ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিচিত্র আদর্শের বাংলাদেশ ও শওকত হোসেন নিলু

পৃথিবীর রাজনীতির বিষবাষ্প থেকে খানিকটা মুক্তি পেলেন দেশের বরেণ্য রাজনীতিক শেখ শওকত হোসেন নিলু। রাজনীতির মাঠ থেকে অনেকটা হতাশা নিয়েই বিদায় হতে হলো তাকে। এমনকি দাফনের ব্যাপারেও তার ইচ্ছের প্রতিফলন হলো না। নিলু সাহেবের ইচ্ছে ছিলো তাকে যেন দাফন করা হয় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়, যে মাটিতে তার শৈশব স্বাদ পেয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে সময় কাটানোর। পারিবারিক কবরস্থানে আব্বা-আম্মার পাশেই শায়িত হতে চেয়েছিলেন, রাজনীতির বেড়াজাল থেকে মুক্তি না পেয়েই। হাজারো মানুষের অশ্রু আর শ্রদ্ধায় দাফন হতে হলো বনানীতে ।

শনিবার নাইট রিপোর্টার ছিলাম, সেই কারণে সুযোগ হয়েছিলো নিলু ভাইয়ের একদম কাছাকাছি থাকার। রাত ১০টার কিছু পরে, রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। ইচ্ছে ছিলো নিলু ভাইয়ের মৃত্যু পরবর্তী অনুষ্ঠানগুলোকে ভালো কাভারেজ দেয়ার। সিকিউরিটি অফিসারদের অযাচিত অত্যাচারের চোটে আমার ইচ্ছেটাও মাঠে মারা গেল। বিপদে সহযোগী হলেন এটিএন বাংলার দুর্দান্ত ক্যামেরাপারসন জনি ভাই। অফিসার আসার আগেই, নিউজ এর জন্য প্রয়োজনীয় ফুটেজ নিয়ে ফেলেন। পরে আমাদের ক্যামেরা সিজ করে ফুটেজ চেক করলেন স্কয়ায়ের  র‌্যাপিড ব্যাটেলিয়ান। কয়েকজন সাহসী লোক উপস্থিত থাকায় মেমরি কার্ড ছিনিয়ে নেয়ার আর সাহস হলোনা অফিসারের। স্কয়ায়ের এমন ভীতু আচরণ সত্যিই আমাদের কৌশলী হতে শিখিয়েছে। আগামীতে দৃশ্যমান ক্যামেরা নিয়ে এরকম হাসপাতাল টাইপ ব্যবসায়িক জায়গায় যাওয়ার আগে ক্যামেরা সাংবাদিকদের ভাবতে হবে। ফুটেজ না পেলে, নিলু ভাই যে ইন্তেকাল করেছেন, সেই খবরটাই প্রকাশ করতে পারতাম না। অন্তত টেলিভিশন সাংবাদিকতায় ভিডিও ফুটেজের দাম পত্রিকার তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি। আবার, পত্রিকার আছে বিস্তারিত লেখনি ক্ষমতা। তাই জাতীয় মানের পত্রিকা থেকে তথ্য নিয়েই ফলোআপ স্টোরি করি আমরা ।

নিলু ভাই ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন আর কর্মজীবনে দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব মেজর জিয়ার সহযোদ্ধা। পরে ক্ষমতার চাবি হাতে পাওয়া এরশাদ সরকারের সাথেও গড়েছিলেন মধুর মিতালী। কালের বিবতর্নে খালেদা জিয়ার ক্ষমতার বন্ধনে বেঁধেছিলেন জোট। এমনও হতে পারে, চিন্তায় এক্সক্লুসিভ হওয়ার কারণেই, কারোর রাজনীতিতেই দেশপ্রেমের গন্ধ খুঁজে পাননি বিচিত্র ব্যক্তিত্বের এই মানুষটি। জাতীয় পার্টিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ২০০৮ সালে গড়েছিলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। আর বিএনপিকে ছেড়ে হয়েছিলেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের আহবায়ক। অনেকটা অবাক হয়েই শুনতে হয়েছিলো, শেখ হাসিনার ইফতারে যোগ দেয়ার অপরাধে নিলু সাহেবকে বিএনপি ছাড়তে হয়েছিলো। তাকে দল থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য হয়তো আরও অনেক কারণকে সামনে এনেছিলেন খালেদা জিয়া। তবে মিডিয়া পাড়া ঠিকই জানে যে, ইফতারের প্রসঙ্গটাই খালিদা জিয়াকে সিদ্ধান্ত নিতে বেশি সহযোগিতা করেছে। আমারা অভিজ্ঞতা এটাও বলে যে, ক্ষমতার স্বাদ থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকলে, বেশ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সব মাপেরই শাসক। সে হিসেবে এতবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরক্ত হবারই কথা। কেন বিএনপির একজন রাজনীতিবিদ রাজনীতিতে শত্রুপক্ষের ইফতারে যোগ দিতে যাবেন। অন্তত বাংলাদেশের মত একটা সেনসিটিভ দেশে এমন সাহস দেখানো একদমই ঠিক কাজ করেননি নিলু ভাই।

বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা ছিলেন নিলু ভাইয়ের বেড়ে উঠার সঙ্গী। বাবা ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর বন্ধু গোত্রের অন্যতম সদস্য। গোপাল গঞ্জের টুঙ্গিপাড়াতেই পরিচিত হয়েছিলেন রাজনীতির প্যাঁচালী স্বভাবের সাথে। আশ্চর্য হয়ে ভাবতে হয়, সব ক্ষমতাসীন দলের সাথেই শক্তভাবে লেগে থাকলেও, আওয়ামী লীগের সাথে কোন লিখিত সম্পর্কে চুক্তিবদ্ধ হতে দেখা যায়নি তাকে। রাজনীতির চেয়ারে নিজের বিচিত্র আদর্শ থাকার কারণে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অসীম ক্ষমতাকে হয়তো হুমকি ভেবেছিলেন। নামের শুরুতে শেখ, আর চেতনায় বঙ্গবন্ধু।  এরপরও এই দলের সাথে কেন সম্পর্ক গড়লেন না?  ক্যামেরার সামনে, প্রশ্নটার উত্তর দিয়েছিলেন মরহুমের ছোট ভাই শেখ সালাহউদ্দিন। তার কথাবার্তায় খানিকটা ঘাম দেখেছিলাম। তাই প্রশ্নটির উত্তর চাই, বঙ্গবন্ধুকে পুঁজি করে রাজনীতি করে যাওয়া দলটির কাছে। জানি অন-রেকর্ডে কোন নেতাই গঠনমূলক উত্তর দেয়ার সাহস করবেন না। সর্বোচ্চ বলতে পারেন, নিলু সাহেব মৌলবাদী ছিলেন, অথবা মেজর জিয়ার আদর্শের সৈনিক ছিলেন। আচ্ছা, তাহলে শেখ হাসিনা কেন নিলু ভাইকে ইফতার অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতে গেলেন! সময়ের সাহসী এই প্রধানমন্ত্রী কি জানতেন না এসব? আরে ভাই, যে দেশে গৌতমবুদ্ধকে সন্ত্রাসী হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করে জনকণ্ঠের মত একটা জাতীয় পত্রিকা সম্পাদকীয় ছাপায়, সেই দেশে ভালো কিছু প্রত্যাশা কয়াটা মরীচিকার মতই ।
রাজনীতি করার জন্য দেশের কোন দল থেকেই যথেষ্ঠ জ্বালানী না পাওয়ার কারণেই হয়তো নিজের চেষ্টায় গড়ে তুলেছিলেন কয়েকটি দল। রাজনীতির মাঠে সক্রিয় তরুণদের নিলু ভাই কি শিখিয়ে গেলেন সেটা অনেকটাই অস্পষ্ট আমাদের কাছে। তার এই বিচিত্র স্বভাবকে যে যাই বলুক, আমি বলব, পরিবর্তনই বাস্তবতা। যার পরিবর্তন নেই, সে জড় বস্তু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ডজন খানেক নেতাকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি। ক্ষমতার চেয়ারে খালেদা জিয়া থাকাকালীন ছাত্রদলের ক্লিন ইমেজের নেতা ছিলেন । সেই একই চেয়াওে, ব্যক্তি পরিবর্তনের সাথে সাথেই, ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে রুপান্তর। বঙ্গবন্ধু বা মেজর জিয়া আজ যদি বেঁচে থাকতেন, আমি নিশ্চিত হার্ট এ্যাটাকের শিকার হতেন কয়েকবার। দেশ একদিন মালয়েশিয়া হবে, ইন্দোনেশিয়া হবে, এমন স্বপ্ন দেখে রাজনীতি বিষয়ে অনার্স পড়া শুরু করেছিলাম। কয়েকশ কারণেই, রাজনীতি ও সুশাসন বিষয়ে আগ্রহ খুঁজে পাচ্ছি না। অনেকটা হতাশা নিয়েই লেখাটা লিখেছি, হতাশাকে অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়ে, নিজে হতাশামুক্ত হতে চেয়েছি, খুঁজে পেয়েছি শান্তির সুঘ্রাণ। এ কারণে আমাকে স্বার্থপর বলে গালিও দিতে পারেন। তবে আমি বলব, স্বার্থ ছাড়া পৃথিবীতে কোন কিছুই হয়না। এমনকি, স্বার্থকে পুঁজি কওে, খোদ সৃষ্টিকর্তাও মানুবজাতি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য, তার বিধানগুলোর প্রতি যেন আমরা বিনয়ী হয়ে উঠি। বিনিময়ে তিনি প্রতিশ্রতি দিয়েছেন নানা পুরষ্কারের। সব পুরষ্কার শুধু মৃত্যু পরবর্তী দিবসে নয়, দুনিয়াতেই এর প্রভাব বেশ প্রমাণিত এবং লক্ষ্যনীয়ও।

