অপূর্ণা শিখা। রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। মায়ের সঙ্গে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এসেছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাত স্মরণে। আর ১০জনের সঙ্গে অপূর্ণাও মোমবাতি জ্বালিয়ে সেই রাতকে স্মরণ করেছে। এদেশের নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞকে ধিক্কার জানিয়েছে। অপূর্ণার ভাষায়, ‘এই রাতে ওরা আমার দাদাদের মেরেছে। ওদের প্রতি ধিক্কার।’
শনিবার সন্ধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ভেতরে মোমবাতি হাতে অপূর্ণার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।
কেন এখানে এসেছো?
-সহজ উত্তর মোমবাতি জ্বালাতে।
কেন?
-১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আমার দাদাদের মেরেছে। এই দিন কালোরাত। একারণে স্মরণ করতে এখানে এসেছি।
তুমি জানো ওই দিন কী ঘটেছিল?
-একটু থেমে উত্তর, হম জানি, পাক সেনারা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আরও কত কি!
এটাই তো বিস্ময়। আমাদের শিশু অপূর্ণারাও জানে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী।
কীভাবে এই ছোট্ট অপূর্ণা মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী জানল, এ বিষয়ে কথা হয় অপূর্ণার মা সেঁজুতির সঙ্গে।
সেঁজুতি জানান, ‘আমার সব ছেলে মেয়েগুলোই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানে। ছোট বেলা থেকেই তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনিয়েছি। এভাবে তারা বই না পড়েও সব ঘটনা বলে দিতে পারে। এটা পারিবারিক শিক্ষাও বটে।’
রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এসেছে কালোরাত স্মরণে মোবাতি প্রজ্বালন করতে।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। গত ২২ মার্চ থেকে এ কর্মসূচি পালন শুরু হয়। আজ চতুর্থ দিনে জাদুঘরে ছিল শহীদ পরিবারের সন্তানদের স্মৃতিচারণা, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় গণহত্যা দিবস ও কালরাত্রি স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন, প্রামাণ্যচিত্র কবি মেহেরুন্নেসা প্রদর্শনী, নাটক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া জল্লাদখানায় স্মৃতিচারণা, মোমবাতি প্রজ্বালন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এসব কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী স্বাধীনতা উৎসবের আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সেগুনবাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে এসব কর্মসূচি চলবে ২৮ মার্চ পর্যন্ত।