গুম, গায়েবি মামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে পুলিশ ও র্যাব ক্ষমা চাইলেও রাতের ভোটের সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে। এদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পুলিশ সদর দফতর। এসব কর্মকর্তারাই নানা চতুরতায় এখনো পুলিশ সদর দফতরসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত রয়েছেন। অনেকেই এরই মধ্যে পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন। অথচ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম এজেন্ডাই ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের হাতে শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতার বিচার করা। গত সোমবার চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে গণপিটুনিতে শিকার হন কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি নেজাম উদ্দিন। রাতের ভোট দেয়া, খুন, গুম ও গায়েবি মামলায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের উপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ যে কত এটাই এর প্রমাণ।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যান্য নির্বাচনী এলাকার মতো অবিশ্বাস্য ফলাফল ছিল বরিশাল-১ আসনে। শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ২ লাখ ৫ হাজার ৫০২ ভোটের বিপরীতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জহিরউদ্দিন স্বপন ১ হাজার ৩০৫ ভোট পেয়েছিলেন। অনিয়মের জন্য পুলিশ অধিক দায়ী। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কারো কথা শুনত না। ২০১৮ সালের নির্বাচন ‘সফলভাবে’ সম্পন্ন করায় ৬৪ জেলার এসপি সেবার পুলিশ পদক পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, এসপিকে ৫০ লাখ টাকা করে উপঢৌকন দিয়েছিলেন। ওসি নিয়েছিলেন ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল। ভোটকেন্দ্রের পুলিশ কনস্টেবলদেরও পাঁচ-সাত হাজার টাকা দেয়া হয়।
ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ সুপার ও থানার ওসিরা পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভোটের আগের রাতেই ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী সরকারদলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে দিতে তাদের ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়। বিশেষ করে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনই আলোচনায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, রাতের ভোটে যারা কারচুপিতে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের ক্ষোভ ছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর এই ক্ষোভ এখন প্রকাশ্যে। সরকারি এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনেক তথ্য আয়কর গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। তারা এখন যাচাই-বাছাই করে কর ফাঁকিসংক্রান্ত বিষয় অনুসন্ধান করবে।
