ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দ্রুত এগোচ্ছে বাংলাদেশ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাওয়া বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জন। অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। এর কারণ, পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়া এদেশের বেশিরভাগ মানুষ দেশপ্রেমিক ও দায়িত্বশীল।

গত বৃহস্পতিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মতামত দেন বিভিন্ন সময়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এই অর্থনীতিবিদ। পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া এবং দেশের অর্থনীতির কিছু বিষয়ে বিশেষত সঞ্চয়পত্রের সুদহার নিয়ে কথা বলেন তিনি। ড. ফরাসউদ্দিন মনে করেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলে সমাজের বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সম্প্রতি প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি ১ হাজার ৪৭০ ডলার। বাংলাদেশে তা ১ হাজার ৫৩৮ ডলার।

পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৬৮ ডলার বেশি। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। এ অর্জন বাংলাদেশের জন্য অনেক বড়। এতে করে সবাই আরও বেশি উৎসাহিত বোধ করবেন।’

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ উল্লেখ করে ড. ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ। সেদেশে বিদ্যুতের তীব্র অভাব আছে। গ্যাস থাকলেও দাম নির্ধারণ নিয়ে বিরোধ রয়েছে। পাকিস্তানে বৈষম্যও ব্যাপক। বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মূলত মধ্যবিত্তের দেশ। অবকাঠামো উন্নয়ন যত দূর সম্ভব করা হয়েছে। কৃষকরা প্রচুর পরিশ্রম করছেন। দেশ স্বাধীনের পর জিডিপিতে শিল্পের অবদান ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিল্পের প্রসার ঘটেছে। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। যত শিল্প বাড়বে তত মানুষের চাকরি হবে। সমৃদ্ধির একটা চক্র তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। ফলে উচ্চহারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে ।

তিনি বলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৭০ ডলার। আর সরকারি হিসাবে এখন ১ হাজার ৬০২ ডলার। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক দ্রুত এগিয়েছে বাংলাদেশ।

সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য প্রসঙ্গ : ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুবিধাভোগী দেশের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে রয়েছে। মধ্যবিত্তরা এখানে বিনিয়োগ করছেন। বিশাল এই জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অনেক অবদান রাখছেন। সঞ্চয়পত্রের বিষয়টি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এর সুদহার কমানো ঠিক হবে না। তিনি বলেন, শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ছে। ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বমুখী ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্প্রতি আমানতের সুদহার সামান্য বেড়েছে। কাজেই সঞ্চয়পত্রে সুদ হার কমালে সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া বাড়বে। এতে করে বেসরকারি খাতের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।

ফরাসউদ্দিন বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার বেশি। এতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, এই মুনাফা পাচ্ছে সমাজের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী, যারা ব্যাপক অবদান রাখছেন অর্থনৈতিক উন্নয়নে। এখানে বিনিয়োগ করে যে আয় করেন, তা দিয়ে লাখ লাখ পরিবারের জীবিকা চলছে। উপকৃত হচ্ছেন তারা। সুদহার কমিয়ে এদের জীবনকে বাধাগ্রস্ত করা ঠিক হবে না। এটা করা হলে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হবে। সুদহার কমালে রাজনৈতিকভাবে অসুবিধা হবে বলে মনে করেন তিনি। যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। এই সময় এখানে হাত দিলে অজনপ্রিয় হবে সরকার। সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে যে সীমা আছে, তা ঠিকমতো মানা হয় না। এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। দরকার হলে সীমা বর্তমানের চেয়ে কিছুটা কমতে পারে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে সঞ্চয়পত্রে ক্রয়ে অনুমিত দেওয়া হয়েছে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করতে হবে।

ফরাসউদ্দিন বলেন, ব্যাংক আমানতের সুদহার কমলেও ঋণের সুদহার সেভাবে কমেনি। আমানত ও ঋণের সুদ হারের পার্থক্য বা স্প্রেড নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব সঠিক নয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলো স্বচ্ছভাবে হিসাব প্রকাশ করছে না। ফরাসউদ্দিন বলেন, স্প্রেড প্রায় দেশেই সাড়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে থাকে। আমাদের দেশে ৫ শতাংশ হলে ধরে নেওয়া হয় ঠিক আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি ৫ শতাংশের বেশি। অনেক নামি-দামি ব্যাংকে স্প্রেড ৮ থেকে ৯ শতাংশের মতো।

রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে ফরাসউদ্দিন বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ফলে শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি করে শ্রমিক নেবে। পাশাপাশি বাংলাদেশি শ্রমিকের দক্ষতাও বাড়ছে। তিনি বলেন, টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার বাড়ছে। আগে এক ডলার ৭৮ টাকা ছিল। এখন ৮০ টাকা। এ কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ এখন বাড়ছে।

ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অবকাঠামো আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আগামী বছর থেকে এলএনজি আমদানি করা হবে। ফলে গ্যাস সরবরাহ সংকট কেটে যাবে। নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

সাবেক গভর্নর আরও বলেন, উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে মাথাপিছু আয় চার হাজার ডলারের বেশি হতে হবে। এ জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। যেভাবে এগোচ্ছে দেশ, তাতে আগামী ২০২৭ সালে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ভারতসহ অন্যান্য দেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে যেতে ১৫ থেকে ১৭ বছর লেগেছে। বাংলাদেশ ২০১২ সালে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে এক ধাপ অতিক্রম করে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পৌছেছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ওইসব দেশের আগেই উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দ্রুত এগোচ্ছে বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ১২:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাওয়া বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জন। অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। এর কারণ, পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়া এদেশের বেশিরভাগ মানুষ দেশপ্রেমিক ও দায়িত্বশীল।

