ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিলুপ্তির পথে জাতীয় ফুল শাপলার প্রাকৃতিক উৎপাদন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  পানির অভাবে দেশের জাতীয় ফুল শাপলার প্রাকৃতিক উৎপাদন বিলুপ্তির পথে। শাপলার জন্য বিখ্যাত নরসিংদীতে এখন এই ফুলটি তেমন মিলে না। জেলার অসংখ্য নদ-নদীখাল-বিলহাওর-বাঁওড়পুকুরসহ জলাশয় হ্রাস পাওয়া এবং ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে পানির শূন্যতা। এতে ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে শাপলা ফুলে উৎপাদন।

বাংলা নাম শাপলা ফুলইংরেজি নাম লিলিমনিপুরী ভাষায় থরোআংগৌরাতামিল ভাষায় ভেলাম্বালসংস্কৃত ভাষায় কুমুডাআসাম ভাষায় শাপলা ফুলকে নাল বলা হয়। শুধু বাংলাদেশ নয় শ্রীলংকায়ও জাতীয় ফুল এই শাপলা। শ্রীলংকায় শাপলাকে বলে নীল-মাহানেল। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ও এরিস্টটল এর এক শিষ্য থিউফ্রাস্টাস বলেছেনএটা একটি জলজ উদ্ভিদ যা প্রায় ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব পুরোনো।

নরসিংদীতে সাধারণত তিন প্রকার শাপলা ফুল দেখা যায়। সাদালালবেগুনি রঙের। এর মধ্যে সাদা শাপলা হলো বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। নরসিংদীর সর্বত্র অসংখ্য নদ-নদীখাল-বিলঝিলহাওর-বাঁওড়পুকুরসহ জলাশয়সমূহে দেখা যেত এই জলে ভাসা শাপলা ফুল। নরসিংদীতে কল-কারখানার বৃদ্ধিতে নদী-নালাখাল-বিলহাওর-বাঁওড় ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যাওয়ায় ক্রমশ হ্রাস পেয়ে যাওয়ায় এবং কৃষি জমিতে অধিক পরিমাণে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে জাতীয় ফুল শাপলা বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

নরসিংদী জেলার বেলাবমনোহরদীরায়পুরাশিবপুরপলাশসদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় কিছু লাল শাপলা দেখা গেলেও সাদাহলুদনীলবেগুনি শাপলা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এখনো দূর-দূরান্ত হতে আসা বিভিন্ন পর্যটকরা রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের হালদার ব্রিজশিবপুর উপজেলার দুলালপুর চিনাদী বিলমনোহরদী উপজেলার মাধুশাল বিলবেলাব উপজেলার বাবলা বিলআড়িয়াল খাঁ নদীতে লাল শাপলা দেখতে ভিড় জমায়। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিল জলাশয় ও নিচু জায়গায় পানি জমা থাকলে সেখানেই প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা।

কিছুদিন আগেও বেলাব উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে শাপলা ফুল দেখা যেত। তখন পুকুর খাল বিল ও জলাশয়গুলোতে লালসাদাবেগুনি ও বিরল প্রজাতির হলুদ শাপলা ফোঁটার কারণে চারিদিকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যে পরিণত হতো।

নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে লাল প্রজাতির শাপলা দেখা গেলেও দেখা যাচ্ছে না সাদাগোলাপীবেগুনিনীল ও হলুদ শাপলা। এসব শাপলা হারিয়ে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলে মনে করে নরসিংদী সচেতন মহল। কারো কারো মতে মেঘনাব্রহ্মপুত্রআড়িয়াল খাঁ নদীগুলোর নাব্য হ্রাসভূমিদস্যুদের জলাশয় ভরাট করে কৃষিজমি তৈরিঘর-বাড়ি তৈরিফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নরসিংদী থেকে জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যেতে বসেছে।

এক সময়ে নরসিংদীর ঝিলে বিলে পুকুরে বর্ষা মৌসুমে নানা রঙের শাপলার বাহারি রূপ মানুষের নয়ন জুড়িয়ে যেত। কিন্তু এখন আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে বসে নয়নাভিরাম সেই দৃশ্য।

শাপলা ছোটদের খুব প্রিয়। শাপলার ভ্যাট বাচ্চাদের প্রিয় খাদ্য এবং গ্রামের লোকেরা ভ্যাট দিয়ে খই ভেজে মোয়াসহ বিভিন্ন প্রকার সুস্বাদু খাবার তৈরি করে। নরসিংদীর গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও খুব জনপ্রিয় এই শাপলা। অনেকে আবার শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এছাড়া লাল শাপলার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। যেমন শাপলার মূল কাণ্ড খেলে আমাশয়ের মতো রোগ ভালো হয় বলে জানা যায়।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আমাদের জাতীয় স্বার্থে শাপলা ফুলকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এখনই এ ব্যাপারে উদ্যোগী না হলে এক সময় হারিয়ে যাবে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ও জাতীয় ফুল শাপলা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বিলুপ্তির পথে জাতীয় ফুল শাপলার প্রাকৃতিক উৎপাদন