২০১৪ সালে রাতের ভোট দেয়ার সাথে জড়িত এসপিরা হলেনÑ ঢাকা জেলার হাবিবুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ জেলার মো: হাবিবুর রহমান, গাজীপুর জেলায় আবদুল বাতেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ জেলার বিধান ত্রিপুরা, নরসিংদী জেলার খন্দকার মহিদ উদ্দিন, নেত্রকোনা জেলার জাকির হোসেন খান, জামালপুর জেলার নজরুল ইসলাম, শেরপুর জেলার মেহেদুল করিম, ময়মনসিংহ জেলার মঈনুল হক, কিশোরগঞ্জ জেলার আনোয়ার হোসেন খান, ফরিদপুরের জামিল হাসান, গোপালগঞ্জের মিজানুর রহমান, রাজবাড়ির রেজাউল হক, শরীয়তপুরের শেখ রফিকুল ইসলাম, মাদারীপুরের ফরিদুল ইসলাম, চট্টগ্রামের হাফিজ আক্তার, কক্সবাজারের আজাদ মিয়া, রাঙ্গামাটির আমেনা বেগম, খাগড়াছড়ির শেখ মো: মিজানুর রহমান, বান্দরবান জেলার দেবদাস ভট্টাচার্য, নোয়াখালী জেলার আনিসুর রহমান, লক্ষ্মীপুরের আবুল ফয়েজ, কুমিল্লার টুটুল চক্রবর্তী, ফেনীর পরিতোষ ঘোষ, বি-বাড়িয়ার মনিরুজ্জামান, চাঁদপুরের আমির জাফর, রাজবাড়ীর আলমগীর কবির, চাপাইনবাবগঞ্জের বশির আহমেদ, পাবনা মিরাজ উদ্দিন আহমেদ, নাটোর নাহিদ হোসেন, সিরাজগঞ্জ এমরান হোসেন, নওগাঁর কাইয়ুমুজ্জামান, বগুড়ার মোজাম্মেল হক, জয়পুরহাটে হামিদুল আলম, ঠাকুরগাঁওয়ের ফয়সল মাহমুদ, পঞ্চগড়ের মো: আবুল কালাম আজাদ, দিনাজপুরের রুহুল আমিন, রংপুরের আব্দুর রাজ্জাক, গাইবান্ধায় মোফাজ্জেল হোসেন, নীলফামারিতে জোবায়েদুর রহমান, কুড়িগ্রামে সঞ্জয় কুমার কুন্ডু, লালমনিরহাটে মো: হাবিবুর রহমান, খুলনায় গোলাম রউফ খান, সাতক্ষীরায় চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, ঝিনাইদহে আলতাফ হোসেন, চুয়াডাঙ্গায় রশীদুল হাসান, মাগুরায় জিহাদুল করিম, যশোরে জয়দেব কুমার ভদ্র, নড়াইলে মনির হোসেন, কুষ্টিয়ায় মফিজ উদ্দিন আহমেদ, মেহেরপুরে নাহিদুল ইসলাম, বাগেরহাটে নিজামুল হক, বরিশালে এহসান উল্লাহ, পিরোজপুরে আক্তারুজ্জামান, ভোলায় মনিরুজ্জামান, ঝালকাঠিতে মজিদ আলী, পটুয়াখালীতে রফিকুল হাসান গনি, বরগুনায় শ্যামল কুমার নাথ, সিলেটে নুরে আলম মিনা, মৌলবীবাজারে তোফায়েল আহমেদ, সুনামগঞ্জে হারুন অর রশীদ এবং হবিগঞ্জে কামরুল আমীন।
২০১৮ সালে রাতের ভোট দেয়ার সাথে জড়িত এসপিরা হলেনÑ ঢাকা জেলার শফিউর রহমান, মুন্সীগঞ্জে মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, গাজীপুরে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, নারায়ণগঞ্জে মঈনুল হক, মানিকগঞ্জে মাহফুজুর রহমান, নরসিংদীতে আমেনা বেগম, কিশোরগঞ্জে মো: আনোয়ার হোসেন খান, টাঙ্গাইলে মো: মাহবুব আলম, ফরিদপুরে মো: জামাল পাশা, গোপালগঞ্জে মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান, রাজবাড়ীতে সালমা বেগম, শরীয়তপুরে সাইফুল্লাহ আল মামুন, মাদারীপুরে মো: সরোয়ার হোসেন। এছাড়া শেরপুরে মো: রফিকুল হাসান গনি, ময়মনসিংহে সৈয়দ নুরুল ইসলাম, নেত্রকোনায় জয়দেব চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মো: মিজানুর রহমান, ”ট্টগ্রামে নুরে আলম মিনা, কক্সবাজারে ড. একেএম ইকবাল হোসেন, রাঙ্গামাটি সাঈদ তারিকুল হাসান, খাগড়াছড়ি আলী আহমেদ খান, নোয়াখালী মো: ইলিয়াছ শরীফ, লক্ষ্মীপুরে আ,স,ম, মাহাতাব উদ্দিন, কুমিল্লায় মো: শাহ আবিদ হোসেন, ফেনিতে এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, চাঁদপুরে শামসুন্নাহার, বান্দরবানে সঞ্জিত কুমার রায়, বগুড়ায় মো: আসাদুজ্জামান, রাজশাহীতে মোাহম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞা, চাপাইনবাবগঞ্জে টিএম মোজাহেদুল ইসলাম, পাবনায় জিহাদুল কবির, নাটোরে বিপ-ব বিজয় তালুকদার, সিরাজগঞ্জে মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ, নওগাঁয় মো: ইকবাল হোসেন, জয়পুরহাটে মো: রশীদুল হাসান। রংপুরে মো: মিজানুর রহমান, দিনাজপুরে মো: হামিদুল আলম, ঠাকুরগাঁও