেগম ও তার নাতি নিরব সরদার।

মিনারা বেগম

মিনারা বেগম জানান, আমার কোনো ছেলে সন্তান নেই। একটা মেয়ে আছে তারও জামাই তাকে ছেড়ে দিছে। আমার মেয়ে চিটাগং থাকে। আমি তিন বছর হয়েছে নলছিটিতে এসেছি। মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কোনো কিছুই পাইনি। সরকারি ঘরের জন্য দুইবার আবেদন করেছি কিন্তু তাও কপালে জোটেনি। তাছাড়া বিধবা ভাতার জন্য গেছি, তারা বলছেন কোটা নাকি খালি নেই।

তিনি জানান, আমার নাতি নলছিটি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। ঘর না থাকায় সে অনেক কান্নাকাটি করে। বলে এভাবে থাকা যায় না। পড়াশোনা করতে কষ্ট হয়। নাতি যে চট্টগ্রাম গিয়ে লেখাপড়া করবে তার মায়ের কাছে সেখানে অনেক খরচ বেশি। এহন যদি কেউ আমারে সাহায্য সহযোগিতা বা থাকার জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে নাতিটাকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারি।

মাচার ওপর মিনারা বেগমের সংসার

নলছিটি পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বিধবা ওই মহিলা তার নাতিকে নিয়ে ৩ মাস ধরে এখানে বাঁশ খুটি মাচা বানিয়ে পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিয়ে পুকুরের ওপর থাকছেন।আসলে এটা মানুষ কতটা অসহায় হলে এভাবে বসবাস করছে তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমার কাছে আসলে আমি ফেইসবুক লাইভ দিলে বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। ঢাকার জসিম ভাই নামে এক সাংবাদিক তাদের দুই বান্ডিল টিন কিনে দিয়েছেন। আসলে তার দরকার থাকার মতো একটা ঘর।

এবিষয়ে মিনারা বেগমের মামাতো ভাইদের বাড়িতে না পাওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মাটির চুলায় ভাত রান্না করছেন মিনারা বেগম

নলছিটি উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, মিনারা বেগমের জাতীয় পরিচয় পত্র দেখে যদি উনি ভাতা পাওয়ার যোগ্য হন তাহলে অবশ্যই তাকে ভাতার আওতায় আনা হবে।

নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মিনারা বেগমের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি ওখানে যাবো। তার অবস্থা দেখবো। তার জন্য সরকারি সহয়তার ব্যবস্থা করা হবে।