স্বস্তির খবর হলো, দেশের রাজনীতিতে এখন পকেটে তেল নিয়ে ঘুরার দিন শেষ। পকেটে অর্থের অস্ত্র থাকলেই, রাষ্ট্রের সবরকম চেয়ারেই শক্তিশালী মানের আঠা লাগানো যায়। বছরের পর বছর সেই চেয়ারকে বশে রাখা যায় । নির্বাচনের সময়ে শুধু আঠা পরিবর্তন করলেই চেয়ার নিশ্চিত। শীর্ষস্থানীয় সব রাজনীতিক এখন বেশ সচেতন, বড় আকারের মডেলও বলতে পারেন। এ যুগের নেতাদের হৃদয়ে ফরমালিন দিলেও সহজে ফুলে উঠেনা তাদের বুক, তাদেরকে কনভিন্স করতে প্রার্থীরা নিজেদের মানিব্যাগে বড় অঙ্কের চেক অলটাইম রাখেন। এখনকার তরুণরাও রাজনীতিতেও বেশ সচেতন। মার্ক জুকারবার্গের সাথে ডলার চুক্তিতে এখন তারাও বড় মাপের মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। তবে মিডিয়া কেলেঙ্কারিতে জড়াতে চান কেউই। এজন্য সাংবাদিকদের দূর দেখা দেখলেই, নেতাদের চোখে মুখে সাবধানি আচরণ লক্ষ্য করা যায় । কাম-আকাম যাই করেন, যেখানেই করেন, সাংবাদিকের চোখ, আপনারে চোখের ভাষা খুব ভালো করেই টের পায়। বুঝাবুঝিতে অভ্যস্ত বলতেও পারেন । তাই নতুন প্রজন্মের সাংবাদিক হিসেবে, তরুণ নেতৃত্বকে আগলে রাখা নেতাদের বলতে চাই, ক্যামেরার সামনে যতটা পরিষ্কার ইমেজ আপনার, ক্যামেরার ক্ষমতার বাইরেও ফুলের মতই পবিত্র থাকুক আপনার পরিকল্পনা ও কাজ।

ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া যেকোন শাসকের জন্য, ক্ষমতার বাইরে থাকা, অনেকটা অক্সিজেন ছাড়া পানিতে ডুবে থাকার মতই । এসময় শুধু মানুষ নয়, সময়ের সাথেও বেশ অযাচিত আচরণ শুরু করেন সব মানের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী। কয়েকদিন আগে সন্ধ্যা ৭টার প্রোগ্রামে, খালেদা জিয়া কথা বলেছেন রাত ১০.৩০ টার দিকে । সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এহেন আচরণে, তরুণ সমাজ সত্যিই অনেক সন্দিহান। খালেদা জিয়ার নিয়মিত দেরির বিষয়টি সাংবাদিকদেও আর বিরক্ত করে না। প্রথমবারের মত, গত কালকে গুলশান অফিসে যেতে হয়েছিলো। তাড়াহুড়া করে যাওয়ার কারণে সব সাংবাদিকদের চোখে মুখে ছিলো ঘুমের আভা। খালেদা জিয়া একজন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ, তকে সময়ের সাথে তিনি যে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন, এমন খবর কখনোই আসতে জাতীয় পত্রিকায় দেখিনা । প্রোগামে আওয়ামী লীগকে বহুরপী ছাড়াও নানা গালিতে সংগায়িত করলেন তিনি । গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নানা আলোচনা নোটিশ দিলেন তিনি ।