আপডেট টাইম : ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  পানির অভাবে দেশের জাতীয় ফুল শাপলার প্রাকৃতিক উৎপাদন বিলুপ্তির পথে। শাপলার জন্য বিখ্যাত নরসিংদীতে এখন এই ফুলটি তেমন মিলে না। জেলার অসংখ্য নদ-নদীখাল-বিলহাওর-বাঁওড়পুকুরসহ জলাশয় হ্রাস পাওয়া এবং ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে পানির শূন্যতা। এতে ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে শাপলা ফুলে উৎপাদন।

বাংলা নাম শাপলা ফুলইংরেজি নাম লিলিমনিপুরী ভাষায় থরোআংগৌরাতামিল ভাষায় ভেলাম্বালসংস্কৃত ভাষায় কুমুডাআসাম ভাষায় শাপলা ফুলকে নাল বলা হয়। শুধু বাংলাদেশ নয় শ্রীলংকায়ও জাতীয় ফুল এই শাপলা। শ্রীলংকায় শাপলাকে বলে নীল-মাহানেল। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ও এরিস্টটল এর এক শিষ্য থিউফ্রাস্টাস বলেছেনএটা একটি জলজ উদ্ভিদ যা প্রায় ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব পুরোনো।

নরসিংদীতে সাধারণত তিন প্রকার শাপলা ফুল দেখা যায়। সাদালালবেগুনি রঙের। এর মধ্যে সাদা শাপলা হলো বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। নরসিংদীর সর্বত্র অসংখ্য নদ-নদীখাল-বিলঝিলহাওর-বাঁওড়পুকুরসহ জলাশয়সমূহে দেখা যেত এই জলে ভাসা শাপলা ফুল। নরসিংদীতে কল-কারখানার বৃদ্ধিতে নদী-নালাখাল-বিলহাওর-বাঁওড় ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যাওয়ায় ক্রমশ হ্রাস পেয়ে যাওয়ায় এবং কৃষি জমিতে অধিক পরিমাণে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে জাতীয় ফুল শাপলা বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

নরসিংদী জেলার বেলাবমনোহরদীরায়পুরাশিবপুরপলাশসদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় কিছু লাল শাপলা দেখা গেলেও সাদাহলুদনীলবেগুনি শাপলা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এখনো দূর-দূরান্ত হতে আসা বিভিন্ন পর্যটকরা রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের হালদার ব্রিজশিবপুর উপজেলার দুলালপুর চিনাদী বিলমনোহরদী উপজেলার মাধুশাল বিলবেলাব উপজেলার বাবলা বিলআড়িয়াল খাঁ নদীতে লাল শাপলা দেখতে ভিড় জমায়। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিল জলাশয় ও নিচু জায়গায় পানি জমা থাকলে সেখানেই প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা।

কিছুদিন আগেও বেলাব উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে শাপলা ফুল দেখা যেত। তখন পুকুর খাল বিল ও জলাশয়গুলোতে লালসাদাবেগুনি ও বিরল প্রজাতির হলুদ শাপলা ফোঁটার কারণে চারিদিকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যে পরিণত হতো।

নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে লাল প্রজাতির শাপলা দেখা গেলেও দেখা যাচ্ছে না সাদাগোলাপীবেগুনিনীল ও হলুদ শাপলা। এসব শাপলা হারিয়ে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলে মনে করে নরসিংদী সচেতন মহল। কারো কারো মতে মেঘনাব্রহ্মপুত্রআড়িয়াল খাঁ নদীগুলোর নাব্য হ্রাসভূমিদস্যুদের জলাশয় ভরাট করে কৃষিজমি তৈরিঘর-বাড়ি তৈরিফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নরসিংদী থেকে জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যেতে বসেছে।

এক সময়ে নরসিংদীর ঝিলে বিলে পুকুরে বর্ষা মৌসুমে নানা রঙের শাপলার বাহারি রূপ মানুষের নয়ন জুড়িয়ে যেত। কিন্তু এখন আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে বসে নয়নাভিরাম সেই দৃশ্য।

শাপলা ছোটদের খুব প্রিয়। শাপলার ভ্যাট বাচ্চাদের প্রিয় খাদ্য এবং গ্রামের লোকেরা ভ্যাট দিয়ে খই ভেজে মোয়াসহ বিভিন্ন প্রকার সুস্বাদু খাবার তৈরি করে। নরসিংদীর গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও খুব জনপ্রিয় এই শাপলা। অনেকে আবার শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এছাড়া লাল শাপলার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। যেমন শাপলার মূল কাণ্ড খেলে আমাশয়ের মতো রোগ ভালো হয় বলে জানা যায়।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আমাদের জাতীয় স্বার্থে শাপলা ফুলকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এখনই এ ব্যাপারে উদ্যোগী না হলে এক সময় হারিয়ে যাবে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ও জাতীয় ফুল শাপলা।