ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরতের প্রথম দিন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পহেলা ভাদ্র। শরতের প্রথম দিন। বাংলা ঋতুর হিসাব অনুযায়ী ভাদ্র-আশ্বিন এই দুই মাস শরৎকালের রাজত্ব। ঋতুচক্রের বর্ষ পরিক্রমায় শরতের আগমন ঘটে বর্ষার পরেই। বর্ষার বিষন্নতা পরিহার করে শরৎ আসে।

বলা হয়, শরতের রূপ শান্ত-স্নিগ্ধ-কোমল। যেখানে মলিনতা নেই, আছে নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস। কবি জীবনানন্দের ভাষায়, ‘যৌবন বিকশিত হয় শরতের আকাশে’। মহাকবি কালিদাসের ভাষায়, প্রকৃতি এ সময় নববধূর সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে। শরতের মেঘহীন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা কেড়ে নেয় প্রকৃতি প্রেমিকদের মন। এতে মুগ্ধ হয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও।  বিলে শাপলা, গাছে গাছে শিউলির মন মাতানো সুবাস অনুভূত হয় শরতের ছোঁয়া। প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আলোড়িত করেছিল শরতের প্রকৃতি। পল্লী কবি জসীমউদ্দীন তাই শরতকে দেখেছেন ‘বিরহী নারী’ হিসেবে।

মধ্যযুগের কবি চন্ডীদাসের বিখ্যাত উক্তি ‘ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর’। এখানে কবি ভাদ্র মাসের চিরাচরিত রূপ তুলে ধরেছেন। কবির দক্ষ হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় কবিতাটি অসাধারণত্ব লাভ করেছে। মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা নর-নারীর অব্যক্ত মনের বেদনার কথাই কবি এখানে বলেছেন।

শরতে শেফালি, মালতী, কামিনী, জুঁই আর টগর মাথা উঁচিয়ে জানান দেয় সৌন্দর্য। মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে দেয় চার পাশে। গ্রামীণ প্রকৃতিতে শরৎ আসে সাড়ম্বরে। যদিও  ইট-কাঠের নগরীতে শরৎ থেকে যায় অনেকটা অন্তরালে। আবার, এই শরতেই হয়ে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।

শ্রাবণ শেষ হতেই শুরু হয় ভাদ্র মাস। আর ভাদ্র মানেই তো শরত । গ্রামবাংলার দিঘিতে ফোটে পদ্ম ফুল, দিঘির পাশেই শেফালি গাছ। প্রভাতে গাছ থেকে ঝরে পড়ে শত শত শেফালি। এর সুগন্ধ মনে লাগায় ভালোবাসার রং। কেউ বা গাঁথে শেফালি ফুলের মালা। আবার কাশফুল যেন শরতেরই স্মারক। যেমন, বর্ষার স্মারক কদম ফুল। প্রকৃতিতে ফুলের সমারোহ মনে করিয়ে দেয়—‘কেয়া-পাতার নৌকো গড়ে সাজিয়ে দেব ফুলে/ তাল-দিঘিতে ভাসিয়ে দেব চলবে দুলে দুলে…’। আসলে এযে ভাদ্রেরই প্রতিচ্ছবি। ভাদ্রে ভরা থাকে ফসলের খেত, মাঠ-প্রান্তর। ধানখেতের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান কৃষক।

ভাদ্রে হাওরে, নদীপথে যেতে বাঙালির মন হয় উতলা। তাই পর্যটকরা বেরিয়ে পড়তে চায় এই ভাদ্রে। কিন্তু সে সুযোগ কোথায়? বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ভাবনায় ভাদ্র নিয়ে কোনো কর্মসূচি নেই। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাদ্রে বেড়াতে গিয়ে নয়নলোভা দৃশ্য দেখে মন জুড়িয়ে নিতে পারেন যে কেউ।

বাংলা ঋতুচক্রে শরৎ তৃতীয়। বর্ষার পরপর এই ঋতুর আগমন ঘটলেও আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস পুরোপুরি কাটিয়েও বাঙালির জীবন ও প্রকৃতি থেকে বর্ষা পালায় না; বরং সে থাকে আরো মাস দুয়েক, বেশ দাপটের সঙ্গেই। আশ্বিন পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। বসন্ত যেমন আড়ম্বর করে আসে, হইহই করে যায়। একদিকে বর্ষাকে বিদায় দিতে দিতে, অন্যদিকে শীতকে অভ্যর্থনা জানাতে জানাতে সে হারিয়ে যায় ঋতুচক্রে।

প্রবল বর্ষা নিয়ে আজ শরতের আগমন।কদিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো ঝিরিঝিরি বা মুষলধারায়। এবার অতিরিক্ত জলধারা নিয়ে এল যে শরত, তা যেন ভাসিয়ে নিয়ে না যায় দেশ।ডুবে যাওয়া উত্তরাঞ্চল ভেসে উঠুক সহসা- এটাই প্রার্থণা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