সম্পাদকীয় পাতায় প্রথম লিখছি, তবুও দায়িত্ব নিয়েই একটা মন্তব্য করতে চাই, নিজেকে সাজাতে গিয়ে শ্রদ্ধেয় খালেদা জিয়া যে পরিমাণ সময় দেন, তার অর্ধেক সময়ও যদি দেশের মানুষের প্রকৃত কল্যাণে সময় দিতেন, পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের নামটা সম্মানের সাথে উচ্চারণ করত বিশ্ববাসী। আমরা সাংবাদিক সমাজও বেশ সুবিধাবাদী হয়ে উঠছি দিনকেদিন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে, ভয় করছি প্রাণ হারানোর। আস্তিক অথবা নাস্তিক, কোন শব্দের প্রতি ঈমান আনতে পারি না আর। তবে, জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে আর প্রতিদিনের খাবারের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করি। বিশ্বাস করি, উনার ইশারা ছাড়া আমার একটা টোকাও দিতে পারবে না কেউই। কথা শেষ করতে চাই। লাখো শিক্ষার্থীর সাফল্যের প্রতিনিধি প্রিয় মুখ শরিফুল হাসান। বিসিএসএসকে কার্যকরী করতে যার লেখনী এখনো জ্বালানী যুগিয়ে যাচ্ছে। দেশে যদি আরও ডজন খানেক সাহসী কণ্ঠের জন্ম হয়, আশাবাদী হয়েই বলছি, দেশ গড়তে যে কোন প্রশাসনের কম সময় লাগবে। আর বাংলাদেশ হবে, দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্রে স্পষ্ট নক্ষত্র

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বিচিত্র আদর্শের বাংলাদেশ ও শওকত হোসেন নিলু

আপডেট টাইম : ০২:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০১৭

পৃথিবীর রাজনীতির বিষবাষ্প থেকে খানিকটা মুক্তি পেলেন দেশের বরেণ্য রাজনীতিক শেখ শওকত হোসেন নিলু। রাজনীতির মাঠ থেকে অনেকটা হতাশা নিয়েই বিদায় হতে হলো তাকে। এমনকি দাফনের ব্যাপারেও তার ইচ্ছের প্রতিফলন হলো না। নিলু সাহেবের ইচ্ছে ছিলো তাকে যেন দাফন করা হয় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়, যে মাটিতে তার শৈশব স্বাদ পেয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে সময় কাটানোর। পারিবারিক কবরস্থানে আব্বা-আম্মার পাশেই শায়িত হতে চেয়েছিলেন, রাজনীতির বেড়াজাল থেকে মুক্তি না পেয়েই। হাজারো মানুষের অশ্রু আর শ্রদ্ধায় দাফন হতে হলো বনানীতে ।

শনিবার নাইট রিপোর্টার ছিলাম, সেই কারণে সুযোগ হয়েছিলো নিলু ভাইয়ের একদম কাছাকাছি থাকার। রাত ১০টার কিছু পরে, রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। ইচ্ছে ছিলো নিলু ভাইয়ের মৃত্যু পরবর্তী অনুষ্ঠানগুলোকে ভালো কাভারেজ দেয়ার। সিকিউরিটি অফিসারদের অযাচিত অত্যাচারের চোটে আমার ইচ্ছেটাও মাঠে মারা গেল। বিপদে সহযোগী হলেন এটিএন বাংলার দুর্দান্ত ক্যামেরাপারসন জনি ভাই। অফিসার আসার আগেই, নিউজ এর জন্য প্রয়োজনীয় ফুটেজ নিয়ে ফেলেন। পরে আমাদের ক্যামেরা সিজ করে ফুটেজ চেক করলেন স্কয়ায়ের  র‌্যাপিড ব্যাটেলিয়ান। কয়েকজন সাহসী লোক উপস্থিত থাকায় মেমরি কার্ড ছিনিয়ে নেয়ার আর সাহস হলোনা অফিসারের। স্কয়ায়ের এমন ভীতু আচরণ সত্যিই আমাদের কৌশলী হতে শিখিয়েছে। আগামীতে দৃশ্যমান ক্যামেরা নিয়ে এরকম হাসপাতাল টাইপ ব্যবসায়িক জায়গায় যাওয়ার আগে ক্যামেরা সাংবাদিকদের ভাবতে হবে। ফুটেজ না পেলে, নিলু ভাই যে ইন্তেকাল করেছেন, সেই খবরটাই প্রকাশ করতে পারতাম না। অন্তত টেলিভিশন সাংবাদিকতায় ভিডিও ফুটেজের দাম পত্রিকার তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি। আবার, পত্রিকার আছে বিস্তারিত লেখনি ক্ষমতা। তাই জাতীয় মানের পত্রিকা থেকে তথ্য নিয়েই ফলোআপ স্টোরি করি আমরা ।