ফারহাত আহমেদ, পঞ্চগড়ে গিয়াস উদ্দিন আহমদ, নীলফামারি মো: জাকির হোসেন খান, লালমনিরহাটে এসএম রশীদুল হক, কুড়িগ্রামে ছিলেন মো: মেহেদুল করিম। খুলনার মাগুরায় ছিলেন মুনিবুর রহমান, নড়াইলে সরদার রকিবুল ইসলাম, খুলনায় মো: নিজামুল হক মোল্্যা, সাতক্ষীরায় মো: সাজ্জাদুর রহমান, চুয়াডাঙ্গায় মো: মাহবুবুর রহমান, যশোরে মো: আনিসুর রহমান, কুষ্টিয়ায় এসএম মেহেদী হাসান, মেহেরপুরে মো: আনিছুর রহমান, ঝিনাইদহে মো: মিজানুর রহমান বাগেরহাটে পংকজ, বরিশালে মো: সাইফুল ইসলাম, পিরোজপুরে মোহাম্মদ সালাম কবির, ভোলায় মো: মোকতার হোসেন, ঝালকাঠিতে মো: জোবায়দুর রহমান, পটুয়াখালী মোহাম্মদ মঈনুল হাসান এবং বরগুনায় বিজয় বসাক। এছাড়া সিলেটে মো: মনিরুজ্জামান, মৌলভীবাজারে মো: শাহ জালাল, সুনামগঞ্জে মো: বরকতুল্লাহ খান এবং হবিগঞ্জে বিধান ত্রিপুরা।
২০২৪ সালে রাতের ভোট দেয়ার সাথে জড়িত এসপিরা হলেনÑ পঞ্চগড়ের এস এম সিরাজুল হুদা, ঠাকুরগাঁওয়ের উত্তম প্রসাদ পাঠক, দিনাজপুরে শাহ ইফতেখার আহমেদ, নীলফামারীতে মোহাম্মদ গোলাম সবুর, লালমনিরহাটে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, রংপুরে মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরী, গাইবান্ধায় মো. কামাল হোসেন, জয়পুরহাটে মোহাম্মদ নূরে আলম, বগুড়ায় সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মো. ছাইদুল হাসান, নওগাঁয় মুহাম্মদ রাশিদুল হক, রাজশাহীতে মো. সাইফুর রহমান, নাটোরে মো. তারিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জে মো. আরিফুর রহমান, পাবনায় মো. আকবর আলী মুনসী, মেহেরপুরে মো. রফিকুল আলম, কুষ্টিয়ায় এ এইচ এম আবদুর রকিব, চুয়াডাঙ্গায় আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঝিনাইদহে মো. আজিম-উল-আহসান, নড়াইলে মোসা. সাদিরা খাতুন, বাগেরহাটে আবুল হাসনাত খান, খুলনায় মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান, সাতক্ষীরায় কাজী মনিরুজ্জামান, বরগুনায় মো. আবদুস ছালাম, পটুয়াখালীতে মো. সাইদুল ইসলাম, ভোলায় মো. মাহিদুজ্জামান, বরিশালে ওয়াহিদুল ইসলাম, ঝালকাঠিতে মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল, পিরোজপুরে মোহাম্মদ শফিউর রহমান, গোপালগঞ্জে আল-বেলী আফিফা, মাদারীপুরে মো. মাসুদ আলম, শরীয়তপুরে মো. মাহবুবুল আলম, ফরিদপুরে মো. শাহজাহান, রাজবাড়ীতে জি এম আবুল কালাম আজাদ, মানিকগঞ্জে মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান, মুন্সীগঞ্জে মোহাম্মদ আসলাম খান, নরসিংদীতে মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জে গোলাম মোস্তফা রাসেল, ঢাকা জেলায় মো. আসাদুজ্জামান, গাজীপুরে কাজী শফিকুল আলম, টাঙ্গাইলে সরকার মোহাম্মদ কায়সার, জামালপুরে মো. কামরুজ্জামান, শেরপুরে মোনালিসা বেগম, নেত্রকোনায় মো. ফয়েজ আহমেদ, কিশোরগঞ্জে মোহাম্মদ রাসেল শেখ, সুনামগঞ্জে মোহাম্মদ এহসান শাহ, সিলেটে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন, মৌলভীবাজারে মো. মনজুর রহমান, হবিগঞ্জে এস এম মুরাদ আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, কুমিল্লায় আব্দুল মান্নান, ফেনীতে জাকির হোসেন, নোয়াখালীতে মো. শহীদুল ইসলাম, লক্ষ্মীপুরে মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, চট্টগ্রামে এস এম শফিউল্লাহ, কক্সবাজারে মো. মাহফুজুল ইসলাম, রাঙামাটিতে মীর আবু তৌহিদ ও বান্দরবানে সৈকত শাহীন।