ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমপির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ

পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বায়জিদ আহমেদ খান অভিযোগ করেছেন, তার এলাকার স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য ও তার তিন ভাই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। গত ৪ জুলাই মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ ভয়াবহ অভিযোগ করেন। এদিন নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রথম কর্মদিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার মানুষ ও জেলার সব উপজেলা চেয়ারম্যান, ২০-২৫ জন ইউপি চেয়ারম্যান এবং সাবেক সংসদ-সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বায়জিদ আহমেদ খান দাবি করেন, গত কুরবানির ঈদের রাতে মঠবাড়িয়ার আমগাছিয়ায় নিজ বাড়িতে একত্রিত হয়ে পিরোজপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র এমপি শামীম শাহনেওয়াজ, তার মেজো ভাই রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান রিপন, সেজো ভাই সদ্য বিদায়ি উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ও ছোট ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান (মঠবাড়িয়া) আশরাফুর রহমান তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন।

বায়জিদ আহমেদ খান বলেন, ‘চার ভাই এই ঈদুল আজহার রাতে বাড়িতে একত্রিত হয়ে এমপি শামীম শাহনেওয়াজ, আরেক ভাই রাজশাহীর এসপি সাইফুর রহমান রিপন, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, আশরাফুর রহমান গোপন বৈঠক করেছেন দু-একজন আত্মীয়স্বজন নিয়ে। যেহেতু মঠবাড়িয়ার মানুষ আমাদের প্রত্যাখ্যান করেছে, আমরা কী করতে পারি-উপনির্বাচন দিয়ে আমার (আশরাফুর রহমান) আর এমপি হওয়া হলো না, সামনের দিনেও জনগণ আমাদের প্রত্যাখ্যান করবে তাহলে বায়জিদ আহমেদ খানকে সরিয়ে দিতে হবে। তাড়িয়ে দিতে হবে। এ ধরনের পৈশাচিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে হত্যা পরিকল্পনার মতো জঘন্য কার্য করেছে। ওর ভাই এমপি শামীম শাহনেওয়াজ এবং রাজশাহীর ওই এসপি সাইফুর রহমান রিপন মিটিংয়ে বলেছেন, বায়জিদকে ফেলে দিতে হবে। আমি এসপি, ভাই এমপি, আমাদের নামে মামলা হবে না, আশরাফ না হয় কয়েকদিন জেলে থাকবা। তারপরও আমাদের পথের কাঁটা দূর করতে হবে।’

বক্তব্যে বায়জিদ খান জানান, বিষয়টি তিনি পরে স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। প্রমাণ হিসাবে ওই হত্যা পরিকল্পনার মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন ব্যক্তির ভিডিও সাক্ষাৎকারও তাদের দেখিয়েছেন। পরে ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের পরামর্শে তিনি মঠবাড়িয়া থানায় এ বিষয়ে ২২ জুন একটি সাধারণ ডায়েরিও (নং-৯৪৯) করেন। যেখানে ওই চার ভাইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বায়জিদ আহমেদ খান আরও দাবি করেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের বর্তমান সংসদ সদস্যের পরিবারের ছোট ভাই আশরাফুর রহমান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মঠবাড়িয়ায় নির্বাচন করে হেরেছিলেন। সে সময় এই এসপি রিপন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও নানা উপায়ে ভাইয়ের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওর শেষে বায়জিদ আহমেদ খান এমপি শামীম শাহনেওয়াজ ও এসপি সাইফুর রহমান রিপন পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করেন।

বক্তব্যটি রাজনৈতিক কিংবা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দেওয়া হয়েছে কিনা, বায়জিদ আহমেদ খানের কাছে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তথ্যপ্রমাণ হাতে নিয়েই তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। কোনো রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল কিংবা বিষোদ্গার থেকে এ বক্তব্য দেওয়া হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন। প্রসঙ্গত, সবশেষ উপজেলা নির্বাচনে মঠবাড়িয়ায় এসপি রিপন ও এমপি শাহনেওয়াজ পরিবারের সেজো ভাই রিয়াজউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে বিজয়ী হন বায়জিদ আহমেদ খান। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে পিরোজপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শামীম শাহনেওয়াজ। এছাড়া তাদের আরেক ভাই আশরাফুর রহমানও মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসাবে সংসদ সদস্য নির্বাচন করে পিরোজপুর-৪ আসনে জাতীয় পার্টির কাছে হেরেছিলেন।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আশিকুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাধারণ ডায়েরির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। ঊর্ধ্বতন পর্যায়েও বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমরা ওনাকে (উপজেলা চেয়ারম্যান বায়জিদ আহমেদ) বলেছি, যে কোনো প্রয়োজনে যেন আমার বা আমাদের ঊর্ধ্বতনদের অবগত করেন। আমরা তার নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’ হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য শামীম শাহনেওয়াজ বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। এমন কোনো পরিকল্পনা করার প্রশ্নই আসে না।’