নিলু ভাই ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন আর কর্মজীবনে দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব মেজর জিয়ার সহযোদ্ধা। পরে ক্ষমতার চাবি হাতে পাওয়া এরশাদ সরকারের সাথেও গড়েছিলেন মধুর মিতালী। কালের বিবতর্নে খালেদা জিয়ার ক্ষমতার বন্ধনে বেঁধেছিলেন জোট। এমনও হতে পারে, চিন্তায় এক্সক্লুসিভ হওয়ার কারণেই, কারোর রাজনীতিতেই দেশপ্রেমের গন্ধ খুঁজে পাননি বিচিত্র ব্যক্তিত্বের এই মানুষটি। জাতীয় পার্টিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ২০০৮ সালে গড়েছিলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। আর বিএনপিকে ছেড়ে হয়েছিলেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের আহবায়ক। অনেকটা অবাক হয়েই শুনতে হয়েছিলো, শেখ হাসিনার ইফতারে যোগ দেয়ার অপরাধে নিলু সাহেবকে বিএনপি ছাড়তে হয়েছিলো। তাকে দল থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য হয়তো আরও অনেক কারণকে সামনে এনেছিলেন খালেদা জিয়া। তবে মিডিয়া পাড়া ঠিকই জানে যে, ইফতারের প্রসঙ্গটাই খালিদা জিয়াকে সিদ্ধান্ত নিতে বেশি সহযোগিতা করেছে। আমারা অভিজ্ঞতা এটাও বলে যে, ক্ষমতার স্বাদ থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকলে, বেশ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সব মাপেরই শাসক। সে হিসেবে এতবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরক্ত হবারই কথা। কেন বিএনপির একজন রাজনীতিবিদ রাজনীতিতে শত্রুপক্ষের ইফতারে যোগ দিতে যাবেন। অন্তত বাংলাদেশের মত একটা সেনসিটিভ দেশে এমন সাহস দেখানো একদমই ঠিক কাজ করেননি নিলু ভাই।

বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা ছিলেন নিলু ভাইয়ের বেড়ে উঠার সঙ্গী। বাবা ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর বন্ধু গোত্রের অন্যতম সদস্য। গোপাল গঞ্জের টুঙ্গিপাড়াতেই পরিচিত হয়েছিলেন রাজনীতির প্যাঁচালী স্বভাবের সাথে। আশ্চর্য হয়ে ভাবতে হয়, সব ক্ষমতাসীন দলের সাথেই শক্তভাবে লেগে থাকলেও, আওয়ামী লীগের সাথে কোন লিখিত সম্পর্কে চুক্তিবদ্ধ হতে দেখা যায়নি তাকে। রাজনীতির চেয়ারে নিজের বিচিত্র আদর্শ থাকার কারণে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অসীম ক্ষমতাকে হয়তো হুমকি ভেবেছিলেন। নামের শুরুতে শেখ, আর চেতনায় বঙ্গবন্ধু।  এরপরও এই দলের সাথে কেন সম্পর্ক গড়লেন না?  ক্যামেরার সামনে, প্রশ্নটার উত্তর দিয়েছিলেন মরহুমের ছোট ভাই শেখ সালাহউদ্দিন। তার কথাবার্তায় খানিকটা ঘাম দেখেছিলাম। তাই প্রশ্নটির উত্তর চাই, বঙ্গবন্ধুকে পুঁজি করে রাজনীতি করে যাওয়া দলটির কাছে। জানি অন-রেকর্ডে কোন নেতাই গঠনমূলক উত্তর দেয়ার সাহস করবেন না। সর্বোচ্চ বলতে পারেন, নিলু সাহেব মৌলবাদী ছিলেন, অথবা মেজর জিয়ার আদর্শের সৈনিক ছিলেন। আচ্ছা, তাহলে শেখ হাসিনা কেন নিলু ভাইকে ইফতার অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতে গেলেন! সময়ের সাহসী এই প্রধানমন্ত্রী কি জানতেন না এসব? আরে ভাই, যে দেশে গৌতমবুদ্ধকে সন্ত্রাসী হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করে জনকণ্ঠের মত একটা জাতীয় পত্রিকা সম্পাদকীয় ছাপায়, সেই দেশে ভালো কিছু প্রত্যাশা কয়াটা মরীচিকার মতই ।
রাজনীতি করার জন্য দেশের কোন দল থেকেই যথেষ্ঠ জ্বালানী না পাওয়ার কারণেই হয়তো নিজের চেষ্টায় গড়ে তুলেছিলেন কয়েকটি দল। রাজনীতির মাঠে সক্রিয় তরুণদের নিলু ভাই কি শিখিয়ে গেলেন সেটা অনেকটাই অস্পষ্ট আমাদের কাছে। তার এই বিচিত্র স্বভাবকে যে যাই বলুক, আমি বলব, পরিবর্তনই বাস্তবতা। যার পরিবর্তন নেই, সে জড় বস্তু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ডজন খানেক নেতাকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি। ক্ষমতার চেয়ারে খালেদা জিয়া থাকাকালীন ছাত্রদলের ক্লিন ইমেজের নেতা ছিলেন । সেই একই চেয়াওে, ব্যক্তি পরিবর্তনের সাথে সাথেই, ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে রুপান্তর। বঙ্গবন্ধু বা মেজর জিয়া আজ যদি বেঁচে থাকতেন, আমি নিশ্চিত হার্ট এ্যাটাকের শিকার হতেন কয়েকবার। দেশ একদিন মালয়েশিয়া হবে, ইন্দোনেশিয়া হবে, এমন স্বপ্ন দেখে রাজনীতি বিষয়ে অনার্স পড়া শুরু করেছিলাম। কয়েকশ কারণেই, রাজনীতি ও সুশাসন বিষয়ে আগ্রহ খুঁজে পাচ্ছি না। অনেকটা হতাশা নিয়েই লেখাটা লিখেছি, হতাশাকে অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়ে, নিজে হতাশামুক্ত হতে চেয়েছি, খুঁজে পেয়েছি শান্তির সুঘ্রাণ। এ কারণে আমাকে স্বার্থপর বলে গালিও দিতে পারেন। তবে আমি বলব, স্বার্থ ছাড়া পৃথিবীতে কোন কিছুই হয়না। এমনকি, স্বার্থকে পুঁজি কওে, খোদ সৃষ্টিকর্তাও মানুবজাতি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য, তার বিধানগুলোর প্রতি যেন আমরা বিনয়ী হয়ে উঠি। বিনিময়ে তিনি প্রতিশ্রতি দিয়েছেন নানা পুরষ্কারের। সব পুরষ্কার শুধু মৃত্যু পরবর্তী দিবসে নয়, দুনিয়াতেই এর প্রভাব বেশ প্রমাণিত এবং লক্ষ্যনীয়ও।