গত বৃহস্পতিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মতামত দেন বিভিন্ন সময়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এই অর্থনীতিবিদ। পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া এবং দেশের অর্থনীতির কিছু বিষয়ে বিশেষত সঞ্চয়পত্রের সুদহার নিয়ে কথা বলেন তিনি। ড. ফরাসউদ্দিন মনে করেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলে সমাজের বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সম্প্রতি প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি ১ হাজার ৪৭০ ডলার। বাংলাদেশে তা ১ হাজার ৫৩৮ ডলার।

পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৬৮ ডলার বেশি। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। এ অর্জন বাংলাদেশের জন্য অনেক বড়। এতে করে সবাই আরও বেশি উৎসাহিত বোধ করবেন।’

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ উল্লেখ করে ড. ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ। সেদেশে বিদ্যুতের তীব্র অভাব আছে। গ্যাস থাকলেও দাম নির্ধারণ নিয়ে বিরোধ রয়েছে। পাকিস্তানে বৈষম্যও ব্যাপক। বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মূলত মধ্যবিত্তের দেশ। অবকাঠামো উন্নয়ন যত দূর সম্ভব করা হয়েছে। কৃষকরা প্রচুর পরিশ্রম করছেন। দেশ স্বাধীনের পর জিডিপিতে শিল্পের অবদান ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিল্পের প্রসার ঘটেছে। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। যত শিল্প বাড়বে তত মানুষের চাকরি হবে। সমৃদ্ধির একটা চক্র তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। ফলে উচ্চহারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে ।

তিনি বলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৭০ ডলার। আর সরকারি হিসাবে এখন ১ হাজার ৬০২ ডলার। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক দ্রুত এগিয়েছে বাংলাদেশ।

সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য প্রসঙ্গ : ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুবিধাভোগী দেশের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে রয়েছে। মধ্যবিত্তরা এখানে বিনিয়োগ করছেন। বিশাল এই জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অনেক অবদান রাখছেন। সঞ্চয়পত্রের বিষয়টি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এর সুদহার কমানো ঠিক হবে না। তিনি বলেন, শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ছে। ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বমুখী ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্প্রতি আমানতের সুদহার সামান্য বেড়েছে। কাজেই সঞ্চয়পত্রে সুদ হার কমালে সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া বাড়বে। এতে করে বেসরকারি খাতের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।

ফরাসউদ্দিন বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার বেশি। এতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, এই মুনাফা পাচ্ছে সমাজের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী, যারা ব্যাপক অবদান রাখছেন অর্থনৈতিক উন্নয়নে। এখানে বিনিয়োগ করে যে আয় করেন, তা দিয়ে লাখ লাখ পরিবারের জীবিকা চলছে। উপকৃত হচ্ছেন তারা। সুদহার কমিয়ে এদের জীবনকে বাধাগ্রস্ত করা ঠিক হবে না। এটা করা হলে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হবে। সুদহার কমালে রাজনৈতিকভাবে অসুবিধা হবে বলে মনে করেন তিনি। যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। এই সময় এখানে হাত দিলে অজনপ্রিয় হবে সরকার। সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে যে সীমা আছে, তা ঠিকমতো মানা হয় না। এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। দরকার হলে সীমা বর্তমানের চেয়ে কিছুটা কমতে পারে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে সঞ্চয়পত্রে ক্রয়ে অনুমিত দেওয়া হয়েছে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করতে হবে।

ফরাসউদ্দিন বলেন, ব্যাংক আমানতের সুদহার কমলেও ঋণের সুদহার সেভাবে কমেনি। আমানত ও ঋণের সুদ হারের পার্থক্য বা স্প্রেড নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব সঠিক নয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলো স্বচ্ছভাবে হিসাব প্রকাশ করছে না। ফরাসউদ্দিন বলেন, স্প্রেড প্রায় দেশেই সাড়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে থাকে। আমাদের দেশে ৫ শতাংশ হলে ধরে নেওয়া হয় ঠিক আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি ৫ শতাংশের বেশি। অনেক নামি-দামি ব্যাংকে স্প্রেড ৮ থেকে ৯ শতাংশের মতো।

রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে ফরাসউদ্দিন বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ফলে শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি করে শ্রমিক নেবে। পাশাপাশি বাংলাদেশি শ্রমিকের দক্ষতাও বাড়ছে। তিনি বলেন, টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার বাড়ছে। আগে এক ডলার ৭৮ টাকা ছিল। এখন ৮০ টাকা। এ কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ এখন বাড়ছে।

ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অবকাঠামো আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আগামী বছর থেকে এলএনজি আমদানি করা হবে। ফলে গ্যাস সরবরাহ সংকট কেটে যাবে। নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

সাবেক গভর্নর আরও বলেন, উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে মাথাপিছু আয় চার হাজার ডলারের বেশি হতে হবে। এ জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। যেভাবে এগোচ্ছে দেশ, তাতে আগামী ২০২৭ সালে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ভারতসহ অন্যান্য দেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে যেতে ১৫ থেকে ১৭ বছর লেগেছে। বাংলাদেশ ২০১২ সালে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে এক ধাপ অতিক্রম করে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পৌছেছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ওইসব দেশের আগেই উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারবে।