ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজিতপুরে চলছে অবৈধ বালু তোলার ‘মহোৎসব’

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাজিতপুর শহরের এখানে-সেখানে এখন প্রায়ই চোখে পড়ে প্লাস্টিকের মোটা পাইপ। মূল সড়কের ওপর দিয়ে গেছে অনেক পাইপ। এসব পাইপের মাধ্যমে আসলে নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা বালু বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশাল আকারের লোড ড্রেজার আর বাল্কহেড নৌযান। এসব নৌযান সাত হাজার ঘনফুট পর্যন্ত বালু ধারণে সক্ষম। এই বালু দিয়ে অবাধে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর-ডোবা ও জলাশয়। প্রায় তিন মাস ধরে সেখানে চলছে এ ‘মহোৎসব’।

বালু ব্যবসায় সম্পৃক্তরা জানায়, বাজিতপুর, নিকলী এবং মিঠামইনসহ কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলে প্রায় ২০টি লোড ড্রেজার (বালু তোলার যন্ত্র) বসানো হয়েছে। এসব ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২৫ লাখ ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের তিন মাসে প্রতিটি লোড ড্রেজার এক থেকে সোয়া কোটি ঘনফুট বালু তুলেছে। হিসাব করে দেখা গেছে, তিন মাসে ২০টি লোড ড্রেজার দিয়ে তোলা বালুর পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি ঘনফুট, যার বাজারমূল্য কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা।

বাজিতপুর, নিকলী ও মিঠামইন ছাড়াও ইটনা, অষ্টগ্রাম, কুলিয়ারচর এবং ভৈরবসহ সর্বত্রই বালু তোলার কর্মযজ্ঞ চলছে। বিশেষ করে ঘোড়াউত্রা, ধনু, হাটুরিয়া, কোলাসহ বিভিন্ন নদী ও চরে অন্তত ২০টি ‘লোড’ ড্রেজার বসানো রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সূর্য ওঠার আগেই প্রতিটি লোড ড্রেজারের আশপাশে বাল্কহেড নৌযানের (বালু রাখার নৌযান) ভিড় জমে যায়। দিনব্যাপী চলে বালু পরিবহনের কাজ।

বালুর অবৈধ ব্যবসায় জড়িত একাধিক ব্যক্তি ও এলাকাবাসী জানায়, নদীতে প্রকাশ্যে লোড ড্রেজার বসিয়ে দিনের পর দিন অবৈধভাবে বালু তুলছে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা এক শ্রেণির প্রভাবশালী লোকজন। এর আগে দু-একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বালু বহনকারীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে ‘মূল কারিগর’রা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।

নিকলীর ছাতিরচর গ্রামের পাশে বিলুপ্ত বিয়াতিরচরে অবৈধভাবে বালু তুলছে তিনটি লোড ড্রেজার। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একের পর এক বাল্কহেড ভিড়ছে আর ড্রেজার দিয়ে বালু ভরে নিয়ে যাচ্ছে। ড্রেজারের লোকজন জানান, সাত হাজার ঘনফুট পর্যন্ত বালু ধারণে সক্ষম প্রতিটি নৌযান ভরতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে।

বালু তোলার এই কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে হাতে গোনা ১০-১২ জন। বিয়াতিরচরে একটি লোড ড্রেজার চালাচ্ছিলেন ভৈরবপুরের ওমর মিয়া।

আন্দোলন, অভিযোগ দায়ের : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদীর বাইরে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ও চরা থেকেও বালু তোলা হচ্ছে। বেপরোয়াভাবে বালু তোলায় ক্ষতির শিকার হচ্ছে অনেকেই। ক্ষতিগ্রস্তরা বালু উত্তোলন বন্ধে আন্দোলন করছে। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগও জানিয়েছে। কিন্তু তেমন কোনো প্রতিকার মেলেনি। গতকাল শুক্রবারও ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাজিতপুরের মাইজচর গ্রামবাসী।

প্রশাসনের বক্তব্য : কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস গতকাল বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘সরাসরি যারা বালু তোলার কাজে জড়িত থাকে, প্রথমে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হয়। যে কারণে জেল-জরিমানা হয় তাদেরই। এখন এদের নেপথ্যে যদি কেউ থাকে, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বাজিতপুরে চলছে অবৈধ বালু তোলার ‘মহোৎসব’

আপডেট টাইম : ০১:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাজিতপুর শহরের এখানে-সেখানে এখন প্রায়ই চোখে পড়ে প্লাস্টিকের মোটা পাইপ। মূল সড়কের ওপর দিয়ে গেছে অনেক পাইপ। এসব পাইপের মাধ্যমে আসলে নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা বালু বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশাল আকারের লোড ড্রেজার আর বাল্কহেড নৌযান। এসব নৌযান সাত হাজার ঘনফুট পর্যন্ত বালু ধারণে সক্ষম। এই বালু দিয়ে অবাধে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর-ডোবা ও জলাশয়। প্রায় তিন মাস ধরে সেখানে চলছে এ ‘মহোৎসব’।

বালু ব্যবসায় সম্পৃক্তরা জানায়, বাজিতপুর, নিকলী এবং মিঠামইনসহ কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলে প্রায় ২০টি লোড ড্রেজার (বালু তোলার যন্ত্র) বসানো হয়েছে। এসব ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২৫ লাখ ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের তিন মাসে প্রতিটি লোড ড্রেজার এক থেকে সোয়া কোটি ঘনফুট বালু তুলেছে। হিসাব করে দেখা গেছে, তিন মাসে ২০টি লোড ড্রেজার দিয়ে তোলা বালুর পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি ঘনফুট, যার বাজারমূল্য কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা।

বাজিতপুর, নিকলী ও মিঠামইন ছাড়াও ইটনা, অষ্টগ্রাম, কুলিয়ারচর এবং ভৈরবসহ সর্বত্রই বালু তোলার কর্মযজ্ঞ চলছে। বিশেষ করে ঘোড়াউত্রা, ধনু, হাটুরিয়া, কোলাসহ বিভিন্ন নদী ও চরে অন্তত ২০টি ‘লোড’ ড্রেজার বসানো রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সূর্য ওঠার আগেই প্রতিটি লোড ড্রেজারের আশপাশে বাল্কহেড নৌযানের (বালু রাখার নৌযান) ভিড় জমে যায়। দিনব্যাপী চলে বালু পরিবহনের কাজ।

বালুর অবৈধ ব্যবসায় জড়িত একাধিক ব্যক্তি ও এলাকাবাসী জানায়, নদীতে প্রকাশ্যে লোড ড্রেজার বসিয়ে দিনের পর দিন অবৈধভাবে বালু তুলছে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা এক শ্রেণির প্রভাবশালী লোকজন। এর আগে দু-একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বালু বহনকারীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে ‘মূল কারিগর’রা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।

নিকলীর ছাতিরচর গ্রামের পাশে বিলুপ্ত বিয়াতিরচরে অবৈধভাবে বালু তুলছে তিনটি লোড ড্রেজার। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একের পর এক বাল্কহেড ভিড়ছে আর ড্রেজার দিয়ে বালু ভরে নিয়ে যাচ্ছে। ড্রেজারের লোকজন জানান, সাত হাজার ঘনফুট পর্যন্ত বালু ধারণে সক্ষম প্রতিটি নৌযান ভরতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে।

বালু তোলার এই কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে হাতে গোনা ১০-১২ জন। বিয়াতিরচরে একটি লোড ড্রেজার চালাচ্ছিলেন ভৈরবপুরের ওমর মিয়া।

আন্দোলন, অভিযোগ দায়ের : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদীর বাইরে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ও চরা থেকেও বালু তোলা হচ্ছে। বেপরোয়াভাবে বালু তোলায় ক্ষতির শিকার হচ্ছে অনেকেই। ক্ষতিগ্রস্তরা বালু উত্তোলন বন্ধে আন্দোলন করছে। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগও জানিয়েছে। কিন্তু তেমন কোনো প্রতিকার মেলেনি। গতকাল শুক্রবারও ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাজিতপুরের মাইজচর গ্রামবাসী।

প্রশাসনের বক্তব্য : কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস গতকাল বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘সরাসরি যারা বালু তোলার কাজে জড়িত থাকে, প্রথমে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হয়। যে কারণে জেল-জরিমানা হয় তাদেরই। এখন এদের নেপথ্যে যদি কেউ থাকে, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।