কিশোরগঞ্জ-৪ পিতার প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে পুত্রের নির্বাচনী যুদ্ধ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইন) আসনে এবার দেখা দিয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন আমেজ। কারণ এ আসনের তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান, কিশোরগঞ্জের অবিসংবাদিত নেতা, সাতবারের এমপি মো. আবদুল হামিদ অনেক আগেই দলীয় রাজনীতি ছেড়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। ফলে শূন্য আসনটির উপনির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে এসেছে নতুন মুখ- তারই বড় ছেলে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও রেজওয়ান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হন। অতীতে  এ আসনের নির্বাচনে আবদুল হামিদের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কাছে বারবার হার মেনেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান। এক সময়ের তুখোড় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুর রহমান ছাত্রজীবন থেকেই তার বাগ্মিতার জন্য জনপ্রিয়। সামনের নির্বাচনেও তিনি যে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবেন, এটি প্রায় নিশ্চিত। তাই যদি হয় তাহলে আগামী নির্বাচন হবে পুত্রের সঙ্গে পিতার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটযুদ্ধ। কারণ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পর আবদুল হামিদের আর নির্বাচন করার সম্ভাবনা নেই। তাই শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, দেশজুড়েই কৌতূহল দেখা দিয়েছে এ ভোটযুদ্ধ নিয়ে।

১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে কিশোরগঞ্জ-২ (সদর) আসনের এমপি নির্বাচিত হলেও পরবর্তী সময় দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করায় মো. ফজলুর রহমানকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। এরপর তিনি কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগে যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে হেরে যান।

সরেজমিন হাওর ঘুরে এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটারদের মূল আলোচনা নৌকা ও ধানের শীষের সম্ভাব্য এই প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। তবে আরও অনেকেই মনোনয়নের লক্ষ্যে কাজ করছেন। তারা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি নানা সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে প্রাথমিক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। তারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীদের সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। অনেকে জনসংযোগের পাশাপাশি শোডাউন করছেন, পোস্টার ও ব্যানারের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক চৈত্রের বন্যার পর থেকেই এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনি ছাড়াও এ আসনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহাজাহান। নির্বাচন করার প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে চাই। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে হাওরের তিন উপজেলায় সভা-সমাবেশ করছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছি, সহযোগিতা করেছি।

তবে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী জানান, বর্তমান এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক একটানা এলাকায় অবস্থান করে গণসংযোগ ও জনকল্যাণমূলক কাজের মধ্য দিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এর মধ্যেই আলাদা ইমেজ সৃষ্টি করেছেন। তিনি হাওরের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন। বাঙালী কণ্ঠকে এমপি রেজওয়ান বলেন, হাওরের ব্যাপক উন্নয়নে বাবার অবদানকে তিনি বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে অব্যাহত রেখেছেন। নিরলসভাবে হাওরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন। তার বাবার রাজনৈতিক শিক্ষা-দীক্ষা কখনোই ব্যর্থ হবে না। হাওরবাসী নিশ্চয়ই তাকে মূল্যায়ন করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি জানান, বড় দলে কিছু সমস্যা থাকবেই। তবে কেন্দ্রের চূড়ান্ত ঘোষণার পর সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই নৌকার পক্ষে কাজ করবে।

এ প্রসঙ্গে ইটনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী মো. খলিলুর রহমান বলেন, বর্তমান এমপি রেজওয়ান আহম্মেদই আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের উত্তরাধিকার এবং একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে এমপি তৌফিক ইতিমধ্যেই তার অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন।

স্থানীয়দের মতে, আওয়ামী লীগে যে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বিভক্তি রয়েছে নির্বাচনে তা নেতিবাচক প্রভাব নাও ফেলতে পারে। তবে বিএনপির দ্বিধাবিভক্তি এত বেশি যে, এ আসনে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। বিএনপি থেকে এবার আইনজীবী ফজলুর রহমান ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সাবেক এমপি ফরহাদ আহমেদ কাঞ্চনের ছেলে ড্যাব নেতা ডা. ফেরদৌস আহাম্মেদ লাকী, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি ও সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সুরঞ্জন ঘোষ, মিঠামইন উপজেলা বিএনপি সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ছাত্রনেতা মো. অসীম ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভুঞা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান বলেন, দলীয় প্রার্থী হব, তা নিশ্চিত। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় না বলে বারবার হেরে যাই। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে জয়ের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, হাওরবাসী ক্ষমতার পরিবর্তন চায়। এবারের নির্বাচনে নিজেকে এভাবেই প্রস্তুত করছি।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ডা. ফেরদৌস আহাম্মেদ লাকী বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাবাকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করতেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াও তা জানেন। নেত্রী ও দল তাকে মূল্যায়ন করলে ভোটযুদ্ধের মাধ্যমে পটপরিবর্তন করতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি। প্রার্থী সুরঞ্জন ঘোষ বলেন, একাধিকবার দলের মনোনয়ন চেয়েছি। এবার দল নিশ্চয়ই মূল্যায়ন করবে।

এদিকে ইটনা উপজেলা পরিষদে বিএনপি থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আমিনুল ইসলাম রতনও এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। তিনি জানান, এই রাজনীতির মাঠে তিনিই দলের উপযুক্ত প্রার্থী। আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন তিনি।

দলের দুর্দিনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন জানিয়ে উপজেলা বিএনপি সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর বলেন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে দল ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবে বলে বিশ্বাস করি। তবে দল যাকে প্রার্থী করবে তার পক্ষেই কাজ করব।

মো. অসীম জানান, আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এ আসন শূন্য হলে তিনি সাহসের সঙ্গে উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন। দল নিশ্চয়ই এর মূল্যায়ন করবে। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভুঞা বলেন, একজন বর্ষীয়ান ও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা হিসেবে তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী।

এ ছাড়াও এই আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অষ্টগ্রাম উপজেলার জাতীয় পার্টির সভাপতি কাজী আফতাব ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা তপু ভূঁইয়ার নাম শোনা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন আফতাব। নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাসদের তপু ভূঁইয়া।

সূত্রঃ সমকাল

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর