বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশে দুধের জন্য শংকর জাতের গরু পালন করা হলেও এই প্রথম মাংস বৃদ্ধির জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ আমেরিকা থেকে সিমেন এনে ব্রাহমা জাতের গরু পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। মাত্র ৩ বছর বয়সে এ জাতের ষাঁড় গরু পালনে ওজন দাঁড়াবে ১ টন (২৭ মণ)। এবং বিক্রি করা যাবে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।
বাংলাদেশে প্রথম টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় এমনই এক আধুনিক মাংসল জাতের গরু পালনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উদ্যোগে সখীপুর উপজেলায় ২০০ জন খামারিকে নির্বাচন করে পাঁচ শতাধিক গাভিকে প্রজনন দেওয়া হয়। এরইমধ্যে ১৪৫টি বাছুর জন্মেছে। মাত্র দুই থেকে আড়াই বছর বয়সী ষাঁড় ও বকনা বাছুরগুলো মাকে ছাপিয়ে অনেক উঁচু হয়েছে। মায়ের চেয়ে আকারে বেশ বড়, আবার দুই থেকে আড়াই বছরের বাছুরের ওজন মিলেছে ৭৬০ থেকে ৭৪০ কেজি! গায়ে-গতরে তাগড়া এই গরুর জাতের নাম ব্রাহমা।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের মাংসের ঘাটতি দূর করার জন্য ২০০৮ সালে আমেরিকা থেকে উন্নত ব্রাহমা জাতের গরুর সিমেন নিয়ে এসে নির্বাচিত দেশীয় জাতের গাভিকে প্রজনন দিয়ে এই জাতের গরু পালন করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই থেকে প্রায় আড়াই বছর বয়সের বাছুরগুলোর ওজন হয়েছে ৭৪০ থেকে ৭৬০ কেজি। বিরাট আকৃতির নাদুস-নুদুস গরুগুলোর এখনো শিং গজায়নি। পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গড়গোবিন্দপুর গ্রামের আখতার হোসেন ব্রাহমা জাতের গরু পালন করছেন। তার দুই বছর চার মাস (২৮মাস) বয়সী ষাঁড় বাছুরটির ওজন হয়েছে ৭৬০ (১৯ মণ) কেজি।
তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে আঁখি গরুটির দেখভাল করেন। আঁখি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সদস্য ষাঁড়টি খুবই শান্ত স্বভাবের। পড়াশোনার ফাঁকে মাঝেমধ্যে আমি এই ষাঁড়ের খাবার-দাবার আর যত্নের পেছনে ব্যয় করি। ভালোবেসে নাম দিয়েছি ‘মধু’। ষাঁড়টি এখন আমার প্রিয় বন্ধু। চলতি বছরের জুনে এই জাতের আরো একটি ষাঁড় বাছুর আমাদের পরিবারের সদস্য হয়েছে। ওকেও খুব আদর-সোহাগে নাম রেখেছেন ‘রাজা’। এখন আমার দু’টি প্রিয় বন্ধু।’
খামারি আখতার হোসেন বলেন, ‘এই ষাঁড় গরুটি দেখার জন্য টাঙ্গাইল জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও রাজধানী থেকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের বাড়িতে এসেছেন। ফোন নম্বর নিয়ে যান। ষাঁড়টি কিভাবে পালন করছি কিংবা এর ওজন কত কেজিতে দাঁড়িয়েছে এসব জানতে চেয়ে কত মানুষই যে ফোন করে তার ইয়ত্তা নেই।’
খামারিরা জানান, এই গরু পালন করে তারা খুবই খুশি। দেশি গরুর মতো এই গরু সবকিছুই খায়। এই গরু পালন খুবই লাভজনক মনে হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম শেখ মানিক বলেন, ‘প্রকল্পের অধীনে গরু লালন-পালনের জন্য আমরা খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ওষুধপত্র, ভ্যাকসিন বিনামূল্যে সরবরাহ করছি। ১৮ মাস পর এই গরুর মাংস খাওয়ার উপযোগী হবে। খামারিরা এই গরু লালন-পালন করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।’
এ ব্যাপারে সখীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম উকিল উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বছরে একজন মানুষের ৮১ কেজি মাংসের চাহিদা রয়েছে। সেই হিসেবে দেশে মাংসের চাহিদা ৬.৪ মিলিয়ন টন। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১.৪ মিলিয়ন টন। জনপ্রতি মাংস পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৭.৩ কেজি।
বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী ব্রাহমা দেশে আমিষের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানান, ৩ বছর বয়সী ১ টন ওজনের ষাঁড় কিংবা বকনা গরু খামারিরা ৪ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ জাতের গরু ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও স্বাভাবিক আচরণ ও খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। অন্যান্য জাতের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন এই গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণও কম।