বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রমজানে জনসাধারণ যেন ন্যায্যমূল্যে নির্ভেজাল পণ্য ও ইফতারসামগ্রী কিনতে পারেন সে জন্য মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা। মাসজুড়ে চলবে এ অভিযান। কোথাও পুলিশি পোশাকে, কোথাও সাদা পোশাকে চলবে এ নজরদারি।
ঢাকা মহানগরকে স্বস্তি দিতে এবার একসঙ্গে কাজ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, র্যাব ও পুলিশ। ৪০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রতিদিন রাজধানীসহ সারাদেশে এ অভিযান পরিচালিত হবে। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সাংবাদিককে বলেছেন, ‘রমজানে প্রতিদিনই অভিযান চালাবে র্যাব। মূলত অভিযানগুলো হবে ইফতার ও খাবারকেন্দ্রিক। অভিযানের সময় সঙ্গে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কেউ যাতে ইফতার সামগ্রীতে কেমিকেল কিংবা রঙ ব্যবহার করতে না পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। পাশাপাশি যৌক্তিক মূল্য না নিয়ে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করলে আইনানুযায়ী জেল-জরিমানা করা হবে। এছাড়া হাসপাতাল ও ফার্মেসিগুলোও নজরদারিতে থাকবে।’
প্রতিবারের মতো আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে (এপিবিএন) সঙ্গে নিয়ে এবারও অভিযান চালাবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ইফতার তৈরির পরিবেশ, খাবারের পরিমাণ-দাম, ওজনে কারচরিসহ নানা বিষয়ে নজরদারি করেন তারা।
অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, রমজানজুড়ে রাজধানীর চকবাজার, বেইলি রোড, ধানমন্ডিসহ ইফতার সামগ্রী বিক্রি করে এমন সব অভিজাত এলাকায় অভিযান চালানো হবে। প্রতিদিন দুটি করে অভিযান চলবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করা যাবে না, খাদ্য ভেজাল দেয়া যাবে না। এজন্য রমজানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর ইফতার সামগ্রী তৈরির বিষয়ে বিক্রেতাদের সতর্ক করবেন। এছাড়া ভেজালপণ্য বিক্রি, মিথ্যা বিজ্ঞাপন, ওজনে কারচরি, অতিরিক্ত মূল্য আদায়সহ ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ন হলেই আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, রমজানে ছোলা, ডাল, তেল, চিনি ও খেঁজুরের চাহিদা বেশি থাকে। এসব পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার মিল ও আড়তে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে এবং এটি চলবে।
এদিকে চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে দেশের একমাত্র মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই। এছাড়া ঢাকা মহানগরীর বাইরে কেরানীগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় মোবাইল কোর্ট অভিযান চালাবে।
বিএসটিআই জানায়, রমজানে বিশেষ করে রোজাদাররা সচরাচর মুড়ি, খেজুর, কলা, সফট ড্রিংক পাউডার, ফ্রুট জুস, ফ্রুট ড্রিংকস, ভোজ্য তেল, ঘি, নুডলস, লাচ্ছা সেমাই, পানি, ডেক্সট্রোজ মনোহাইড্রেট ইত্যাদি ধরনের খাবার ও পানীয় গ্রহণ করেন। বাজারে এগুলোর মান যাচাই করা হবে।
প্রতি বছরের মতো এবারও রমজানে ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ ঘোষণা’ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গত সোমবার রমজানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও ইফতারে খাদ্য ভেজাল নিয়ে জরুরি বৈঠক করে ডিএমপি। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগ জানান, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পবিত্র মাহে রমজান ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে এবং খাবারে যে কোনো ভেজাল প্রতিরোধে কাজ করবে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিকে রমজানে জনভোগান্তি কমাতে ইতোমধ্যে বাজার মনিটরিং শুরু করেছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)। সংগঠনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের উপ-সচিব হারুন অর রশিদ সাংবাদিককে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। রমজানে এ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।’
রমজানে যানজটমুক্ত রাখতে ডিএমপির নির্দেশনা
পবিত্র রমজানে জনসাধারণ যাতে নিরাপদে ইফতারের আগে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সে জন্য ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং, শপিং মলের সামনে বা আশপাশে যানবাহন পার্কিং বন্ধ রাখা, ফুটপাত হকারমুক্ত রাখা, ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং না করা এবং মোটরসাইকেল চলতে না পারে সে ব্যবস্থা করেছেন।
এছাড়া ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সেবাদানকারী সংস্থাগুলোকে নতুন করে রাস্তা না খোঁড়ার অনুরোধ জানিয়েছেন কমিশনার। গত সোমবার ডিএমপি সদর দফতরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ সংক্রান্ত এক সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়।