বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। বাংলাদেশে এটি তাঁর দ্বিতীয় সফর।
দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরেও ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। এবারের সফরের প্রথম দিনে তিনি বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকে অংশ নেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিএনপিপ্রধানের সঙ্গেও তাঁর আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে ভারতের টাকায় বাংলাদেশের ১৫টি প্রকল্প এবং ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সারি কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন তিনি।
কমিশনের চতুর্থ বৈঠকে পানিসম্পদবিষয়ক সহযোগিতা; সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও কট্টরপন্থা মোকাবেলা এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের পর দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, পারস্পরিক বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, কানেকটিভিটি, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, জাহাজ চলাচল, মানুষে মানুষে যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে অগ্রগতি সন্তোষজনক। বাংলাদেশকে মঞ্জুরি সহায়তা দিচ্ছে ভারত।
গত তিন বছরে ২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। আরো ৫৮টি প্রকল্পের কাজ চলছে। মঞ্জুরি প্রকল্পের আওতায় শিলিগুড়ি-পার্বতীপুর পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৯৬৫ সালের আগে যেসব সড়ক, রেল ও নৌপথ চালু ছিল সেগুলো আবার সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস শিগগির চালু হবে।
রোহিঙ্গাদের বিষয়েও কথা বলেন সুষমা স্বরাজ। তবে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি তিনি, তাদের ‘শরণার্থীও’ বলেননি। ‘বাস্তুচ্যুত’ শব্দ ব্যবহার করে তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতি ইঙ্গিত করেন। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী সে ইঙ্গিতও দেন। তাঁর মতে, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে যারা বাংলাদেশে এসেছে তারা ফিরে গেলেই সেখানে স্বাভাবিকতা ফিরবে। এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হলো, রাখাইন রাজ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। ভারত তাতে সহায়তা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো ভারত সমর্থন করে। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, অনুপ্রবেশ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রতি ভারত সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। অং সান সু চির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বার্তার বিষয়েও তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
কমিশনের বৈঠকে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য নতুন প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সেগুলো ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিবেচনার কথা বলেছে ভারত। ঢাকা-চেন্নাই-কলম্বো বিমান চলাচল, চট্টগ্রাম-কলকাতা-কলম্বো জাহাজ চলাচল, পঞ্চগড়-শিলিগুড়ি রেল যোগাযোগ, ভারতীয় ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে ভুটানের সঙ্গে ইন্টারনেট যোগাযোগ, বাংলাদেশের নাকুগাঁও স্থলবন্দর থেকে ভারতের ডলু হয়ে ভুটানের গাইলেফুং স্থলবন্দরের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগের কথা রয়েছে প্রস্তাবে। তিস্তাসহ যৌথ নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সুষমা স্বরাজ তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ভারত সরকার এর সমাধানের চেষ্টা করছে। তবে চুক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কথা বলেননি তিনি। কমিশনের সভা শেষে দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই তাঁর সফরকে ফলপ্রসূ করেছে বটে, তবে তিস্তার বিষয়ে অগ্রগতি হলে সফর পরিপূর্ণ হতো।