বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সচেতনতার অভাবে আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধীদের এখনো অনেকে বোঝা মনে করেন, অনেকে আবার অজ্ঞতায় ভাবে প্রতিবন্ধীরা অভিশাপ। তাদের দিয়ে হয়তো ভালো কিছু করাও সম্ভব না। কিংবা সমাজের জন্য ভালো কিছু করার মতো তেমন কোনো সামর্থ্যও নেই তাদের। আমাদের ঘুনে ধরা সমাজটাতে এসব ধারণা নেহাতই কল্পনা নয়, বরং খুবই বাস্তব।
আমরা যখন আনাদরে বাহ্যিক দৃষ্টিতে না দেখে অন্তরদৃষ্টিতে একজন প্রতিবন্ধীকে দেখার চেষ্টা করি তখন বুঝতে পারি একজন প্রতিভাবান যোগ্য মানুষকে এত দিন আমরা চোখের সামনে রেখেও দেখতে পাইনি। আর এ রকমই একজন মানুষ আতিকুল ইসলাম আতিক। প্রতিবন্ধীরা যে সুযোগ আর একটু সহযোগিতা পেলেই মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে তারই জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ আতিক।
সমাজের অন্যান্য সব মানুষের মতো হয়তো সম্পূর্ণ না আতিক, কিন্তু অসম্পূর্ণ হওয়ার দুর্ভাগ্যও তাকে থামাতে পারেনি। মনোবল আর সাহস যার সঙ্গী, তাকে ঠেকায় কার সাধ্য! বরং আতিকের কাছেই পরাস্ত হয়েছে সকল বাধা, সকল বিপত্তি।
একসময়ে অজপাড়া গাঁয়ে সকলের কাছে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হওয়া আতিক আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববদ্যিালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং এর গ্র্যাজুয়েট। ছোটবেলায় গ্রামের লোকাজন তাকে অবহেলা করত, তাচ্ছিল্য করত অথবা করত করুণা। কিন্তু সেদিনের সেই আতিক প্রমাণ করে দিয়েছেন অবহেলা আর ঠাট্টার জবাব মুখে নয়, দিতে হয় নিজের কাজ দিয়ে। নিজের মেধায়, নিজের যোগ্যতায় আতিক নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছেন।
বাবা-মায়ের উৎসাহ আর নিজের আগ্রহে ২০০৮ সালে কাটাখালী হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হন আতিক। ২০১০ সালে উচ্চমাধ্যমিকে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে মেধা তালিকায় ৩৬ তম হয়ে ভর্তি হয়ছিলেন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগে।
শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যখন তার আগমন সকলইে ভাবত তাকে দিয়ে হয়তো এ জীবনে কিছুই হবে না। কিন্তু সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বিবিএ বিভাগে প্রথম শ্রেণি নিয়ে স্নাতক শেষ করেছেন তিনি। এখন পড়ছেন এমবিএতে।
মেধা নয় শুধু, মনন আর গুণপনায় কম যায় না আতিক পড়ালেখার পাশাপাশি বিতর্ক, আবৃত্তি, গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কারও জিতেছেন। সৎসঙ্গ নামে একটি স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছেন আতিক যেখানে প্রায় ২০০ ছেলে মেয়ে পড়ালেখা করে।
শুধু বাচ্চাদের স্কুলই নয় আতিক ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে চান। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোনো সংগঠন নেই বলে তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। আতিক তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও কাজ করতে চান।
সবশেষে বললেন নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। বললেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করব। একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই আমি। বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এডমিন ক্যাডারে চাকরি করার ইচ্ছে আমার। সেই পথেই দিন-রাত হাঁটছি।