বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আমাদের বাঙালি জাতির আছে আন্দোলন-সংগ্রামের এক দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস। যার শেকড়ে প্রোথিত রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। এক সময় সেই আন্দোলন সফল হলো। এরপর ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আর তার পরেই সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বর্ণালী ইতিহাস।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা পেলাম মুক্ত-স্বাধীন বাংলাদেশ। আর পেলাম এক মহানায়ককে। যিনি তার প্রজ্ঞা, চিন্তা-চেতনা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে বাঙালি জাতিকে তুলে আনলেন ‘শেকড় থেকে শিখরে’। একাত্তরের মহান বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিভাস্কর্য।
তেমনি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাবনার বেড়ায় তৈরি হয়েছে ‘শেকড় থেকে শিখরে’, বেড়ার কৃতী সন্তান তরুণ চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর বিপ্লব দত্ত ভাস্কর্যগুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। পাবনা থেকে কাশিনাথপুর হয়ে নগরবাড়ি যাওয়ার পথে রাস্তার পাশেই গৌরবমণ্ডিত ইতিহাস।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলার ইতিহাসকে কেন্দ্র করে পাবনার বেড়ায় সম্প্রতি নির্মিত ‘শেকড় থেকে শিখরে’ ভাস্কর্যটি অতীতের সব ভাস্কর্যের চেয়ে বৃহৎ ও ব্যতিক্রম। ১০ ফুট উচ্চতার কংক্রিটের স্তম্ভের উপর নির্মাণ করা হয়েছে ১৮ ফুট উচ্চতার বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য। এটি স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি। বাংলাদেশে স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এটিই বঙ্গবন্ধুর সর্ববৃহৎ আবক্ষ ভাস্কর্য।
এই আবক্ষ ভাস্কর্যের দুই পাশে রয়েছে তিনটি করে অতিরিক্ত স্তম্ভ। যাতে সিমেন্ট কেটে অঙ্কিত হয়েছে ’৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির উত্থান-পতন এবং উন্নয়নের ধারা। এছাড়া এই ভাস্কর্যের আরো একটি ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মূল ভাস্কর্যের এক পাশে ২৬টি কলামের একটি সীমানা বেষ্টনী রয়েছে, যার প্রত্যেকটি কলামে টাইলসে এনগ্রেভিং করা হয়েছে বাংলার ইতিহাস।
যেখানে সংক্ষিপ্ত আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে সিরাজউদ্দৌলা থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ’৭৫-এর জাতির জনকের পরিবারের ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত সচিত্র ইতিহাস। এসব ছাড়াও সম্মুখ দেয়ালে এই ভাস্কর্যের উদ্যোক্তা খন্দকার আজিজুল হক আরজু (এমপি, পাবনা-২) এর একটি ম্যুরাল পেইন্টিং স্থাপন করা হয়েছে। এই ভাস্কর্যটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো : ছাত্রছাত্রী তথা যে কোনো মানুষ ভাস্কর্যটি একবার প্রদক্ষিণ করলে বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবে।
বাঙালির গৌরবগাথা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা অর্জনের পথে সমগ্র জাতির সঙ্গে একই কাতারে পাবনার বেড়া অঞ্চলের হাজারো মানুষ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং অনেকেই শাহাদাত বরণ করেন। ইতিহাস শনাক্ত করে উপজেলার ডাববাগান যুদ্ধই একাত্তরের প্রথম সংঘটিত সম্মুখযুদ্ধ।
এ কারণেই পাবনা জেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংবলিত উল্লেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিভাস্কর্য স্থাপনা এলাকাবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছিল। তাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের অমর স্মৃতি জাগরিত করে রাখার উদ্দেশ্যে, সম্মান প্রদর্শনসহ নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধ তথা বাংলার সঠিক ইতিহাস সদা উদ্ভাসিত রাখার প্রয়াসে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ সময়োচিত সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
এরই প্রেক্ষিতে অধুনালুপ্ত তুমুল ব্যস্ত জনপদ উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত বেড়া উপজেলার নগরবাড়ি ঘাটের অদূরে নাটিয়াবাড়ি নামক স্থানে নগরবাড়ি-পাবনা মহাসড়ক সংলগ্ন ধোবাখোলা করোনেশন স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান ফটকের পাশে পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেন এবং তরুণ শিল্পী বিপ্লব দত্তকে নকশা তৈরি করতে বলেন। প্রায় দেড় বছর নিরলস পরিশ্রমের পর নির্মাণ করেন বহুমাতৃক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ এ ভাস্কর্য। ডিসেম্বরেই ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হবে বলে জানান উদ্যোক্তা সাংসদ খন্দকার আজিজুল হক আরজু।