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

এমপির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ

আপডেট টাইম : ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪

পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বায়জিদ আহমেদ খান অভিযোগ করেছেন, তার এলাকার স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য ও তার তিন ভাই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। গত ৪ জুলাই মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ ভয়াবহ অভিযোগ করেন। এদিন নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রথম কর্মদিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার মানুষ ও জেলার সব উপজেলা চেয়ারম্যান, ২০-২৫ জন ইউপি চেয়ারম্যান এবং সাবেক সংসদ-সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বায়জিদ আহমেদ খান দাবি করেন, গত কুরবানির ঈদের রাতে মঠবাড়িয়ার আমগাছিয়ায় নিজ বাড়িতে একত্রিত হয়ে পিরোজপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র এমপি শামীম শাহনেওয়াজ, তার মেজো ভাই রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান রিপন, সেজো ভাই সদ্য বিদায়ি উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ও ছোট ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান (মঠবাড়িয়া) আশরাফুর রহমান তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন।

বায়জিদ আহমেদ খান বলেন, ‘চার ভাই এই ঈদুল আজহার রাতে বাড়িতে একত্রিত হয়ে এমপি শামীম শাহনেওয়াজ, আরেক ভাই রাজশাহীর এসপি সাইফুর রহমান রিপন, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, আশরাফুর রহমান গোপন বৈঠক করেছেন দু-একজন আত্মীয়স্বজন নিয়ে। যেহেতু মঠবাড়িয়ার মানুষ আমাদের প্রত্যাখ্যান করেছে, আমরা কী করতে পারি-উপনির্বাচন দিয়ে আমার (আশরাফুর রহমান) আর এমপি হওয়া হলো না, সামনের দিনেও জনগণ আমাদের প্রত্যাখ্যান করবে তাহলে বায়জিদ আহমেদ খানকে সরিয়ে দিতে হবে। তাড়িয়ে দিতে হবে। এ ধরনের পৈশাচিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে হত্যা পরিকল্পনার মতো জঘন্য কার্য করেছে। ওর ভাই এমপি শামীম শাহনেওয়াজ এবং রাজশাহীর ওই এসপি সাইফুর রহমান রিপন মিটিংয়ে বলেছেন, বায়জিদকে ফেলে দিতে হবে। আমি এসপি, ভাই এমপি, আমাদের নামে মামলা হবে না, আশরাফ না হয় কয়েকদিন জেলে থাকবা। তারপরও আমাদের পথের কাঁটা দূর করতে হবে।’

বক্তব্যে বায়জিদ খান জানান, বিষয়টি তিনি পরে স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। প্রমাণ হিসাবে ওই হত্যা পরিকল্পনার মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন ব্যক্তির ভিডিও সাক্ষাৎকারও তাদের দেখিয়েছেন। পরে ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের পরামর্শে তিনি মঠবাড়িয়া থানায় এ বিষয়ে ২২ জুন একটি সাধারণ ডায়েরিও (নং-৯৪৯) করেন। যেখানে ওই চার ভাইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বায়জিদ আহমেদ খান আরও দাবি করেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের বর্তমান সংসদ সদস্যের পরিবারের ছোট ভাই আশরাফুর রহমান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মঠবাড়িয়ায় নির্বাচন করে হেরেছিলেন। সে সময় এই এসপি রিপন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও নানা উপায়ে ভাইয়ের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওর শেষে বায়জিদ আহমেদ খান এমপি শামীম শাহনেওয়াজ ও এসপি সাইফুর রহমান রিপন পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করেন।

বক্তব্যটি রাজনৈতিক কিংবা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দেওয়া হয়েছে কিনা, বায়জিদ আহমেদ খানের কাছে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তথ্যপ্রমাণ হাতে নিয়েই তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। কোনো রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল কিংবা বিষোদ্গার থেকে এ বক্তব্য দেওয়া হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন। প্রসঙ্গত, সবশেষ উপজেলা নির্বাচনে মঠবাড়িয়ায় এসপি রিপন ও এমপি শাহনেওয়াজ পরিবারের সেজো ভাই রিয়াজউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে বিজয়ী হন বায়জিদ আহমেদ খান। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে পিরোজপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শামীম শাহনেওয়াজ। এছাড়া তাদের আরেক ভাই আশরাফুর রহমানও মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসাবে সংসদ সদস্য নির্বাচন করে পিরোজপুর-৪ আসনে জাতীয় পার্টির কাছে হেরেছিলেন।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আশিকুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাধারণ ডায়েরির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। ঊর্ধ্বতন পর্যায়েও বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমরা ওনাকে (উপজেলা চেয়ারম্যান বায়জিদ আহমেদ) বলেছি, যে কোনো প্রয়োজনে যেন আমার বা আমাদের ঊর্ধ্বতনদের অবগত করেন। আমরা তার নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’ হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য শামীম শাহনেওয়াজ বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। এমন কোনো পরিকল্পনা করার প্রশ্নই আসে না।’