স্বস্তির খবর হলো, দেশের রাজনীতিতে এখন পকেটে তেল নিয়ে ঘুরার দিন শেষ। পকেটে অর্থের অস্ত্র থাকলেই, রাষ্ট্রের সবরকম চেয়ারেই শক্তিশালী মানের আঠা লাগানো যায়। বছরের পর বছর সেই চেয়ারকে বশে রাখা যায় । নির্বাচনের সময়ে শুধু আঠা পরিবর্তন করলেই চেয়ার নিশ্চিত। শীর্ষস্থানীয় সব রাজনীতিক এখন বেশ সচেতন, বড় আকারের মডেলও বলতে পারেন। এ যুগের নেতাদের হৃদয়ে ফরমালিন দিলেও সহজে ফুলে উঠেনা তাদের বুক, তাদেরকে কনভিন্স করতে প্রার্থীরা নিজেদের মানিব্যাগে বড় অঙ্কের চেক অলটাইম রাখেন। এখনকার তরুণরাও রাজনীতিতেও বেশ সচেতন। মার্ক জুকারবার্গের সাথে ডলার চুক্তিতে এখন তারাও বড় মাপের মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। তবে মিডিয়া কেলেঙ্কারিতে জড়াতে চান কেউই। এজন্য সাংবাদিকদের দূর দেখা দেখলেই, নেতাদের চোখে মুখে সাবধানি আচরণ লক্ষ্য করা যায় । কাম-আকাম যাই করেন, যেখানেই করেন, সাংবাদিকের চোখ, আপনারে চোখের ভাষা খুব ভালো করেই টের পায়। বুঝাবুঝিতে অভ্যস্ত বলতেও পারেন । তাই নতুন প্রজন্মের সাংবাদিক হিসেবে, তরুণ নেতৃত্বকে আগলে রাখা নেতাদের বলতে চাই, ক্যামেরার সামনে যতটা পরিষ্কার ইমেজ আপনার, ক্যামেরার ক্ষমতার বাইরেও ফুলের মতই পবিত্র থাকুক আপনার পরিকল্পনা ও কাজ।

ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া যেকোন শাসকের জন্য, ক্ষমতার বাইরে থাকা, অনেকটা অক্সিজেন ছাড়া পানিতে ডুবে থাকার মতই । এসময় শুধু মানুষ নয়, সময়ের সাথেও বেশ অযাচিত আচরণ শুরু করেন সব মানের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী। কয়েকদিন আগে সন্ধ্যা ৭টার প্রোগ্রামে, খালেদা জিয়া কথা বলেছেন রাত ১০.৩০ টার দিকে । সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এহেন আচরণে, তরুণ সমাজ সত্যিই অনেক সন্দিহান। খালেদা জিয়ার নিয়মিত দেরির বিষয়টি সাংবাদিকদেও আর বিরক্ত করে না। প্রথমবারের মত, গত কালকে গুলশান অফিসে যেতে হয়েছিলো। তাড়াহুড়া করে যাওয়ার কারণে সব সাংবাদিকদের চোখে মুখে ছিলো ঘুমের আভা। খালেদা জিয়া একজন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ, তকে সময়ের সাথে তিনি যে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন, এমন খবর কখনোই আসতে জাতীয় পত্রিকায় দেখিনা । প্রোগামে আওয়ামী লীগকে বহুরপী ছাড়াও নানা গালিতে সংগায়িত করলেন তিনি । গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নানা আলোচনা নোটিশ দিলেন তিনি ।

সম্পাদকীয় পাতায় প্রথম লিখছি, তবুও দায়িত্ব নিয়েই একটা মন্তব্য করতে চাই, নিজেকে সাজাতে গিয়ে শ্রদ্ধেয় খালেদা জিয়া যে পরিমাণ সময় দেন, তার অর্ধেক সময়ও যদি দেশের মানুষের প্রকৃত কল্যাণে সময় দিতেন, পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের নামটা সম্মানের সাথে উচ্চারণ করত বিশ্ববাসী। আমরা সাংবাদিক সমাজও বেশ সুবিধাবাদী হয়ে উঠছি দিনকেদিন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে, ভয় করছি প্রাণ হারানোর। আস্তিক অথবা নাস্তিক, কোন শব্দের প্রতি ঈমান আনতে পারি না আর। তবে, জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে আর প্রতিদিনের খাবারের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করি। বিশ্বাস করি, উনার ইশারা ছাড়া আমার একটা টোকাও দিতে পারবে না কেউই। কথা শেষ করতে চাই। লাখো শিক্ষার্থীর সাফল্যের প্রতিনিধি প্রিয় মুখ শরিফুল হাসান। বিসিএসএসকে কার্যকরী করতে যার লেখনী এখনো জ্বালানী যুগিয়ে যাচ্ছে। দেশে যদি আরও ডজন খানেক সাহসী কণ্ঠের জন্ম হয়, আশাবাদী হয়েই বলছি, দেশ গড়তে যে কোন প্রশাসনের কম সময় লাগবে। আর বাংলাদেশ হবে, দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্রে স্পষ্ট নক্ষত্র