ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঐতিহ্য হারাচ্ছে তালের নৌকা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চাঁদপুরে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী তালের নৌকার কদর এখনও কমেনি। এখন বর্ষার আগমনে এ তালের নৌকার এখন অনেক চাহিদা দেখা দিয়েছে। তালের নৌকা তৈরীর কারিগররা নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যাচ্ছে।

বর্ষা এলেই গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও জলাশয়ে শাপলা তোলা, গরুর ঘাস কাটা, একবাড়ি থেকে অন্যবাড়ি যাওয়ার কাজে প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহার হতো তালের নৌকা। এখনও সে নৌকার কদর অনেকাংশে রয়েছে। গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে এখন এ তালের নৌকার ঐতিহ্য অনেক স্থানে হারিয়ে যাচ্ছে। আর এ তালের নৌকা তৈরীর কারিগররাও এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দিচ্ছেন।

সারাদেশেই এ তালের নৌকার কম-বেশি ব্যবহার প্রচলন ছিলো। এর মধ্যে চাঁদপুরের সদর ও  হাজীগঞ্জ উপজেলায় তালের নৌকার কদর ছিলো বেশি। পাশপাশি হাজীগঞ্জ বাজারে ছোট সাইজের নৌকাও বিক্রি হত।

সরেজমিন হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার দেবপুর নামক স্থানে তালের নৌকা তৈরী কারিগরদের সঙ্গে কথা হয়। ওই এলাকায় পূর্বে ২০ থেকে ২৫ জন কারিগর কাজ করলেও তালের নৌকার চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন মাত্র ১০-১২জন কাজ করছেন।

কারিগর লোকমান কবিরাজ বলেন, আগে বর্ষা এলে প্রতিবছর ২ থেকে ৩ হাজার তালের নৌকা বিক্রি হয়েছে। এখন ২শ’ নৌকাও বিক্রি হচ্ছে না। এর বড় কারণ হচ্ছে গ্রামগঞ্জে অনেক রাস্তা তৈরী হয়েছে। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও বহু বছর এ পেশায় ছিলেন, আমরা সেই হিসেব করছি। তবে এখন তালের নৌকার কদর অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। আমরাও পাশাপাশি কৃষিসহ অন্যান্য কাজে দৈনিক হাজিরায় কাজ করে বেশী অর্থ পাচ্ছি। যার ফলে তালের নৌকা তৈরীতে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।

হাজীগঞ্জ উপজেলার চতন্তর হাওলাদার বাড়ীর হাশু হাওলাদার জানান, তারা প্রতিটি তাল গাছ ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। এর মধ্যে নীচের অংশ দিয়ে দু’টি তালের নৌকা তৈরী হয়। আর এসব তালের নৌকা বিক্রি করেন ৪ থেকে ৮হাজার টাকা পর্যন্ত। পুরনো তালগাছ দিয়ে তৈরী তালের নৌকার টেকসই বেশি। কমপক্ষে ২০ বছর ব্যবহার করা যায়।

দেবপুর চরবাকিলা গ্রামের কিশোর জাবেদ জানান, আগে তাদের বাড়ির অনেকেই তালের নৌকা ব্যবহার করতো। এখন আর করেন না। সে প্রতিদিন গরুর ঘাস কাটার কাজে তালের নৌকা ব্যবহার করেন। তালের নৌকায় ২ থেকে ৩জন বসতে পারে। তবে বেশি নড়া ছড়া করলে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তালের নৌকা বিক্রেতা সুরুজ বেপারী  জানান, পর্যায়ক্রমে এক সময় তালের নৌকা বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ এখন ক্রেতাদের আগমন কম। তবে বন্যা হলে আবার বিক্রি বেড়ে যায়। আমাদের তালের নৌকা বেশির ভাগ নোয়াখালী জেলার লোকজন ক্রয় করেন। এছাড়া স্থানীয় ভাবে হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর সদর উপজেলায় বিক্রি হয়। তালের নৌকার এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে কেউ এগিয়ে আসে না। আমরা নিজেদের উদ্যোগেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। তবে এখন বর্ষার আগমনে তালের নৌকার চাহিদা বেশি হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ঐতিহ্য হারাচ্ছে তালের নৌকা

আপডেট টাইম : ১১:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চাঁদপুরে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী তালের নৌকার কদর এখনও কমেনি। এখন বর্ষার আগমনে এ তালের নৌকার এখন অনেক চাহিদা দেখা দিয়েছে। তালের নৌকা তৈরীর কারিগররা নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যাচ্ছে।

বর্ষা এলেই গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও জলাশয়ে শাপলা তোলা, গরুর ঘাস কাটা, একবাড়ি থেকে অন্যবাড়ি যাওয়ার কাজে প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহার হতো তালের নৌকা। এখনও সে নৌকার কদর অনেকাংশে রয়েছে। গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে এখন এ তালের নৌকার ঐতিহ্য অনেক স্থানে হারিয়ে যাচ্ছে। আর এ তালের নৌকা তৈরীর কারিগররাও এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দিচ্ছেন।

সারাদেশেই এ তালের নৌকার কম-বেশি ব্যবহার প্রচলন ছিলো। এর মধ্যে চাঁদপুরের সদর ও  হাজীগঞ্জ উপজেলায় তালের নৌকার কদর ছিলো বেশি। পাশপাশি হাজীগঞ্জ বাজারে ছোট সাইজের নৌকাও বিক্রি হত।

সরেজমিন হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার দেবপুর নামক স্থানে তালের নৌকা তৈরী কারিগরদের সঙ্গে কথা হয়। ওই এলাকায় পূর্বে ২০ থেকে ২৫ জন কারিগর কাজ করলেও তালের নৌকার চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন মাত্র ১০-১২জন কাজ করছেন।

কারিগর লোকমান কবিরাজ বলেন, আগে বর্ষা এলে প্রতিবছর ২ থেকে ৩ হাজার তালের নৌকা বিক্রি হয়েছে। এখন ২শ’ নৌকাও বিক্রি হচ্ছে না। এর বড় কারণ হচ্ছে গ্রামগঞ্জে অনেক রাস্তা তৈরী হয়েছে। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও বহু বছর এ পেশায় ছিলেন, আমরা সেই হিসেব করছি। তবে এখন তালের নৌকার কদর অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। আমরাও পাশাপাশি কৃষিসহ অন্যান্য কাজে দৈনিক হাজিরায় কাজ করে বেশী অর্থ পাচ্ছি। যার ফলে তালের নৌকা তৈরীতে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।

হাজীগঞ্জ উপজেলার চতন্তর হাওলাদার বাড়ীর হাশু হাওলাদার জানান, তারা প্রতিটি তাল গাছ ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। এর মধ্যে নীচের অংশ দিয়ে দু’টি তালের নৌকা তৈরী হয়। আর এসব তালের নৌকা বিক্রি করেন ৪ থেকে ৮হাজার টাকা পর্যন্ত। পুরনো তালগাছ দিয়ে তৈরী তালের নৌকার টেকসই বেশি। কমপক্ষে ২০ বছর ব্যবহার করা যায়।

দেবপুর চরবাকিলা গ্রামের কিশোর জাবেদ জানান, আগে তাদের বাড়ির অনেকেই তালের নৌকা ব্যবহার করতো। এখন আর করেন না। সে প্রতিদিন গরুর ঘাস কাটার কাজে তালের নৌকা ব্যবহার করেন। তালের নৌকায় ২ থেকে ৩জন বসতে পারে। তবে বেশি নড়া ছড়া করলে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তালের নৌকা বিক্রেতা সুরুজ বেপারী  জানান, পর্যায়ক্রমে এক সময় তালের নৌকা বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ এখন ক্রেতাদের আগমন কম। তবে বন্যা হলে আবার বিক্রি বেড়ে যায়। আমাদের তালের নৌকা বেশির ভাগ নোয়াখালী জেলার লোকজন ক্রয় করেন। এছাড়া স্থানীয় ভাবে হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর সদর উপজেলায় বিক্রি হয়। তালের নৌকার এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে কেউ এগিয়ে আসে না। আমরা নিজেদের উদ্যোগেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। তবে এখন বর্ষার আগমনে তালের নৌকার চাহিদা বেশি হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।