শরতের প্রথম দিন

আপডেট টাইম : ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পহেলা ভাদ্র। শরতের প্রথম দিন। বাংলা ঋতুর হিসাব অনুযায়ী ভাদ্র-আশ্বিন এই দুই মাস শরৎকালের রাজত্ব। ঋতুচক্রের বর্ষ পরিক্রমায় শরতের আগমন ঘটে বর্ষার পরেই। বর্ষার বিষন্নতা পরিহার করে শরৎ আসে।

বলা হয়, শরতের রূপ শান্ত-স্নিগ্ধ-কোমল। যেখানে মলিনতা নেই, আছে নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস। কবি জীবনানন্দের ভাষায়, ‘যৌবন বিকশিত হয় শরতের আকাশে’। মহাকবি কালিদাসের ভাষায়, প্রকৃতি এ সময় নববধূর সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে। শরতের মেঘহীন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা কেড়ে নেয় প্রকৃতি প্রেমিকদের মন। এতে মুগ্ধ হয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও।  বিলে শাপলা, গাছে গাছে শিউলির মন মাতানো সুবাস অনুভূত হয় শরতের ছোঁয়া। প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আলোড়িত করেছিল শরতের প্রকৃতি। পল্লী কবি জসীমউদ্দীন তাই শরতকে দেখেছেন ‘বিরহী নারী’ হিসেবে।

মধ্যযুগের কবি চন্ডীদাসের বিখ্যাত উক্তি ‘ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর’। এখানে কবি ভাদ্র মাসের চিরাচরিত রূপ তুলে ধরেছেন। কবির দক্ষ হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় কবিতাটি অসাধারণত্ব লাভ করেছে। মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা নর-নারীর অব্যক্ত মনের বেদনার কথাই কবি এখানে বলেছেন।

শরতে শেফালি, মালতী, কামিনী, জুঁই আর টগর মাথা উঁচিয়ে জানান দেয় সৌন্দর্য। মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে দেয় চার পাশে। গ্রামীণ প্রকৃতিতে শরৎ আসে সাড়ম্বরে। যদিও  ইট-কাঠের নগরীতে শরৎ থেকে যায় অনেকটা অন্তরালে। আবার, এই শরতেই হয়ে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।

শ্রাবণ শেষ হতেই শুরু হয় ভাদ্র মাস। আর ভাদ্র মানেই তো শরত । গ্রামবাংলার দিঘিতে ফোটে পদ্ম ফুল, দিঘির পাশেই শেফালি গাছ। প্রভাতে গাছ থেকে ঝরে পড়ে শত শত শেফালি। এর সুগন্ধ মনে লাগায় ভালোবাসার রং। কেউ বা গাঁথে শেফালি ফুলের মালা। আবার কাশফুল যেন শরতেরই স্মারক। যেমন, বর্ষার স্মারক কদম ফুল। প্রকৃতিতে ফুলের সমারোহ মনে করিয়ে দেয়—‘কেয়া-পাতার নৌকো গড়ে সাজিয়ে দেব ফুলে/ তাল-দিঘিতে ভাসিয়ে দেব চলবে দুলে দুলে…’। আসলে এযে ভাদ্রেরই প্রতিচ্ছবি। ভাদ্রে ভরা থাকে ফসলের খেত, মাঠ-প্রান্তর। ধানখেতের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান কৃষক।

ভাদ্রে হাওরে, নদীপথে যেতে বাঙালির মন হয় উতলা। তাই পর্যটকরা বেরিয়ে পড়তে চায় এই ভাদ্রে। কিন্তু সে সুযোগ কোথায়? বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ভাবনায় ভাদ্র নিয়ে কোনো কর্মসূচি নেই। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাদ্রে বেড়াতে গিয়ে নয়নলোভা দৃশ্য দেখে মন জুড়িয়ে নিতে পারেন যে কেউ।

বাংলা ঋতুচক্রে শরৎ তৃতীয়। বর্ষার পরপর এই ঋতুর আগমন ঘটলেও আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস পুরোপুরি কাটিয়েও বাঙালির জীবন ও প্রকৃতি থেকে বর্ষা পালায় না; বরং সে থাকে আরো মাস দুয়েক, বেশ দাপটের সঙ্গেই। আশ্বিন পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। বসন্ত যেমন আড়ম্বর করে আসে, হইহই করে যায়। একদিকে বর্ষাকে বিদায় দিতে দিতে, অন্যদিকে শীতকে অভ্যর্থনা জানাতে জানাতে সে হারিয়ে যায় ঋতুচক্রে।

প্রবল বর্ষা নিয়ে আজ শরতের আগমন।কদিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো ঝিরিঝিরি বা মুষলধারায়। এবার অতিরিক্ত জলধারা নিয়ে এল যে শরত, তা যেন ভাসিয়ে নিয়ে না যায় দেশ।ডুবে যাওয়া উত্তরাঞ্চল ভেসে উঠুক সহসা- এটাই প্রার্থণা।