সহায়ক সরকারের রূপরেখা কবে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ   তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে সরে এসে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে সোচ্চার বিএনপি। কিন্তু এই সরকার কেমন হবে, সে বিষয়ে ধারণা নেই দলটির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতার। কারণ, গত অক্টোবরে এই সরকারের ধারণার কথা বললেও তার রূপরেখা দেননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের সময় ‘স্বাধীন নির্বাচন কমিশন’কে সহায়তা করতে সহায়ক সরকারের কথা তোলেন খালেদা জিয়া। বলেন সুবিধামত সময়ে এই সরকারের রূপরেখা তুলে ধরবেন তিনি। কিন্তু সেই ঘোষণার আট মাস পেরোলেও কবে নাগাদ রূপরেখা আলোর মুখ দেখবে নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লন্ডন সফর থেকে দেশে ফিরে খালেদা জিয়া সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করতে পারেন। রূপরেখার খসড়া তৈরির কাজ চলছে। সেক্ষেত্রে রূপরেখা চূড়ান্ত করে জুলাইয়ের শেষের দিকে বা আগস্টে ঘোষণা হতে পারে।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার সময় এর তীব্র বিরোধিতা করে বিএনপি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার দাবিতে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে সহিংস আন্দোলন করলেও নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি তারা। পরের বছর সরকার পতন আন্দোলনে নেমেও ব্যর্থ হয় তারা।

আর রাজনীতিতে বেকায়দায় পড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসে সহায়ক সরকারের দাবি তুলেছে বিএনপি।

সম্প্রতি সহায়ক সরকারের বিষয়ে দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক ও এ নিয়ে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়া। বৈঠকে এর সার্বিক বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। যদিও বৈঠক নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।

সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণার বিষয় জানতে কথা বললে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘যতটুকু জানি সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন খসড়া পর্যায়ে আছে। শিগগিরই এটা চূড়ান্ত করে দেশবাসীর সামনে ‍তুলে ধরা হবে। আর ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) তো বলেছেন, ঈদের পরেই রূপরেখা দেবেন। ঈদ তো কেবল শেষ হলো।’

বিএনপির নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাব গুরুত্ব দেয়নি সরকারি দল। একইভাবে সহায়ক সরকারের দাবিও না মানার কথা বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

এই অবস্থায় সহায়ক সরকারের দাবিও যদি মানা না হয় তাহলে বিএনপি কী করবে?- জানতে চাইলে দুদু বলেছেন, ‘সমঝোতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এই রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। তবে সমঝোতার পাশাপাশি নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প চিন্তাও রাখা হচ্ছে।’

‘বিএনপি আলোচনায় বিশ্বাস করে। রূপরেখা দিয়ে সেটা নিয়ে সরকারকে আলোচনার প্রস্তাব দেব। আলোচনায় সমাধান হলে ভালো। সমাধান না হলে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প থাকবে না।’

যা থাকতে পারে সহায়ক সরকারে

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহায়ক সরকারের রূপরেখায় প্রধানমন্ত্রীকে সরকারের বাইরে রেখে অথবা প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা কমিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব থাকতে পারে।

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখায় বিএনপি তিন ধরনের প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তিন প্রস্তাবের প্রথমটিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে না রেখে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন করার প্রস্তাব রয়েছে। খসড়ায় ১৯৯০ সালের অভিজ্ঞতার আলোকে সব দলের সম্মতির ভিত্তিতে কীভাবে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব সেদিকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

বাকি দুটি প্রস্তাবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকলেও তার নির্বাহী ক্ষমতা কমানোর কথা থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান রেখে নিবন্ধিত বা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে সর্বদলীয় সরকারের আদলে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার প্রস্তাব থাকবে।

সর্বশেষ, তৃতীয় রূপরেখায় দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের টেকনোক্র্যাট কোটায় স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন করার প্রস্তাব থাকতে পারে। এ রূপরেখায় সরকার প্রধান হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে না রেখে তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে করার প্রস্তাব থাকবে।

যতদূর জানা গেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত প্রথম প্রস্তাবটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত রয়েছে। বাকি দুটি ঘোষণা নাও হতে পারে। প্রথম প্রস্তাবটি দেয়ার পর ওই রূপরেখার আলোকে প্রধানমন্ত্রীকে সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হবে। এজন্য আওয়ামী লীগকে চিঠি দেয়া হতে পারে।

সহায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা বিএনপিপন্থী সাবেক একজন আমলা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘সহায়ক সরকারে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হবে।সেই আলোকে কাজ করা হচ্ছে। তবে সরকারকেও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বিএনপির প্রস্তাব সরকার যাতে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতে না পারে সেটাই ভাবা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর