বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দিগন্তের মাঝে হঠাৎ ছোঁ মেরে শিকার ধরার দৃশ্য দারুণ মুগ্ধতার জন্ম দেয়। উড়ন্ত শিকারি পাখিরা এই অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়েই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে জন্ম-জন্মান্তর ধরে। নিরীহ প্রাণীটি বুঝে ওঠার আগেই সে পুরোপুরি জব্দ হয়ে যায় শিকারির তীক্ষ্ম নখের আঁচড়ে। জীববৈচিত্র্য আর প্রকৃতিরাজ্যে এ শিকার কৌশল শত শতাব্দীর দুর্বলের প্রতি সবলের নিপুণ অনুশীলন।
‘কাটুয়া-চিল’ এক প্রকাশের দারুণ শিকারি পাখি। এদের ধলা চিল, ধান চিল, সাদা চিল কিংবা কাপাসি চিল নামেও ডাকা হয়। এর ইংরেজি নাম Black-winged Kite এবং বৈজ্ঞানিক নাম Elanus caeruleus।
প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, কাটুয়া-চিল মাঝারি আকারের শিকারি পাখি। এদের পা খুব শক্তিশালী এবং এগুলো সাদা পালকে ঢাকা থাকে। গাছ, খুঁটি, বা বৈদ্যুতিক তারে বসে কিংবা বাতাসে উড়ে উড়ে এরা আহার খোঁজে এবং পায়ের শক্তিশালী লম্বা নক দিয়ে শিকার ধরে খায়। এরা আমাদের দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি।
এদের আকার-আকৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এদের দৈর্ঘ্য ৩৫ সেমি এবং ওজন ১৬৪ গ্রাম। আকারে এরা কাকের ছোট। দেহ ধূসর। গলা, বুক ও পেট সাদাটে। কাঁধে রয়েছে বড় পট্টি। সুচালো ডানা এবং চঞ্চু কালো। এদের চোখ রক্তলাল। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখির পিঠ কিছু বাদামি-ধূসর এবং ডানায় রয়েছে অস্পষ্ট কালো পট্টি।
কাটুয়া-চিলের খাবার এবং প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেছেন, ঝিঁঝি পোকা, পঙ্গপাল, ঘাস ফড়িং ও অন্য পোকা, টিকটিকি, ধান ক্ষেতের ইঁদুর, মুষিক, ব্যাঙ, সাপ, পাখির ছানা ও অসুস্থ পাখি রয়েছে এদের খাদ্য-তালিকায়। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই এদের মাঝে মাঝে দেখা যায়। অফ্রিকা, আরবের দক্ষিণাঞ্চল, ভারত, চীন, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
সারাবছরই কাটুয়া-চিলের প্রজননকাল। ছোট গাছের পাতা, মূল ও ঘাস বিছিয়ে এবড়ো-থেবড়ো মাচার বাসায় এরা ডিম পাড়ে। ৩টি থেকে ৬টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। ছেলেপাখি একা ছানার যত্ন নেয় বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।