৫৬০ শিক্ষার্থীর একজনও আসে না স্কু্লে, অলস সময় কাটান শিক্ষকরা

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৫৬০ জন। শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন ১৬ জন। কিন্তু ৫৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন শিক্ষার্থীও বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকে না। শিক্ষক-কর্মচারীরাও সময় মতো আসে না।

যারা আসেন তারাও অফিস রুমে বসে আড্ডায় ব্যস্ত থাকেন। কোনো কোনো শিক্ষক আবার অফিস রুমে বসে মনের সুখে ধূমপান করেন। এমন চিত্র দেখা গেছে মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের পদমশ্রী এ. ইউ. খান উচ্চ বিদ্যালয়ের।আজ বুধবার (৮ মে) সকাল ১১টার দিকে ওই বিদ্যালয়ে গেলে এমন চিত্র চোখে পড়ে।

শুধু আজই নয় বিগত কয়েক বছর ধরেই শিক্ষার বেহাল অবস্থা বিদ্যালয়টিতে।অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাকার সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হাওরাঞ্চলে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য ১৯৭৬ সালে পদমশ্রী গ্রামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৪ জন শিক্ষক ও দুই জন কর্মচারী কর্মরত আছেন। শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৫৬০ জন। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকে না। শিক্ষকরাও নিজেদের মতো করে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করেন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার (৭ মে) সকাল ১১টার দিকে বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায়, জাতীয় পতাকা উড়ছে।
নিচতলার স্টাফ রুমে একজন নারী কর্মচারী শুয়ে ঘুমিয়ে আছেন। পাশেই একজন শিক্ষক এক শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। দ্বিতীয় তলার অফিস রুমে ৪/৫ জন শিক্ষক আড্ডায় ব্যস্ত। শিক্ষক স্টাফ রুমে দুইজন শিক্ষক বসে মনের সুখে গল্প করছেন আর সিগারেট খাচ্ছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীও উপস্থিত নেই।শিক্ষার্থীদের অভিভাবক পলিন, নূরুল ইসলাম, সানাউল্লাহসহ অনেকেই জানান, এই বিদ্যালয়ে এখন আর লেখাপড়া হয় না। তাই আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিদ্যালয়ে যায় না। বিদ্যালয়ে লেখাপড়া না হওয়ায় অনেক ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। যাদের সাধ্য আছে তারা উপজেলা সদরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের গাফিলতি ও ম্যানেজিং কমিটির উদাসীনতা বিদ্যালয়ের এমন অবস্থা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক অভিভাবক জানান, প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সরকার দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় এলাকার লোকজন কিছু বলতে সাহস পায় না। ফলে তারা নিজেদের ইচ্ছামতো বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান জানান, প্রধান শিক্ষক অফিসের কাজে মদন রয়েছেন। অফিস সহকারীসহ ৮ জন শিক্ষক উপস্থিত আছেন। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই। শিক্ষার্থীরা এখন কৃষি কাজে ব্যস্ত। বাকি শিক্ষকরা কেন আসেনি সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

জানতে চাইলে উপজেলা একাডেমি সুপারভাইজার জোসনা বেগম জানান, পদমশ্রী এ.ইউ.খান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা। লেখাপড়া হয় না এই বিষয়ে এলাকার লোকজন আমাদের বিষয়টি জানিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ঠিকমতো মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে না।

মদন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল বারী জানান, আমি অসুস্থ তাই ময়মনসিংহে আছি। বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষককে ফোন দিয়েছি। কাল এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হবে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অধীর চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর